Bangladesh

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব, নতুন সরকারের অগ্রাধিকার

রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানে জোর * গুরুত্ব পাবে তরুণ উদ্যোক্তা * বিভিন্ন সংস্কারে আসছে শক্ত পদক্ষেপ

সরকারের সামনে বর্তমানে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। তাই নতুন ভাবে সরকার গঠনের পর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচি রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

সূত্র বলছে, আর্থিক খাতে এবার বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ আছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে ‘সবুজ সংকেত’ এসেছে। ব্যয় সংকোচনের জন্য বাজেটেও কম গুরুত্বের প্রকল্প কাটছাঁট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারেও এসব বিষয় উল্লেখ আছে। নির্বাচনের পর বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে সরকারের উদ্যোগ থাকলেও বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে শেষ পর্যন্ত কতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন।

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুসারে গত দেড় বছরে দেশে মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্য অনুসারে, গত ৫ বছরে বিভিন্ন পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এর মধ্যে কোনো পণ্যের দাম ৯ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪শ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। অর্থাৎ জিনিসপত্রের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। করোনার পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতির লাগাম ধরে রাখা যায়নি। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচার বৃদ্ধি, বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকট অন্যতম। এই অবস্থায় আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক মঙ্গলবার বলেন, সরকার গঠনের পর সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার পাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার বিষয়ের মধ্যেই এটিকেই সবার আগে রাখা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে সব শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তবে জিনিসপত্রের দাম কমানো রুটিনওয়ার্ক। এটি সরকার সব সময় করে। এর বাইরে ইশতেহারে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান তৈরি। আমরা অবকাঠামো খাতে অনেক উন্নয়ন করেছি। তৈরি হয়েছে বড় বড় অবকাঠামো। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করে দেশে শিল্পায়ন করতে হবে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে একদিকে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে এবং অপরদিকে কর্মসংস্থান বাড়বে। এক্ষেত্রে আমরা তরুণ ও যুব উদ্যোক্তা তৈরি করতে চাই। আমাদের যুব সমাজ যাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই একজন উদ্যোক্তা হয়ে যায়, সরকার সেভাবেই চিন্তা করছে। তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়ানোসহ সব ধরনের সহায়তা করবে সরকার। রপ্তানিতেও বিশেষ সুবিধা আছে। এছাড়া নির্বাচনি ইশতেহারে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী ৫ বছরে পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়ন করবে সরকার।

অন্যদিকে আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বলেছে, আর্থিক খাতের সংস্কারের এবার সত্যিকার অর্থেই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করবে সরকার। এক্ষেত্রে আলোচিত বেশকিছু অপরাধী আইনের আওতায় আসবে। ভেঙে দেওয়া হবে কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। ইতোমধ্যে এদের সব তথ্য সরকারের হাতে রয়েছে। বিদেশি যারা অর্থ পাচার করেছে এ ধরনের মধ্যম সারির কিছু লোকজনের নাম সামনে আসবে। এদের ব্যাপারে সক্রিয় হবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) অন্যান্য সংস্থা। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ইতোমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কটন ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা পেতে পারে। সূত্রমতে, তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু বাংলাদেশের অধিকাংশ তুলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এক্ষেত্রে কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কটন ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হতে পারে। শিগগিরই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন মঙ্গলবার বলেন, আমরা চাই দেশের শান্তি, সম্প্রীতি, অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে যারা মানুষকে পুড়িয়ে মেরে বা জিম্মি করে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, তাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনি ইশতেহারে সামগ্রিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের পথকে আর প্রশস্ত করতে, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধিকে আরও এগিয়ে নিতে আমাদের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। এটাকেই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছি।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে ১১টি অগ্রাধিকার খাতের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বপ্রথম মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। অর্থাৎ দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। এছাড়াও অগ্রাধিকার অন্য খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে-কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বাড়ানো, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে শিল্পের প্রসার ঘটানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো, নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

এদিকে গণভবনে বিদেশি সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে সোমবার বেশকিছু অগ্রাধিকার খাতের কথা তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। স্বল্পোন্নত থেকে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যাত্রা শুরু হবে। এখানে যেমন চ্যালেঞ্জ আছে, তেমনি রয়েছে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধাও। আমরা কীভাবে কাজ করব, ইতোমধ্যে সে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি। কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ দেশে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সবার জন্য ঠিকানা করে দেব। বিদ্যুতের আলো প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি, তা অব্যাহত রাখতে টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। এখন ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। যেখানে সরকার, অর্থনীতি, সমাজ সবই হবে উন্নত স্মার্ট। দ্বিতীয় স্যাটেলাইন উৎক্ষেপণ করতে হবে। এসব কাজগুলো করব। দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বন্ধুপ্রতিম দেশ ও সহযোগী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d