যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে দৃষ্টি এবার দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে
কমলা-ট্রাম্পের মধ্যকার বিতর্কের ফলাফলের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে।
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে গত মঙ্গলবারের কমলা হ্যারিস-ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বিতর্কের ফলাফলের প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে। বিতর্ক শেষ হওয়ার পরপরই দুই প্রার্থী ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রচারে। বিতর্কে কমলার কাছে ধরাশায়ী হলেও ট্রাম্পের প্রচারশিবির তা মানতে নারাজ। দুই দলই বিতর্কে নিজেদের জয় দাবি করে গতকাল বৃহস্পতিবারই দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রচার শুরু করেছেন। ডেমোক্র্যাট শিবিরের আশা, বিতর্কে কমলা যেভাবে প্রভাব দেখিয়েছেন, তা হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে কমলার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেবে।
আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অর্থাৎ নির্বাচনের বাকি আর ৫৪ দিন। এর আগে ভোটারদের মন জয় করতে হবে দুই প্রার্থীকে। এর মধ্যে মঙ্গলবারের বিতর্ক দেখেছেন ৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন নাগরিক। ওই বিতর্কে কমলার আক্রমণের মুখে রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিলেন ট্রাম্প। নভেম্বরের নির্বাচনের ফল নির্ভর করছে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর ওপর। তাই ভোটারদের মন জয় করতে দুজনই দৌড়াচ্ছেন।
সমর্থন অবিশ্বাস্যভাবে কাছাকাছি। এই মুহূর্তে ভালো বোধ করলেও আমরা থেমে থাকতে বা বিলাসিতা করতে পারি না।
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, ডেমোক্রেটিক প্রচারশিবির
গতকাল নর্থ ক্যারোলাইনায় প্রচার চালান ৫৯ বছর বয়সী কমলা। বিতর্কে পাওয়া উদ্দীপনাকে পুঁজি করে এগোতে চাইছেন তিনি। নর্থ ক্যারোলাইনায় একসময় ৬ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। তবে গত মাসে কমলা সেখানে সমর্থনে ট্রাম্পের সমান পর্যায়ে চলে এসেছেন। এ অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পকে হারাতে তিনি কৃষ্ণাঙ্গ, তরুণ ভোটারদের লক্ষ্যবস্তু করেছেন।
এদিকে বিতর্কে কমলার ফাঁদে পড়েছিলেন ট্রাম্প—মার্কিন গণমাধ্যমে এমন খবরে তাঁর প্রচারশিবির অস্বস্তিতে। তবে বসে নেই ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। অ্যারিজোনার টাকসনে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তিনি। সেখানে দেশের চাপে পড়া অর্থনীতির বিষয়টিকে তুলে ধরছেন।
এর আগে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট শিবিরে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ভোটে ব্যাপক লড়াই হয়েছিল। গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন ট্রাম্পের বিপক্ষে মাত্র ১০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন।
বক্সিংয়ে কেউ হেরে গেলে আবার উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে খেলতে চান। বিতর্কের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। তিনি বাজেভাবে হেরেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ার বিতর্ক কমলা হ্যারিসের জন্য বড় ধরনের উদ্দীপনা বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, গত জুলাই মাসে জো বাইডেন সরে যাওয়ার পর কমলা হ্যারিস প্রার্থী হলে তাঁকে ঘিরে প্রাথমিক যে উন্মাদনা ছিল, তা শেষ হয়ে আসছিল। অনেকে একে মধুচন্দ্রিমা শেষ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করছিলেন।
প্রথম দফা বিতর্কে ভালো করায় আরেকটি বিতর্ক চেয়েছে কমলার প্রচার শিবির। কিন্তু ট্রাম্প তাতে রাজি নন। তিনি বলেছেন, বক্সিংয়ে কেউ হেরে গেলে আবার উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে খেলতে চান। বিতর্কের সঙ্গে এর কোনো পার্থক্য নেই। তিনি বাজেভাবে হেরেছেন।
বিতর্ক নিয়ে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এটা তাঁর অন্যতম সেরা বিতর্ক ছিল। কিন্তু বিতর্ক–পরবর্তী তাৎক্ষণিক জরিপে দেখা গেছে, কমলা ট্রাম্পকে তাঁর নির্বাচনী সমাবেশে সমর্থকদের ভিড়, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হার, গর্ভপাতের মতো বিষয়গুলোতে চেপে ধরেন।
কমলার প্রচার শিবিরের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সমর্থন অবিশ্বাস্যভাবে কাছাকাছি। এই মুহূর্তে ভালো বোধ করলেও আমরা থেমে থাকতে বা বিলাসিতা করতে পারি না।
জনসমর্থন নিয়ে বিভিন্ন জরিপে ট্রাম্পের সঙ্গে কমলা ব্যবধান কমালেও দুই প্রার্থী এখনো সমানতালে এগোচ্ছেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের গভীর মেরুকরণের রাজনীতি। কারণ, বিতর্কের মতো বড় লোকদেখানো ঘটনা খুব কমই ভোটারদের মনকে আন্দোলিত করে।
কমলা-ট্রাম্পের বিতর্কের পর এখন দুই প্রার্থীই পরস্পরকে দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলো নিয়ে আক্রমণ করে যাবেন। তাঁদের লক্ষ্য থাকবে কয়েক হাজার দোদুল্যমান ভোটারকে নিজ পক্ষে টানা। কারণ, এখানকার উত্তর–পূর্বাঞ্চলের ‘রাস্ট বেল্ট’ ও দক্ষিণাঞ্চলের ‘সান বেল্ট’ সবকিছুর নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে।