Trending

যুক্তরাজ্যে চাকরির আশা দিয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে ভিসা জালিয়াত চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে

বিবিসির এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট হিসেবে কর্মরত মধ্যস্বত্বভোগীরা কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে (সেবাখাতে) চাকরি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মূলত নিজেদের শিকার বানায়।

যুক্তরাজ্যে চাকরির সুযোগ দেওয়ার কথা বলে মূল্যহীন ভিসা সার্টিফিকেট তৈরির অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাজার হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নিয়েছে একটি জালিয়াতি চক্র। খবর বিবিসির

বিবিসির এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রিক্রুটমেন্ট এজেন্ট হিসেবে কর্মরত মধ্যস্বত্বভোগীরা কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে (সেবাখাতে) চাকরি করতে চাওয়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মূলত নিজেদের শিকার বানায়।

প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্পনসরশিপ সার্টিফেকেটের জন্য ১৭ হাজার পাউন্ডেরও বেশি খরচ করেছে, অথচ তা বিনামূল্যেই পাওয়া উচিত ছিল।

এরপর তারা যখন স্কিল্ড ওয়ার্কার ভিসার জন্য আবেদন করে, হোম অফিস তাদের কাগজপত্র অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করে দেয়।

আমরা ভুক্তভোগীদের কাগজপত্র দেখেছি। দেখা গেছে, তৈমুর রাজা নামের এক ব্যক্তি মোট ১.২ মিলিয়ন পাউন্ডে ১৪১টি ভিসা সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন, এগুলো বেশিরভাগই ছিল মূল্যহীন।

অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করলেও, শিক্ষার্থীদের কিছু অর্থ ফেরত দিয়েছেন।

মি. রাজা ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসে অফিস ভাড়া নিয়েছিলেন এবং তার  অফিসে কয়েকজন কর্মীও নিয়োগ দিয়েছিলেন।

তার প্রতিষ্ঠানটি প্রায় দেড়শ’ শিক্ষার্থীকে কেয়ার হোম এবং এমপ্লয়মেন্ট স্পনসরশিপে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেছেন, আমাদের বলা হয়েছিল তিনি বৈধ কাগজপত্র বিক্রি করছেন। তবে এগুলোর সাহায্যে অল্প কয়েকজন শিক্ষার্থী ভিসা এবং আসল চাকরি পেয়েছেন। আর অধিকাংশই এসব মূল্যহীন কাগজপত্র কিনতে তাদের সব সঞ্চয় খুইয়েছেন।

‘আমি এখানে আটকা পড়েছি’

ওয়ার্ক ভিসা পেতে হাজার হাজার পাউন্ড হারানো ১৭ জন নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি।

২০ বছর বয়সী তিন শিক্ষার্থী বিভিন্ন এজেন্টকে মোট ৩৮ হাজার পাউন্ড দিয়েছে বলে জানান।

তারা জানান, ইংল্যান্ডে এসে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর আশায় জন্মভূমি ভারত ছেড়েছিলেন তারা। অথচ বর্তমানে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এবং দেশে ফিরে কিভাবে পরিবারকে এসব জানাবেন তা ভেবে খুব ভয় পাচ্ছেন।

এদের একজন নীলা। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি এখানে (ইংল্যান্ডে) আটকা পড়েছি। আমি যদি ফিরে যাই, তাহলে আমার পরিবারের সমস্ত সঞ্চয় মাটি হয়ে যাবে।’

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যের সেবা খাতে (কেয়ার হোম ও এজেন্সিসহ) রেকর্ড ১ লাখ ৬৫ হাজার পদ খালি ছিল।

তৈমুর রাজা কয়েক ডজন শিক্ষার্থীর মূল্যহীন সার্টি ফিকেটবিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। ছবি: বিবিসি

এরপর যুক্তরাজ্যের সরকার অন্যান্য দেশ থেকে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদনের অনুমতি দেয়, যার ফলে ভারত, নাইজেরিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর বহু মানুষ এ কাজে আবেদন করে।

তবে এতে শর্ত ছিল, আবেদনকারীদের অবশ্যই একটি যোগ্য স্পনসর থাকতে হবে, যেমন একটি নিবন্ধিত কেয়ার হোম বা এজেন্সি এবং চাকরিপ্রার্থীদের তাদের স্পনসরশিপ বা ভিসার জন্য একটি পয়সাও দিতে হবে না।

আকস্মিক এই সুযোগ মেলায় মধ্যস্বত্বভোগীরা নিজেদের ফায়দা লুটেছে। তারা মূলত ফুল টাইম কাজ করতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে সুযোগ নিয়েছে।

আমরা এসব শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি, তারা এখন বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করছেন, তবে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে দেশটির সরকার।

