মৃতপ্রায় তারার ভেতরে নতুন গ্রহের উদ্ভব
নিউইয়র্কের রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা মৃতপ্রায় একটি তারার ভিতরে নতুন গ্রহ গঠনের প্রমাণ আবিষ্কার করেছেন। গবেষকদের মতে, এই তারা একটি ক্ষুদ্র এবং ঘনত্বপূর্ণ সঙ্গী তারার দ্বারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এই গ্রহটি সম্ভবত ধ্বংসপ্রাপ্ত তারার অবশিষ্টাংশ থেকে গঠিত হয়েছে। নিউ সাইনটিস্ট এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নতুন গঠিত গ্রহ বা এর উপগ্রহগুলি আমাদের সৌরজগতের বাইরে জীবনের সন্ধানের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় স্থান হতে পারে।
রচেস্টার ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির জেসন নর্ডহাউস জানান, আমি কখনও ভাবিনি যে একটি তারার ভেতরে একটি গ্রহ গঠন সম্ভব হতে পারে। তিনি এবং তার দল একটি গ্রহ WD 1856+534 b-এর মডেল ব্যবহার করে এই অপ্রত্যাশিত সম্ভাবনা অনুসন্ধান করেছেন। এটা পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ আলোকবর্ষ দূরে একটি শ্বেত বামনকে প্রদক্ষিণ করছে। গ্রহটির আকার বৃহস্পতির মতো হলেও এটি তার তারার খুব কাছাকাছি প্রদক্ষিণ করে—পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যে দূরত্বের মাত্র ২%। সাধারণত, গ্রহগুলি তারার চারপাশে থাকা ধূলিকণার চাকতি থেকে গঠিত হয়, যেটি তারাকে সৃষ্টি করে, যেমনটি আমাদের সৌরজগতে দেখা যায়। তবে, এই প্রক্রিয়ায় একটি গ্রহ এত কাছাকাছি শ্বেত বামনের কাছে গঠন করতে পারে না, কারণ তারার প্রবল মহাকর্ষীয় টান একটি নবগঠিত গ্রহকে ধ্বংস করে ফেলবে।
অনেক শ্বেত বামন বাইনারি সিস্টেমের অংশ, যেখানে তারা একটি বড় তারাকে প্রদক্ষিণ করে। গবেষকরা অনুমান করেছেন যে এমন একটি সিস্টেমে দ্বিতীয় তারার মৃত্যু একটি বৃহস্পতি-আকৃতির গ্রহের জন্ম দিতে পারে। তাদের মডেলিং ইঙ্গিত দেয়, যদি দ্বিতীয় তারাটি সূর্যের চেয়ে সামান্য ছোট হয়, তবে শ্বেত বামনের কক্ষপথ ধীরে ধীরে সম্পূর্ণভাবে বড় তারার ভেতরে চলে যাবে। শ্বেত বামনটি তার কক্ষপথ ধরে বড় তারার বাইরের স্তরগুলোকে ধীরে ধীরে গ্রাস করবে এবং এটি তার চারপাশে একটি উপাদানের চাকতি (accretion disc) তৈরি করবে।
এই প্রক্রিয়ার ফলে একটি গ্রহ গঠন হতে পারে, যেমনভাবে তারার চারপাশে থাকা ধূলিকণার চাকতি থেকে গ্রহ গঠন হয়। শ্বেত বামনের শক্তির কারণে অবশিষ্ট গ্যাসগুলি ছড়িয়ে পড়বে এবং গঠন হতে থাকা গ্রহটি তার নির্দিষ্ট কক্ষপথে থাকবে।
শ্বেত বামনদের কাছাকাছি গ্রহগুলি বিশেষ আগ্রহের কারণ, কারণ এই তারা তুলনামূলকভাবে শীতল এবং তাদের বাসযোগ্য অঞ্চলের (habitable zone) অবস্থান তাদের খুব কাছাকাছি থাকে। Nordhaus বলেন, “সিদ্ধান্তত, এই গ্রহটি বাসযোগ্য অঞ্চলে রয়েছে, যদিও এটি একটি গ্যাস জায়ান্ট—কিন্তু এর উপগ্রহগুলি সম্ভবত বাসযোগ্য হতে পারে।”
এই গবেষণা নতুন এক সম্ভাবনার পথ উন্মোচন করেছে যা আমাদের সৌরজগতের বাইরে জীবনের সন্ধানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।