মোদির ঘাঁটিতে রাম মন্দির নয়, চাকরি চেয়েছিলেন ভোটার
ভারতের সাধারণ নির্বাচনের মাত্র তিন মাস আগে গুজরাটের অযোধ্যায় বিশাল এক রাম মন্দির উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাবরি মসজিদের ওই স্থানে মহাধুমধামে মন্দিরটি উদ্বোধনের মাধ্যমে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নির্বাচনে বড় বিজয় পাবে বলে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু মন্দিরটি নির্মাণের রাজনৈতিক এজেন্ডা খুব একটা কাজ করেনি।
যেখানে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে, সেই অযোধ্যায় জয় তো নয়ই; বরং আসনটি হাতছাড়া হয়ে গেছে বিজেপির। এখানেই শেষ নয়, পাশের রাজ্য উত্তরপ্রদেশ বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বলে ধরা হয় বহু বছর ধরে। কিন্তু সেখানেও হোঁচট খেয়েছে বিজেপি। এই রাজ্যে এবার বিজেপির আসন প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। অবশ্য বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসছে। মোদি তৃতীয় মেয়াদে হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু ঘাঁটিতেই কী করে বিজেপির এমন ভরাডুবি? এর উত্তর খুঁজেছে রয়টার্স। অযোধ্যা ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অংশের ভোটাররা বলছেন, বেকারত্ব, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রা ব্যয়ের যন্ত্রণার বিরুদ্ধে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা যথেষ্ট ছিল না।
৫৫ বছর বয়সী কৃষক নানকান যাদব বলেন, ‘সবাই ভগবান রামকে ভালোবাসে, কিন্তু কাজ ও ইনকাম ছাড়া কী করা সম্ভব?’ যাদব বলেন, ‘পাঁচজনের পরিবারে তিনি একমাত্র উপার্জনকারী। তিন সন্তানের মধ্যে কেউ লেখাপড়া করছে, কেউ বেকার। গত দুটি নির্বাচনে বিজেপিকে ভোট দিলেও এবার তিনি বিরোধী সমাজবাদী পার্টিকে ভোট দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্বকে সামনে রেখে মানুষ ভোট দিয়েছে। আমরা বেকারত্বের ওপর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে ভোট দিয়েছি।’
অযোধ্যার আরেক বাসিন্দা ২৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ শহিদ। অটোরিকশা চালিয়ে বাবা-মা, স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসারের খরচ বহন করেন। তাঁরও একই ভাষ্য।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে চাকরির অভাব ও মুদ্রাস্ফীতিতে সাধারণ ভোটারদের অসন্তোষের কারণে ক্ষমতাসীন বিজেপি গ্রামীণ আসনের এক-তৃতীয়াংশই হারিয়েছে।
দীর্ঘদিনের বিজেপি ভোটার ৬৫ বছর বয়সী হিন্দু পুরোহিত কৃষ্ণ শঙ্কর পান্ডে নিজের দল সম্পর্কে বলেন, ‘তারা যা ভোট পেয়েছে, রামের নামেই পেয়েছে। নইলে তাও পেত না।’