International

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিম্মি গাজা, অসহায় জাতিসংঘ, অবকাঠামোর ক্ষতি ১৮৫০ কোটি ডলার

গত সপ্তাহে যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গাজা ‘যুদ্ধবিরতি’ প্রস্তাব পাস করে, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সময় নষ্ট না করে নির্লজ্জভাবে এ পদক্ষেপকে হেয় করেছে। যদিও অবরুদ্ধ ছিটমহলে গণহত্যার মাত্রা এবং আমেরিকানদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকার কারণে ওয়াশিংটনকে ভেটো দেয়ার পরিবর্তে চুপ থাকতে বাধ্য হয়েছে, তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড জোর দিয়ে নিশ্চিত করেছিলেন, এ প্রস্তাব মানতে ইসরাইল বাধ্য নয়। এর ভিত্তিহীনতা সত্ত্বেও, তার মন্তব্য অবশ্যই তেল আবিব এবং জেরুজালেমের যুদ্ধ কক্ষে শোনা গিয়েছিল। ভোটের কয়েক ঘণ্টা পর, গাজায় নিরীহ ফিলিস্তিনিদের উপরে দখলদার ইসরাইলে হামলা আরও তীব্র হয়েছে।

গাজার দক্ষিণতম শহর রাফাহতে, ইসরাইলের স্থল আক্রমণের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউসের উপদেশ ইতিমধ্যেই আমেরিকান কূটনীতিক-ভাষণের নিষ্ঠুর কৃত্রিমতা প্রকাশ করেছে। যেমন প্লাস ৯৭২ ম্যাগাজিনের রুওয়াইদা কামাল আমের এবং ইবতিসাম মাহদি নথিভুক্ত করেছেন, রাফাহ-এর ১৪ লাখ মানুষ, যাদের প্রায় সবাই গাজার উত্তর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কয়েক মাস ধরে ইসরাইলের হামলার মুখে রয়েছে। ফলে তারা তাদের ধ্বংস হওয়া বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো ঝুঁকি নিতেও বাধ্য হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হতাশার বিপরিতে, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য আমেরিকার ভেটো দেয়া থেকে বিরত থাকা কিছু আশা জাগানোর জন্য যথেষ্ট ছিল যে, কয়েক মাস ব্যর্থ প্রচেষ্টার পরে, জাতিসংঘ অবশেষে ইসরাইলকে সংযত করার উপায় খুঁজে পেতে পারে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্থায়ী পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর এমনকি এই প্রস্তাবটিকে ‘একটি টার্নিং পয়েন্ট’ বলে অভিহিত করেছেন। বাস্তবে, এ প্রস্তাবের প্রতি ইসরাইলের নির্লজ্জ অবহেলা এর সমস্ত গুরুত্ব ছিনিয়ে নিয়েছে।

সম্ভবত, সে কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রেজোলিউশনটি ভেটো দিয়ে বাতিল করার প্রয়োজন দেখেনি। হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কিরবি জাতিসংঘের ভোটকে সমানভাবে খারিজ করেছিলেন। কিরবি সাংবাদিকদের বলেন যে, নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন, যা ‘মানবিক সহায়তার বিধানের সমস্ত বাধা অপসারণের’ আহ্বান জানায়, ‘ইসরাইলের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না’ এবং ‘(মার্কিন) নীতিতে কোন পরিবর্তন’ হবে না। গাজা, একটি অবস্থান যা সরাসরি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ ইচ্ছার বিরোধিতা করে।

শেষ পর্যন্ত, সেই ইচ্ছাটি প্রয়োগযোগ্য কিনা তার কোন গুরুত্ব থাকে না। এবং দুঃখজনকভাবে, মার্কিন সমর্থন ছাড়া, এটা হয় না, রেজোলিউশন পাসের পরের সপ্তাহে এর যথেষ্ট প্রমাণ দেখা গিয়েছে। গাজায় রক্তক্ষয়ী হামলা অব্যাহত থাকা অবস্থায়, বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলের কাছে আরও ভয়ঙ্কর অস্ত্র সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছে – যদিও স্বীকার করেছে যে, গাজাবাসীদের মধ্যেক্ষুধা একটি মারাত্মক জায়গায় পৌঁছেছে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ব্যাপক অনাহার ‘আসন্ন’ এবং ১৯৯২ সালের দুর্ভিক্ষের সময় শীর্ষে থাকা সোমালিয়ার চেয়ে বেশি মানুষ গাজায়ক্ষুধার্ত থাকার ঝুঁকিতে রয়েছে। মার্কিন কংগ্রেস গাজায় ত্রাণ বিতরণে সাহায্য করা একমাত্র প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখলেও ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং সুইডেনের মতো দেশ এর বিপরীতে যোগ দিয়েছে। এই বিভেদে গাজার আত্মত্যাগের বৃহত্তর পাঠ নিহিত থাকতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি একটি নিয়ম-ভিত্তিক আদেশের আকাক্সক্ষা করে, তবে তারা আর তার সালিস হিসাবে ওয়াশিংটনের প্রতি ভরসা রাখতে পারে না।

এদিকে, গাজায় টানা ছয় মাস ধরে চালানো ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞ এতই ভয়াবহ, যুদ্ধের মাত্র চার মাসে প্রায় সাড়ে ১৮ বিলিয়ন বা এক হাজার ৮৫০ কোটি ডলারের অবকাঠামো হারিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। মঙ্গলবার জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ওঠে এসেছে। প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় চার মাসে যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা ২০২২ সালে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজার সম্মিলিত জিডিপির ৯৭ শতাংশের সমান।

জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত অন্তর্র্বতীকালীন ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ধ্বংসের মাত্রা নজিরবিহীন। অব্যাহত যুদ্ধে গাজার সব বাড়ির প্রায় ৬২ শতাংশ বা ২ লাখ ৯০ হাজার ৮২০ ঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। যুদ্ধে গাজায় মোট ক্ষয়ক্ষতির ৭২ শতাংশ আবাসন খাতে হয়েছে। অর্থের মূল্যে এই ক্ষতির পরিমাণ ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পানি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সরকারি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৯ শতাংশ। বাণিজ্য ও শিল্প সম্পর্কিত ভবনে ৯ শতাংশ। জ্বালানি, পানি ও পৌর খাত ৮০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। ৮৪ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। বাকিগুলোও বিদ্যুৎ ও পানির অভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে গাজার জনসাধারণ ন্যূনতম সেবা গ্রহণ করতে পারছেন না বলে প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে।

স্বাস্থ্যব্যবস্থার মতো গাজার শিক্ষাব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। গাজায় ৬ লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে এখন তাদের কেউ আর স্কুলে যেতে পারছে না। ইসরাইলি হামলায় প্রায় ৫৬টি স্কুল ধ্বংস হয়েছে এবং ২১৯টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষা অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার। ইসরাইলি হামলায় ২৬ মিলিয়ন টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হয়েছে। এসব ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মোট ক্ষয়ক্ষতির ৮০ শতাংশ গাজা, উত্তর গাজা ও খান ইউনিসে হয়েছে। বিত লাহিয়া ও রাফা এলাকায়ও উল্লেখযোগ্য ক্ষতি রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে এখানেই শেষ নয়। যুদ্ধ এখানো চলছে। তাই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ গাজার ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি সত্য। প্রতিবেদনে গাজায় মানবিক সহায়তা, খাদ্য সহায়তা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য আশ্রয় ও আবাসন সমস্যার সমাধান এবং প্রয়োজনীয় পরিষেবা পুনরায় চালু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d