International

‘মৃতদের দাফন করার মতো কোনো জায়গা নেই’

অবরুদ্ধ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়াকে একটি ‘ভয়ানক বিষয়’ উল্লেখ করে জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে রক্ষা করা উচিত।

ইসরাইলি বোমাবর্ষণের ১০ মাসেরও বেশি সময় পর, ‘গাজায় এখন নিহতদের কবর দেওয়ার জন্য মত কোনো জায়গা নেই’ বলে জানানো হয়েছে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে।  

নাজি আবু হাতেব নামে খান ইউনিসে কবর খোঁড়ার কাজে নিয়োজিত এক ব্যক্তি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা থামিনি। আজ আমি একাই অন্তত ৭০টি কবর খনন করেছি। আমরা এখন খুবই ক্লান্ত। আমি চাই এ যুদ্ধের অবসান হোক’।

এদিকে ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলী জামালি বলেছেন, ইসরাইল গাজা যুদ্ধের চোরাবালিতে আটকা পড়েছে এবং এ অঞ্চলের জনগণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ইসরাইলকে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার শাসনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিচার এড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে গাজার বেসামরিক লোকদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে।

তিনি বলেন, শিশু-হত্যাকারী ইসরাইল পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে এবং একাধিক ন্যাক্কারজনক লক্ষ্য নিয়ে গাজার জনগণের ওপর গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদেরকে পরাজিত করা এবং এটা প্রমাণ করা যে, গাজা যুদ্ধে ইসরাইল বিজয়ী হয়েছে। ইসরাইলের দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে গাজায় বসবাসকারী জনগণকে তাদের বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করা। ইসরাইলের তৃতীয় লক্ষ্য হচ্ছে, গাজায় এমনভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো যাতে এই এলাকা বসবাসের উপযোগী  না থাকে এবং যাতে আমেরিকার সহায়তায়  যেকোনো অশুভ পরিকল্পনা সেখানে বাস্তবায়ন করা যায়।

এ কারণে বলা হয়, ইসরাইল গাজার জনগণের ওপর যে পরিমাণ বিস্ফোরক ফেলেছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বিস্ফোরকের চেয়েও বেশি।

আলী জামালি বলেন, গত ১০ মাসে গাজার জনগণের অব্যাহত প্রতিরোধের কারণে শুধু যে ইসরাইল পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে খোদ ইসরাইলের বিভিন্ন মহলও তাদের পতনের সূচনার কথা বলছে। এমতাবস্থায় গাজার নিপীড়িত ও অরক্ষিত জনগণকে নিশ্চিতভাবে পরাজিত করার জন্য এবং তাদেরকে পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য ইসরাইল গাজার ওপর সর্বাত্মক অবরোধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ অঞ্চলের একটি বড় অংশকে অচল করে দেয়া এবং খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গণহত্যাসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরাইলকে অভিযুক্ত করেছে এবং গাজায় তাদের নৃশংসতা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু  তারপরও আন্তর্জাতিক এতো প্রতিবাদ ও নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যা অব্যাহত রয়েছে। 

যাই হোক, আমেরিকা ও ইসরাইলকে বর্বরোচিত এ গণহত্যা ও ধ্বংসলীলার জন্যে অবশ্যই একদিন ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং জবাবদিহিতা করতে হবে। গাজায় ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞে বিশ্ববাসীর কাছে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসরাইল বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধী। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের প্রতি তার সমর্থন অব্যাহত রেখে শুধু যে ইসরাইলের নৃশংসতার সহযোগী হয়েছেন তা-ই নয়, একই সঙ্গে তিনি মানবজাতির ইতিহাসে একজন জঘন্য ও কুৎসিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button