ভুক্তভোগীর কল ব্লক করে দেয়

২১ বছর বয়সী নাদিয়া ভারত থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করার জন্য ২০২১ সালে স্টাডি ভিসায় যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন।

এক বছর পর তিনি পড়াশোনার জন্য বছরে ২২ হাজার পাউন্ড টিউশন ফি দেওয়ার বদলে চাকরি খোঁজার সিদ্ধান্ত নেন।একজন বন্ধু তাকে একজন এজেন্টের নম্বর দিয়েছিলেন।

ওই এজেন্ট তাকে বলেছিল, তিনি ১০ হাজার পাউন্ডের বিনিময়ে কেয়ার ওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র করে দিতে পারবেন।

নাদিয়া বলেন, ওই এজেন্ট তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলেছিলেন এবং এমনকি তাকে বলেছিলেন যে তাকে দেখে নিজের বোনদের কথা মনে পড়ে গেছে তার।

উলভারহ্যাম্পটনের বাসিন্দা নাদিয়া বলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন যে, ‘আমি তোমার কাছ থেকে খুব বেশি টাকা নেব না, কারণ তুমি আমার বোনদের মতো দেখতে।’

তিনি তাকে অগ্রিম ৮ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন এবং ওয়ালসালের একটি কেয়ার হোমে চাকরির অভিজ্ঞতাপত্র পাওয়ার আশায় ছয় মাস অপেক্ষা করেছিলেন।

নাদিয়া বলেন, এরপর আমি সরাসরি কেয়ার হোমে ফোন করে আমার ভিসার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। জানতে পারি, স্পনসরশিপের জন্য কাউকে কোনো সার্টিফিকেট দেয়নি তারা। কারণ তাদের সব কর্মী রয়েছে এবং কোনো পদ খালি নেই।

পরবর্তীতে ওই এজেন্ট নাদিয়ার ফোন নাম্বার ব্লক করে দেন। অনেকে তাকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল। তবে নাদিয়া বিবিসিকে জানায়, তিনি খুব ভয় পেয়েছিলেন।

বার্মিংহামে বসবাসকারী নীলা বলেন, তার পরিবার বিশ্বাস করে যে যুক্তরাজ্যে আসার ফলে তিনি অনেক দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন এবং ভারতের চেয়ে বেশি উপার্জন করতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘আমার শ্বশুর সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তিনি তার সব সঞ্চয় দিয়ে আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন।’

তিনি জানান, তার ভিসাকে স্টুডেন্ট ভিসা থেকে কেয়ার ওয়ার্কারে পরিবর্তন করতে ওলভারহ্যাম্পটনের একটি ট্রেনিং এজেন্সিতে গিয়েছিলেন তিনি।

নীলা বলেন, ওখানকার এজেন্টরা খুব বিনয়ী ছিল এবং তারা তাদের বৈধতা প্রমাণের জন্য ই-মেইল, চিঠি এবং ভিসার কপিও দেখিয়েছিল।

অজয় থিন্দ স্বীকার করেছেন যে তিনি মি. রাজার হয়ে শিক্ষার্থীদের কাগজপত্র তৈরির কাজ করতেন। ছবি: বিবিসি

নীলা এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল যে ওই এজেন্সির লোকগুলো এবার তাদের জীবন বদলে দেবে।

তিনি বলেন, তারা আমাদের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সময় ফেরেশতার মতো আচরণ করেন। এ কথায়ই বুঝে নিন তারা আমাদের আস্থা অর্জনে কতটা সফল হয়েছিল।

তিনি মূল্যহীন ওই কাগজপত্র করার জন্য ১৫ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে হোম অফিস থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। এর ফলে তিনি তার পড়াশোনার জন্য পরিবারের দেওয়া ১৫ হাজার পাউন্ড নষ্ট করে ফেলেছে।

নীলা জানান, তার জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ সেই প্রতারকরা আজও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কোনো ভয় নেই।

৮৬ জন শিক্ষার্থী হাজার হাজার পাউন্ড হারিয়েছে 

বিবিসি জানতে পেরেছে, উলভারহ্যাম্পটনে বসবাস করা এবং বার্মিংহামে কর্মরত পাকিস্তানি নাগরিক তৈমুর রাজা একটি ভিসা চক্রের প্রধান।

তিনি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেন, তিনি কেয়ার হোমে কাজের ব্যবস্থা করতে পারেন এবং তাদের ক্লায়েন্টদের জন্য ভিসা আবেদনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

বিবিসি স্পন্সরশিপ ডকুমেন্টে ভরা একটি ফাইল দেখেছে। মি. রাজা ১৪১ জন আবেদনকারীর কাগজপত্র সমেত এই ফাইলটি একটি এজেন্সি সরবরাহ করেছিলেন।

