যুক্তরাষ্ট্রসহ যারাই স্যাংশন দেবে আমরাও তাদের স্যাংশন দেবো : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রসহ যারাই বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে বাংলাদেশও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর যারা স্যাংশন দেবে, তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশও স্যাংশন দেবে। তবে স্যাংশন দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশের কোনো তাড়াহুড়া নেই। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপ অনুভব করে না। আর ভিসানীতি নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ‘তলে-তলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস হয়ে গেছে, দিল্লি আমাদের সঙ্গে আছে’ -আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসানীতির ক্ষেত্রে কোনো আপসের ইঙ্গিত দিলো কি না -জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভিসানীতি নিয়ে কিছু নাই। ভিসা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তার কারণ নাই, মাথা ব্যাথা কারণ নাই। আমরা কোনো চাপ অনুভব করি না। তিনি বলেন, উনি (কাদের) বলেছেন, ওনার কাছে জিজ্ঞেস করেন। ভিসানীতি আমাদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু নয়। উনি (কাদের) ঠিকই বলেছেন। যারা ভিসার জন্য আবেদন করে তাদের জন্য হয়তো দুসংবাদ, যদি দুষ্টু লোক হয়। আমেরিকা তো সবাইকে ভিসা দেয় না। কয়েক হাজার লোক বছরে ভিসার জন্য আবেদন করে, এর মধ্যে কত লোককে ভিসা দেয়?
বাংলাদেশেরও ভিসানীতি আছে জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, ভিসা নীতি সব দেশে আছে। আমাদের দেশেও আছে। আমরা সবেইকে ভিসা দেই না। আমরা ব্যক্তি বিশেষ কিংবা কোনো দেশকে কম ভিসা দেই। আমি যেটা বুঝতে পারি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির মূল উদ্দেশ্য, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। তারা আমাদের সঙ্গে একমত। তারা আমাদের হাতকে শক্ত করার জন্য ভিসানীতি চায়।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে নেই দাবি করে বলেন, আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমেরিকা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সেজন্য তারা সহায়কের ভূমিকা পালন করবে। আমাদের সাহায্য করবে। আর যারা নির্বাচনে আসবে না আমেরিকা তাদের পক্ষে নাই। তারা বলেছে, তারা কোনো দলেই নাই। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং গণতান্ত্রিক সরকার চায়। আমরাও গণতান্ত্রিক সরকার চাই।
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মত থাকলে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের রেখে দেওয়ার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, তারা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাদের সঙ্গে একমত। তারাও বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া উচিত। কিন্তু তারা মনে করে, মিয়ানমারে যদি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হয় তাহলে জীবন-মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। এজন্য আগে ওখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক, তারপের এদের পাঠান। তিনি আরো বলেন, তারা বলছে, এখন রোহিঙ্গাদের এদেশে রেখে কাজকর্ম দেন। তাদের দক্ষতার ট্রেনিং দেন। উন্নত দেশগুলোতে প্রত্যাবাসন বলতে কিছু নেই। ওখানে রিফিউজি গেলে রেখে দেওয়া হয়। তারা সেই চিন্তা-ভাবনায় থাকে। তারা মনে করে, বাংলাদেশ তাদের রেখে দিতে পারে।
বিদেশিদের প্রতি মুখোপেক্ষি না হয়ে নিজের ওপর এবং নিজ দেশের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে গণমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন ড. মোমেন।
সম্প্রতি ভারতীয় বার্তা সংস্থায় ২০১৪ এবং ১৮ নির্বাচন প্রসঙ্গে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র আইসিউতে আছে’ -এ বিষয়ে মন্ত্রীর অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, এ রকম বহু লোক বহু প্রতিবেদন তৈরি করবে। আপনি (প্রশ্ন করা গণমাধ্যমকর্মীকে) নিজে প্রতিবেদন তৈরি করেন। অন্যের মুখোপেক্ষি হয়ে থাকবেন না। আল্লার ওয়াস্তে এই ‘বদ অভ্যাসটা’ বাদ দেন। অন্য কেউ কিছু বললে লাফাইয়া উঠবেন। এটা বাদ দিয়ে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন কি অবস্থা। জনগণ যদি ভোট দেয় ওটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, বিদেশিরা মূলত বিক্রি করতে আসে। এজন্য চাপ সৃষ্টি করে যেন তার কাছ থেকে কেনে। আমেরিকা বিক্রি করতে চায়, ফ্রান্স বিক্রি করতে চায়, ব্রিটিশ বিক্রি করতে চায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিক্রি করতে চায়। তবে বিদেশিরা কি বিক্রি করতে চায় সেই বিষয়টি স্পষ্ট করেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। নিষেধাজ্ঞা (স্যাংশন) দিলে দেবে। বাইরের দেশ থেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের স্যাংশন দেবে। ল-নের এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। বেশি স্যাংশন দিলে আমরাও দিতে পারি, আমরাও দিয়ে দেব।