Bangladesh

যানজট নিরসনে ব্যর্থতা

অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ মাস দৌরাত্ম্য কমেনি ব্যাটারি রিকশাসহ অবৈধ যানের :: বেপরোয়া ১৫ লাখ মোটরসাইকেল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল উপদেষ্টা হওয়ার আগে বলেছিলেন, ‘আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে সাত দিনের মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত করবো।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সেই বক্তব্য ঘুরপাক খাচ্ছে। মানুষ সেই বক্তব্য দেখে আর হাসে। অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ মাসে যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা, দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকা এখন ভয়াবহ যানজটের নগরী। সভ্যতা পিছু ঠেলে ঢাকা হয়ে উঠেছে অসভ্য নগরী।

মানুষ অতিষ্ঠ। তারা বিরক্ত বর্তমান সরকারের উপর। সাধারণ মানুষ মনে করছে, সরকারের ব্যর্থতার কারণেই যানজট দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিদায়ের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণের পর কার্যত যানজট নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। যদিও প্রথম দিকে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন যথেষ্ট সক্রিয়। মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারি রিকশা। হাইকোর্ট নিষিদ্ধ করার পর সরকারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপীল করে সেই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেও এসব অবৈধ যান নিষিদ্ধসহ নীতিমালা প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কিন্তু সেই পরামর্শ কতোটা কার্যকর হচ্ছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন ও প্রফেসর মো. হাদিউজ্জামান। ওই বৈঠকে যানজট নিরসনে বুয়েটের দুই বিশেষজ্ঞ শিক্ষক ছয় দফা সুপারিশ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আগামী এক মাসের মধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। এই প্রকল্পে শুরুতে হাইকোর্ট মোড় থেকে কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, বিমানবন্দর হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত কাজ করা হবে। সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকর করা হবে।

ছয়টি সুপারিশ হচ্ছে- মূল সড়ক থেকে অবৈধ রিকশা (ব্যাটারি ও প্যাডেল) সরাতে হবে। পুলিশের সাধারণ কার্যক্রম ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ছোট যেসব ইন্টারসেকশন (মোড়) আছে, সেখানে সিগন্যালের সময় সর্বোচ্চ ২ মিনিট আর বড় ইন্টারসেকশনে সিগন্যাল সর্বোচ্চ ৫ মিনিটের বেশি সময় দেওয়া যাবে না। ছোট ইন্টারসেকশনের ৫০ মিটার ও বড় ইন্টারসেকশনের ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো গাড়ি পার্ক করা, যাত্রী ওঠানাম, বা গাড়ি থামানো যাবে না। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও দুই সিটি করপোরেশন থেকে নির্ধারিত বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। এসব স্টপেজে একটার পাশে আর একটা বাস দাঁড়ানো যাবে না। ঢাকা শহরে ট্রাফিক পুলিশের যে আটটি বিভাগ রয়েছে, এই বিভাগগুলোর প্রত্যেকটিতে একটি করে মোবাইল টিম কাজ করবে। এই মোবাইল টিমে প্রশিক্ষিত একজন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার, একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা, ডিটিসিএ ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা থাকবেন। তাদের কাজ হবে ট্রাফিক সিস্টেম তদারকি করা।

এই ছয়টি সুপারিশের প্রথমটিতে নগরীর মূল সড়ক থেকে রিকশা সরাতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত হওয়ার পর রিকশার মালিকরা ধরেই নিয়েছেন, রিকশা চালাতে আর কোনো বাধা নেই। সে কারণে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭৯টি, যার মধ্যে ডিএনসিসির ৩০ হাজার ১৬২টি এবং ডিএসসিসিতে ১ লাখ ৯০ হাজার ২১৭টি। কিন্তু, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৯ সালের এক গবেষণায় ঢাকায় প্যাডেল রিকশার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ নিবন্ধিত রিকশা। ৫ বছরে এই সংখ্যা ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের হিসাবে হাসিনার আগে রাজধানীতে ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা ছিল ৬ লাখের মতো। হাসিনার পতনের পর সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১২/১৩ লাখে। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকে বন্যার পানির মতো হু হু করে বাড়তে থাকে ব্যাটারি রিকশার সংখ্যা। ট্রাফিক পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ভিআইপি সড়কেও চলেছে। এমনকি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের টার্মিনালেও দেখা গেছে ব্যাটারি রিকশা। সেই থেকে দৌরাত্ম্য শুরু। তবে বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের কঠোর নির্দেশনায় এখন ভিআইপি সড়কে ব্যাটারি রিকশা চলাচল বন্ধ হয়েছে। তবে মূল সড়কে এখনও চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু প্রধান সড়কে এগুলো চলাচল বন্ধ করলেই যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। কারণ, নগরীর প্রতিটি মূল সড়কের সাথে পার্শ্বসড়ক সম্পৃক্ত। পার্শ্বসড়কে রিকশার ভিড়ে যানজট লাগলে তার প্রভাব মূল সড়কে পড়তে বাধ্য।