এসব আবেদনকারীর প্রত্যেকে ১০ থেকে ২০ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করেছেন এবং মোট ১২ লাখ পাউন্ড অর্থ দিয়েছেন।

আমরা যাচাই করেছি যে মি. রাজা এই স্পনসরশিপ নথিগুলো হোয়াটসঅ্যাপে পিডিএফ ফাইল হিসাবে ওই এজেন্সিকে পাঠিয়েছিলেন।

এদের মধ্যে ৮৬ জন মূল্যহীন কাগজপত্র পেয়েছেন, যা হোম অফিস অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর ৫৫ জন সফলভাবে ভিসা পেয়েছিলেন। তবে যে কেয়ার হোমগুলোর অভিজ্ঞতাপত্র তাদের দেওয়ার কথা ছিল, তাদের তা দেওয়া হয়নি।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানে থাকা তৈমুর রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিবিসি। জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ‘মিথ্যা’ ও ‘একপেশে’ এবং তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

এরপর তিনি আর আমাদের সাক্ষাত্কারের অনুরোধে সাড়া দেননি।

অজয় থিন্দ নামের এক শিক্ষার্থী জানান, কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার জন্য ১৬ হাজার পাউন্ড দেওয়ার পর মি. রাজা তাকে নিজের এজেন্সিতেই নিয়োগ দেন।

মি. রাজার এজেন্সিতে কাজ করা ছয়জনের একজন তিনি। তাদের প্রত্যেককে সপ্তাহে ৫০০-৭০০ পাউন্ড বেতন দেওয়া হতো। তাদের কাজ ছিল আবেদনকারীদের জন্য কাগজপত্র তৈরি এবং আবেদনকারীদের ফর্ম পূরণ। 

থিন্দ বলেন, রাজা অফিস ভাড়া নিয়েছিলেন এবং এমনকি তার টিমের সবাইকে দুবাই ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলেন।

২০২৩ সালের এপ্রিলে তার প্রথম সন্দেহ হয়, যখন তিনি লক্ষ্য করেন যে হোম অফিস এক একে আবেদনগুলো প্রত্যাখ্যান করে দিচ্ছে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে তার বন্ধুরাও ছিলেন, যারা মোট ৪০ হাজার পাউন্ড দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘আমি রাজাকে এসব কথা বললাম এবং সে আমাকে বলল তোমার মাথায় এসব চাপ নেওয়ার দরকার নেই, আমাকে চাপ সামলাতে দাও।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র টাকার প্রয়োজন ছিল বলে আমি একাজ ছেড়ে চলে যাইনি।’

থিন্দ জানান, তার বস অসংখ্য সংস্থার সাথে কাজ করছেন, তাই হাতিয়ে নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১.২ মিলিয়ন পাউন্ডের চেয়ে আরও বেশি হতে পারে।

ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের অভিবাসন বিভাগের প্রধান লুক পাইপার বলেন, ‘অনেক মানুষ পুলিশের কাছে যান না, কারণ তারা হোম অফিস এবং পুলিশকে জানানোর পরিণতি নিয়ে আতঙ্কিত। এর পরিবর্তে তারা ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের একটি শিখ মন্দির বা স্মেথউইকের গুরুদ্বার বাবা সাং জির কাছে সাহায্য চেয়েছেন।’

এসব মন্দিরের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ এজেন্টদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তারা ইতোমধ্যে কিছু মানুষকে হারানো অর্থ ফেরত দিতে সক্ষম হয়েছেন।

শত শত ভুক্তভোগী গুরুদ্বার বাবা সাং জি, স্মেথউইকের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। ছবি: বিবিসি

মন্দিরের প্রবীণরা এমনকি ২০২৩ সালের নভেম্বরে মি. রাজাকে একটি বৈঠকে হাজির করেন। জানা যায়, সেখানে তিনি অর্থ ফেরত দিতে এবং তার এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে রাজি হন।

মহামারি চলাকালীন মানুষকে সহায়তা করার জন্য প্রতিষ্ঠিত গুরুদ্বারের শিখ অ্যাডভাইস সেন্টার এজেন্সির কর্মীদের সাহায্যে হরমনপ্রীত নামে এক তরুণী মা তার অর্থ ফেরত পেয়েছেন।

তিনি জানান, অবস্থা এত খারাপ হয়ে যায় যে তিনি আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন।

ওই নারী বলেন, ‘আমি নিজের জীবন নেওয়ার কথাও ভেবেছিলাম। আমি কেবল আমার মেয়ে এবং শিখ পরামর্শ কেন্দ্রের কারণে বেঁচে রয়েছি।’

কেন্দ্রের সদস্য মন্টি সিং জানান, শত শত মানুষ সাহায্যের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

