মৃত্যুর আগেই অঢেল ধনসম্পত্তির উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করলেন ওয়ারেন বাফেট
বিশ্বখ্যাত বিনিয়োগগুরু ওয়ারেন বাফেটকে নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে বিনিয়োকারী সবারই যেন কৌতূহলের শেষ নেই। তিনি কীভাবে বিনিয়োগ করেন, তার বিনিয়োগের কৌশল কী—এসবই মিডিয়ার কল্যাণে অনেকেরই জানা। এমনকি তিনি তার প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইওদের প্রতি বছরে যে একবার চিঠি লিখেন, সেই চিঠির প্রতিও সাধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। এমন বিখ্যাত এই বিনিয়োগকারী মৃত্যুর পর তার অঢেল সম্পতি কী করবেন? তা এবার তিনি নিজেই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।
বাফেট বলেছেন, মৃত্যুর পর তার ধনসম্পত্তির ভাগ-বাঁটোয়ারা কীভাবে হবে—সে ব্যাপারে তিনি তার আগের সিদ্ধান্ত পালটে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তার মৃত্যুর পর বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন আর কোনো অনুদান পাবে না। নতুন একটি দাতব্য সংস্থা তার সম্পত্তি পাবে। যে সংস্থাটি তদারকি করেন বাফেটের তিন সন্তান।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হাথাওয়ের এই চেয়ারম্যান বলেছেন, তার সন্তানদের মূল্যবোধ এবং কীভাবে তারা সম্পদের বণ্টন করবে, সে ব্যাপারে তার আস্থা আছে। আর এ কারণেই তিনি নতুন করে উইলে পরিবর্তন এনেছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে ৯৩ বছর বয়সী বাফেট বলেন, আমার তিন সন্তানের মূল্যবোধগুলো আমার কাছে খুব ভালো বলে মনে হয়। কীভাবে কী করবে, তা নিয়ে তাদের ওপর শতভাগ আস্থা আছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ওয়ারেন বাফেট তার উইলে উল্লেখ করেছিলেন, তার সম্পত্তির ৯৯ শতাংশের বেশি অংশই বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং নিজের পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি দাতব্য সংস্থার জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ থাকবে। ঐ চারটি দাতব্য সংস্থা হলো: সুসান থম্পসন বাফেট ফাউন্ডেশন, শেরউড ফাউন্ডেশন, হাওয়ার্ড জি বাফেট ফাউন্ডেশন ও নোভো ফাউন্ডেশন। কিন্তু নতুন এই উইলে তিনি এটা পরিবর্তন করেছেন।
সাক্ষাত্কারে বাফেট বলেন, ‘আমার মৃত্যুর পর গেটস ফাউন্ডেশনের কাছে আর কোনো অনুদান যাবে না। তবে মৃত্যুর আগপর্যন্ত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনকে অনুদান দেওয়া হবে। বাফেটের এই নতুন উইল প্রসঙ্গে সিএনএনকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মার্ক সুজম্যান বলেন, গত ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে অনুদান ও পরামর্শ দিয়ে ওয়ারেন বাফেট গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছেন। এ পর্যন্ত উপহার ও অনুদান হিসেবে আমাদের সংস্থাকে তিনি যে ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দিলেন, তার জন্য আমরা তার কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
এদিকে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের আরও ৫৩০ কোটি ডলারের শেয়ার দান করেছেন ওয়ারেন বাফেট। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং আর চারটি পারিবারিক দাতব্য সংস্থায় এই অর্থ দান করেছেন তিনি।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের পর এটাই বাফেটের বৃহত্তম বার্ষিক দান। এই দানের মধ্য দিয়ে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার দান করেছেন বাফেট। এই অর্থের একটি অংশ নিজেদের পারিবারিক দাতব্য সংস্থায়ও দান করেছেন তিনি। শুক্রবার এই দানের ঘোষণা দেন ওয়ারেন বাফেট। এর মধ্যে বার্কশায়ারের বি শ্রেণির ১ কোটি ৩০টি শেয়ারও আছে। এই দানের মধ্যে বাফেট ৯৯ লাখ ৩০ হাজার শেয়ার দান করেছেন গেটস ফাউন্ডেশনে। এ নিয়ে গেটস ফাউন্ডেশনে তিনি ৪৩০ কোটি ডলারের শেয়ার দান করলেন। প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর নামে গঠিত সুজান টম্পসন বাফেট ফাউন্ডেশনে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৩৫টি শেয়ার দান করেছেন বাফেট। এ ছাড়া নিজের তিন সন্তান হাওয়ার্ড, সুজান ও পিটারের নেতৃত্বাধীন ফাউন্ডেশনে ৬ লাখ ৯৫ হাজার ১২২টি করে শেয়ার দান করেন তিনি।