‘মৃত্যুফাঁদ’ গাজায় চলছে হত্যাযজ্ঞ
বছরের শুরুতেও থামেনি ইসরাইলের আগ্রাসন। একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই যাচ্ছে তারা। ইসরাইলের টার্গেট ‘মৃত্যুফাঁদ’ গাজায় বাড়ছে লাশের সংখ্যা।
বৃহস্পতিবার ইসরাইলের একটি বিমান হামলায় গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরে অন্তত ১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে গাজার হামাস পরিচালিত পুলিশের প্রধান মাহমুদ সালাহ এবং তার সহকারী হুসাম শাহওয়ান রয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় চিকিৎসকরা। বিবিসি।
খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় নিহতদের মধ্যে তিন শিশু এবং দুই নারীও ছিলেন। হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ হিসাবে নিন্দা জানিয়েছে।
তারা বলেছে, মাহমুদ সালাহ ও হুসাম শাহওয়ান তাদের মানবিক ও জাতীয় দায়িত্ব পালনকালে নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা এই ঘটনার রিপোর্টগুলো খতিয়ে দেখছে। আল-মাওয়াসি এলাকাটিকে ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসাবে ঘোষণা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। তবে বারবার হামলা চালিয়ে তারা অভিযোগ করেছে, ওই এলাকাগুলোতে শরণার্থী পরিবারগুলোর মধ্যে হামাসের সদস্যরা লুকিয়ে আছেন।
সম্প্রতি শীতল ও বৃষ্টির আবহাওয়া শরণার্থী শিবিরের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা শহরের একটি উপশহর, উত্তরে জাবালিয়া ও মধ্য গাজার বুরেইজে ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও প্রাণহানি ঘটেছে। বুরেইজ এলাকা থেকেই নতুন বছরের শুরুতে দক্ষিণ ইসরাইলের দিকে রকেট ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী।
অন্যদিকে উসকানিমূলক সংবাদ সম্প্রচারের অভিযোগে আল জাজিরা টিভির সম্প্রচার সাময়িক স্থগিত করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। বুধবার ফিলিস্তিনি বার্তাসংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, উসকানিমূলক সংবাদ প্রচারের কারণে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে আল জাজিরা টেলিভিশনের সম্প্রচারসহ ভূখণ্ডে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
ওয়াফা আরও বলেছে, ফিলিস্তিনের সংস্কৃতি, স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রীরা যৌথভাবে টিভি সম্প্রচার বন্ধের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের দাবি, কাতার-ভিত্তিক এই চ্যানেলের সম্প্রচারের উপাদান প্রতারণামূলক এবং সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে।
আল জাজিরা বন্ধের এই আদেশে বলা হয়েছে যে, স্থগিতের সিদ্ধান্তটি অস্থায়ী তবে এটি কবে শেষ হবে সেটা জানানো হয়নি। গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন ক্যাম্পে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী উত্তেজনার সংবাদ কভারেজের জন্য আল জাজিরার সমালোচনা করেছিল।
এদিকে আল জাজিরা বুধবারের এই সিদ্ধান্তকে ‘অধিকৃত অঞ্চলে চলমান আগ্রাসনের খবর সংগ্রহ করা থেকে নিরুৎসাহিত করার একটি প্রচেষ্টা’ বলে নিন্দা করেছে। এছাড়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে পশ্চিম তীরে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
অবশ্য মনে করা হচ্ছে হামাস পরিচালিত অবরুদ্ধ গাজা ভ‚খণ্ডে আল জাজিরা স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। কারণ গাজা ফিলিস্তিনের অংশ হলেও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সেটা শাসন করে না।
আবার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নিয়ন্ত্রণকারী দল ফাতাহ বলেছে, সম্প্রচারকারী এই সংস্থাটি আরবদের, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মাঝের বিভাজন প্রদর্শন করছে। ফাতাহ, ফিলিস্তিনিদের আল জাজিরাকে সহযোগিতা না করার জন্য উৎসাহিত করেছে।
এর আগে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী পশ্চিম তীরের রামাল্লায় আল জাজিরার অফিসে হামলা চালিয়ে এটি বন্ধের নির্দেশ দেয়। গত বছরের মে মাসে ইসরাইল একটি আদেশ জারি করে আল জাজিরাকে ইসরাইলি নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করে নিজেদের দেশে চ্যানেলটির কার্যক্রম ও সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে। পরে ইসরাইলি আদালতও সেই নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে।