Trending

যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে সংশয় বিশেষজ্ঞদের: ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা

ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। তাদের মতে, ইচ্ছাকৃত খেলাপি এমন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে যাতে যে কেউ তদবিরের জোরে এ তালিকায় পড়ার আওতা থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। কোনো কমিটির যাচাই-বাছাই ছাড়াই সুনির্দিষ্ট কিছু সূচক দিয়ে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের শনাক্তের বিধান করা উচিত ছিল। যাতে ওই সূচকের মধ্যে পড়লেই তিনি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে যাবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াটি এমনভাবে করার ছক তৈরি করেছে, যে এতে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। এ বিষয়ে গঠিত কমিটি সম্ভাব্য কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে ডেকে ঋণ নবায়ন করে বা পুনর্গঠন করে তাকে ওই তালিকা থেকে বের করে দিতে পারে।

তবে তারা বলেছেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি চিহ্নিত করে চীন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড অনেক সুফল পেয়েছে। খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পেরেছে। বাংলাদেশেও এটি সম্ভব। যদি ওই সংজ্ঞা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তবে সুফল পাওয়া যাবে। খেলাপিদের কাছে একটি বার্তা যাবে যে, ঋণ নিলে তা ফেরত দিতে হবে।

দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বুধবার আলাপচারিতায় এসব মন্তব্য করেছেন।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সার্কুলারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। কীভাবে সে তালিকা তৈরি করা হবে, এর একটি রোডম্যাপও দিয়েছে। একই সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির একটি সংজ্ঞাও দিয়েছে। ৮ এপ্রিলের মধ্যে ব্যাংকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্তকরণ ইউনিট গঠন করতে হবে। ৩০ জুনের তথ্যের ভিত্তিতে ১ জুলাই থেকে এই তালিকা তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। দেশে এই প্রথম ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইচ্ছাকৃত খেলাপি হলে তিনি বিমান ভ্রমণ করতে পারবেন না। ট্রেড লাইসেন্স এবং কোনো কোম্পানির নিবন্ধন পাবেন না। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি তুলতে পারবেন না। বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট কিনে নিবন্ধন করতে পারবেন না। ব্যাংকের পরিচালক হতে পারবেন না।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপির সংজ্ঞা ঠিক আছে। কিন্তু এর প্রয়োগ নিয়ে প্রশ্ন আছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সম্পদ আছে, কিন্তু ঋণ শোধ করছেন না। এমন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত খেলাপি হবেন। তাহলে যত বড় খেলাপি আছে, সবাই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সংজ্ঞার আরেক অংশে বলা হয়েছে, জাল-জালিয়াতি বা প্রতারণা করে ঋণ নিলে বা ঋণের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করলে তিনিও ইচ্ছাকৃত খেলাপি হবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে এমন অনেক ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে যারা জালিয়াতি করে ঋণ নিয়েছেন, ঋণের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করেছেন। এমন খেলাপিদেরও ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঘোষণা দিয়ে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

তিনি আরও বলেন, এসব ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের সরাসরি তালিকায় না এনে দর কষাকষির একটি সুযোগ রাখা হয়েছে। যাতে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার মতো সব অপকর্ম থাকলেও তিনি দরকষাকষি করে বেরিয়ে যেতে পারবেন। আমরা চাই এটি যাতে কোনো লোক দেখানো প্রক্রিয়া না হয়। শুধু ছোট ঋণখেলাপিদের ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা না হয়। জালিয়াতসহ বড় খেলাপিদেরও যাতে এর আওতায় আনা হয়।

তিনি আরও বলেন, ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করে অনেক দেশ খেলাপি ঋণ আদায়ে সুফল পেয়েছে। আমাদের এখানেও পাওয়া সম্ভব। যদি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকে।

তিনি আরও বলেন, ঋণ আদায় করতে হলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। এতে জামিন পাওয়া যায় না। প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ খেলাপিকে ট্রাইব্যুনালের আওতায় নিয়ে বিচার করতে হবে, তাহলে যদি ঋণের টাকা আদায় হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ের যেসব ব্যবস্থা করা হয়েছে, এতে ফাঁকিও রয়েছে। ফলে ঋণখেলাপিরা ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি শনাক্ত করতে হবে কিছু সুনির্দিষ্ট সূচকের ভিত্তিতে। ওইসব সূচকের সীমার মধ্যে এলেই তারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত হবেন। তখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের চিহ্নিত করতে দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া করেছে। এর মধ্যে দিয়ে অনেকে নানাভাবে বেরিয়ে যেতে পারবেন। তিনি যদি ঋণ নবায়ন করে বা পুনর্গঠন করে বেরিয়ে যান, তাহলে কিছুদিন পর আবার খেলাপি হবেন। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। খেলাপি সংস্কৃতি থেকেও বের হওয়া যাবে না। এখন ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে শনাক্ত করতে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। যাতে ঋণখেলাপি বা ব্যাংকার সবাই বোঝেন তিনি কোন পর্যায়ে গেলে ইচ্ছাকৃত খেলাপি হয়ে যাবেন। কিছু সূচক ধরে এটি করলে আরও স্পষ্ট হতো। এখন ব্যাংকের কমিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করবে। কোনো খেলাপি এমন নোটিশ পেলে তিনি ঋণ নবায়ন করে ফেললে আর ইচ্ছাকৃত খেলাপি হবেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, বড় সব ঋণখেলাপিরই সম্পদ আছে। ফলে যাদের সম্পদ আছে। কিন্তু ঋণ শোধ করছেন না। তারা সবাই ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়ার কথা। কিন্তু বাছাইয়ের নামে এদের ছাড় দেওয়া হতে পারে। সংজ্ঞার এ ধারাটি কার্যকর করলে খেলাপি ঋণ বহুলাংশে আদায় করা সম্ভব। বাণিঝ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও বেসরকারি খাতের এনসিসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমিন বলেন, এটি একটি ভালো পদক্ষেপ। মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে অনেক সুফল পেয়েছে। বাংলাদেশেও পাওয়া সম্ভব। তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কঠোর হতে হবে। ব্যাংকের যে কমিটি ইচ্ছাকৃত খেলাপি চিহ্নিত করবে তাদের মানসিকতা, তাদের ওপর চাপ এসব বিষয় কতটুকু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে তা দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ দেশের মানুষ সামাজিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। কেউ চাইবে না সামাজিকভাবে তিনি হেয় হন। এ কারণে ইচ্ছাকৃত খেলাপির পর্যায়ে গেলে তিনি ঋণ শোধ করে দিতে পারেন। কিন্তু পরে আবার খেলাপি হলে এ সংস্কৃতি আবার পাকাপোক্ত হয়ে যাবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports