যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান, স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে শিশুরা
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (আইসিই)-এর নেতৃত্বে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি দেশব্যাপী অভিযানে ৯৫৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত রবিবার এই অভিযান পরিচালনা করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর এটিই সবচেয়ে বড় অভিযান বলে জানিয়েছে আইসিই। অভিযানে আইসিইর পাশাপাশি অংশ নিয়েছে এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসহ (ডিইএ) বিচার বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। এই অভিযান এক সপ্তাহ ধরে চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর, যেমন শিকাগো, নিউয়ার্ক (নিউ জার্সি) ও মিয়ামিতে পরিচালিত এই অভিযানে সম্প্রসারিত ক্ষমতাসম্পন্ন একাধিক ফেডারেল সংস্থা অংশ নেয়।
ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপকহারে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ক্ষমতায় এসে অভিবাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে তিনি ২১টি নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন।
শিকাগোতে পরিচালিত অভিযানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ট্রাম্পের সীমান্ত বিষয়ক উপদেষ্টা টম হোমান। তবে, তার এই কঠোর পদক্ষেপ ডেমোক্র্যাট নেতাদের অসন্তুষ্ট করেছে।
শিকাগোর মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন আইসিই-এর অভিযানের কথা স্বীকার করে বলেন, শিকাগো পুলিশ এতে অংশ নেয়নি। তিনি বাসিন্দাদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বহু অভিবাসী প্রবেশ করেছিলেন। তাদের বড় অংশের ঠিকানা হয়েছিল টেক্সাস। তখন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই অভিবাসীদের বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শাসিত শহরগুলোয় পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে শিকাগোর স্থানীয় একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের নানা তৎপরতার মুখে আতঙ্কে রয়েছেন শহরটির অনেক অধিবাসী। তাদের অনেকে স্কুল বা কাজে যাচ্ছেন না। যেমন শহরটির উপকণ্ঠে বসবাস করা দুই বোন ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্কুলে যাচ্ছে না। তাদের মা–বাবাও কাজে যাওয়া বন্ধ রেখেছেন।
ইউএস কমিটি ফর রিফিউজিস অ্যান্ড ইমিগ্র্যান্টস নামের আরেকটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এনা মারিয়া বেনা বলেন, ‘শিশুরা স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। তারা ভয় পাচ্ছে। তারা মা–বাবার কাছ থেকে এসব বিষয়ে শুনছে। সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে শুনছে। আমার মনে হয়, যখন শিক্ষার্থীরা ভয়ের কারণে স্কুলে যেতে চায় না, তখন ওই সম্প্রদায়ের মনের অবস্থা কী, তা অনেকটাই বোঝা যায়?’
এদিকে শিকাগোতে ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে শহরটির অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো। আদালতে দাখিল করা নথিপত্রে বলা হয়েছে, শিকাগোয় অভিবাসীদের জন্য ছাড় থাকার কারণে শহরটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এটা সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে যে বাগ্স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে, সেটি খর্ব করে। একই সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনীতে অযৌক্তিক তল্লাশি ও আটকের বিরুদ্ধে যে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করে।