তিনি এবং তার দল ২০২২ সালে অভিযুক্তদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাগাতার পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। যাতে এসব ব্যক্তির লজ্জা হয় এবং অন্যরা এদের বিশ্বাস করার আগে সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়।

পোস্টগুলো দেখার পরে আরও অনেকে তাদের  সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং ক্রমে প্রতারকদের তালিকা বড় হচ্ছিল।

মি. সিং বলেন, তারা বুঝতে পারেন যে এজেন্টরা পিরামিড স্কিমের মতো কাজ করে।

তিনি বলেন, ‘অনেক ছোট ছোট টিম লিডার এবং এজেন্ট রয়েছে … এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ কমিশনও পায়।’

তিনি আরও বলেন, ছোট এজেন্টদের মধ্যে কিছু হেয়ারড্রেসার এবং বাস ড্রাইভারও ছিল, যারা এসব কাজের মাধ্যমে বাড়তি অর্থ উপার্জনের বিশাল সুযোগ পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, রাজা ২ লাখ ৫৮ হাজার পাউন্ড পরিশোধ করলেও পরামর্শ কেন্দ্র বর্তমানে মামলাটি ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির কাছে হস্তান্তর করেছে।

নিজেদের পরিবার চরম লজ্জায় পড়ে যাওয়ায় অন্যান্য এজেন্টরাও অর্থ ফেরত দিয়েছিল।

মন্টি বলেন, ‘পারিবারিক সম্মান একজন ব্যক্তির কাছে সবকিছু। আমরা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করি, তার বিরুদ্ধে তদন্ত করি এবং সমস্ত প্রমাণ বিশ্লেষণ করি। প্রমাণ পাওয়ার পর আমরা পরিবারের সাথে কথা বলি। এতে তার পরিবার লজ্জিত হয় এবং তারা তখন ভুক্তভোগীর ঋণ শোধ করতে চায় এবং তাদের পরিবারের নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন।’

ভিসা আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে

২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা ছয়গুণ বেড়েছে, যা আগের বছর ছিল ৩ হাজার ৯৬৬ জন।

গত বছরের জুলাইয়ে হোম অফিস নিয়ম সংশোধন করে, যাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষ করার আগে ওয়ার্ক ভিসা না পায়।

তবে শিখ অ্যাডভাইস সেন্টার জানিয়েছে, পুলিশ ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের কঠোর পদক্ষেপই কেবল ভিসার অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে পারে।

মন্টির সঙ্গে কাজ করা জ্যাস কৌর বলেন, সরকারকে অবশ্যই ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আপনি যদি তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গে কথা না বলেন, তাহলে আসলে কী ঘটছে সে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা থাকবে না।’

হোম অফিসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘জাল ভিসা আবেদন শনাক্ত এবং প্রতিরোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে। এই জালিয়াতদের লক্ষ্যবস্তু হওয়া মানুষদের এটা জানতে হবে যে তাদের স্পনসরশিপ সার্টিফিকেট যদি আসল না হয় তবে সেই আবেদন সফল হবে না।’

মন্টি সিং বলেছেন, মি. রাজার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি তিনি জাতীয় অপরাধ সংস্থার কাছে হস্তান্তর করেছেন। ছবি: বিবিসি

তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো অসাধু কোম্পানি এবং এজেন্ট; যারা বিদেশি কর্মীদের অপব্যবহার, শোষণ বা প্রতারণা করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া অব্যাহত রাখব।’

ওয়ার্ক রাইটস সেন্টারের মি. পাইপার বলেন, সরকারের উচিত ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা।

ব্রিটিশ হওয়ার স্বপ্ন

মূল্যহীন ভিসার কাগজপত্রের জন্য অর্থ হারানো মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই।

পাইপার বলেন, ‘এটা স্পষ্ট যে বেশ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এ ধরনের প্রতারণা ঘটছে। সারাদেশ থেকে আমরা এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি।’

স্মেথউইকের শিখ অ্যাডভাইস সেন্টার আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে এই ধরনের অভিযান অন্যান্য গুরুদ্বারেও চালু হবে। এছাড়া ভারতের মানুষ পড়াশোনা বা কাজের জন্য তাদের দেশ ছাড়ার সময় যে ঝুঁকি নেয় সে সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে শুরু করেছেন তারা।

মি. সিং বলেন, ‘মানুষকে সচেতন করার মানে নিষ্ঠুর সত্য জানানো যে অল্প কয়েকজন সাফল্য পাওয়ার মানে এই নয় যে সবার ক্ষেত্রে একই রকম ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘তারা আরও একটি বিশ্বাসকেও পরিবর্তনের চেষ্টা করছে যে আরও ভাল করার একমাত্র উপায় হলো ব্রিটিশ বা আমেরিকান স্বপ্নের পেছনে ছোটা।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d