যুক্তরাজ্যে পারমাণবিক ঘাঁটি থেকে সামুদ্রিক হৃদে ছড়িয়েছে তেজস্ক্রিয়তা

যুক্তরাজ্যের পারমাণবিক বোমা মজুত করার একটি ঘাঁটির পাইপ ফেটে তেজস্ক্রিয় পানি লোখ লং নামের সামুদ্রিক হৃদে বারবার ছড়িয়ে পড়েছে। দূষণের এই ঘটনাগুলো আশ্চর্যজনক হলেও ফাঁস হওয়া সরকারি নথির বরাতে তা সামনে এনেছে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের একটি রিপোর্টে স্কটিশ এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সি (সেপা) এই লিকের জন্য নৌবাহিনীর ব্যর্থতাকে দায়ী করে। তারা জানায়, পুরনো ১ হাজার ৫০০টি পাইপ পরিবর্তনের যে পরিকল্পনা ছিলো, সেটা যথাযথ ছিলো না।
সেপা ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এসব তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তথ্যগুলো অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট দ্য ফেরেট ও দ্য গার্ডিয়ানের হাতে চলে আসে। এরপর প্রায় ছয় বছরের আইনি লড়াইয়ের পর স্কটল্যান্ডের তথ্য কমিশনার ডেভিড হ্যামিল্টন নথিগুলো প্রকাশের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, নথিগুলো প্রকাশ হলে দেশের নিরাপত্তার চেয়ে কর্মকর্তাদের সুনাম বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
রয়্যাল নেভি কর্তৃপক্ষ তাদের দেড় হাজারেরও বেশি পানির পাইপ ঠিকমতো দেখভাল না করার কারণে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের কাছে লোখ লং নামের একটি সামুদ্রিক হ্রদে এই তেজস্ক্রিয় উপাদান ছড়িয়ে পড়ে। কোলপোর্টের ওই সামরিক ঘাঁটিতে রয়্যাল নেভির চারটি ট্রাইডেন্ট সাবমেরিনের জন্য পারমাণবিক বোমা রাখা হয়।
সেপা জানিয়েছে, কোলপোর্টে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই এমনটা ঘটেছে, যার ফলে পারমাণবিক বোমায় ব্যবহৃত ট্রিটিয়াম নামের নিম্নমাত্রার অপ্রয়োজনীয় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে।
২০১৯ সালের আগস্টে এই লিকের ঘটনায় অনেক বেশি পানি একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির এলাকায় ঢুকে পড়ে। এই পানি ট্রিটিয়ামের কারণে দূষিত হয়ে একটি ড্রেন দিয়ে লোখ লং-এ গিয়ে মেশে। যদিও সেপা জানায়, এই ঘটনার তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক ছিলো না, তবুও তারা দেখেছে যে, ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, যা অপ্রয়োজনীয় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে।
২০২০ সালের মার্চে একটি তদন্তের পর যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরো লিক ও বন্যা ঠেকাতে ২৩টি পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে ২০২১ সালে আবারও দুটি পাইপ ফেটে যায়। এরপর ২০২২ সালে সেপা আবার একটি পরিদর্শন চালায় এবং জানায়, পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের কাজ অনেক ধীর ছিল।
সামরিক ঘাঁটি হওয়ায় কোলপোর্ট সাধারণ দূষণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তবে সেপা বলেছে যে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যেন ঘাঁটিটি পরিবেশ রক্ষার নিয়ম অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এসব ঘটনার পর থেকে কোলপোর্ট এবং ফ্যাসলেন রক্ষণাবেক্ষণে অনেক উন্নতি করেছে এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি।
তবে লন্ডনের প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেসিকের পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড কুলেন বলেন, বারবার দূষণের এই ঘটনাগুলো আশ্চর্যজনক এবং এগুলো গোপন রাখার চেষ্টা অযৌক্তিক ছিলো।