ব্যাটারি রিকশার কারণে অতিষ্ঠ বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মালিক, শ্রমিকরাও। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও যানজট নিরসনে অবৈধ এসব রিকশা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। সিএনজি অটোরিকশার মালিকরা সেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে এগুলো নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। সে সময় বিভিন্ন সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশার ওপর হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর জারি করা আরেকটি নির্দেশনায় এ ধরনের রিকশা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের এই আদেশকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি রিকশা আমদানি না করে মোটরসাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশ হিসেবে ব্যাটারি রিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। ব্যাটারি আমদানি করা হয় একইভাবে ভিন্ন কারণ দেখিয়ে। স্থানীয়ভাবে আমদানিকৃত সেসব যন্ত্রাংশ এবং ব্যাটারি দিয়েই তৈরি করা হয় ব্যাটারি রিকশা। সারাদেশে এরকম শতাধিক আমদানিকারক আছে। এর মধ্যে ঢাকা ছাড়াও আছে যশোর, খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে। ঢাকায় কমলাপুর স্টেডিয়াম মার্কেটের শতাধিক দোকানে প্রতিদিন শত শত ব্যাটারি রিকশা প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে যারা ব্যাটারি রিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এই নৈরাজ্য বন্ধ করা যাবে না। একই সাথে একটি নীতিমালা করে এগুলো চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। ব্যাটারি রিকশার দৌরাত্ম্য কমাতে তিনি পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে পুলিশ আগের তুলনায় কয়েকগুণ সক্রিয়। প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।

যানজটের আরেক প্রধান নিয়ামক মোটরসাইকেল। রাইড শেয়ারিং চালু হওয়ার পর মোটরসাইকেল হয়ে উঠেছে বাণিজ্যিক গণপরিবহনে। রাজধানীতে এর প্রকৃত সংখ্যা কতো তার হিসাব বিআরটিএ-তে নেই। কারণ ঢাকার বাইরে রেজিস্ট্রেশনকৃত মোটরসাইকেলও অবাধে চলছে ঢাকায়। তারপরেও এই সংখ্যা ১৫ লাখের উপরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকায় রাইড শেয়ারিং হিসাবে ১৮টি কোম্পানিকে ৩৪ হাজার মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমোদন দেয়া হয়। এখন সেই ১৮ কোম্পানির নামেই চলছে ১ লাখ ৬০ হাজার। বাকি ১২/১৩ লাখ চলছে অ্যাপস্ পদ্ধতি ছাড়াই। এগুলোর চালকরা মোড়ে মোড়ে ডেকে ডেকে যাত্রী তোলে। এসব মোটরসাইকেলের কারণে কোনো যানবাহনই স্বচ্ছন্দে চলতে পারে না। মোটরসাইকেল চালকরা এতোটাই বেপরোয়া যে, তারা ঝুঁকি নিয়ে যে কোনো গাড়ির ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে। কোনো মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়ালে এরা পেছন থেকে এমনভাবে সামনে যায়, তাতে পেছনের যানবাহনগুলো সিগন্যাল শেষ হওয়ার পরেও চলতে পারে না। রাজধানীসহ সারাদেশের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানেও শীর্ষে আছে মোটরসাইকেল। যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ নেই।

এদিকে, ঢাকা শহরের যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের লক্ষ্যে গতবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস. এম সালেহউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জানান, মাঠ পর্যায়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে ৪ হাজার ২০০ জন পুলিশ সদস্য এবং ৬০০ জন ছাত্র প্রতিনিধিকে নিয়োজিত করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ৪৫ হাজার ৪শ’ ৫৭টি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ৫ হাজার ৯শ’ ৭৯ টি পায়ে চালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। এছাড়া সড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের কারণে ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৪ হাজার ৩৬৫ টাকা জরিমানা আরোপসহ ১ লাখ ৩৯ হাজার ১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাইলট আকারে ঢাকা শহরের ৪টি ইন্টারসেকশনে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। এই পাইলট প্রকল্পের ফলাফলের আলোকে আগামী চার মাসের মধ্যে আরও ১৮টি ইন্টারসেকশনে দেশীয় প্রযুক্তির ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। সভায় খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করা হলে প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d