যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ৫ ইস্যু
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে এবার গুরুত্বপূর্ণ ৫টি বিষয় ইস্যু হিসেবে সামনে এসেছে। তা হলো অর্থনীতি, অভিবাসন, গর্ভপাত, পররাষ্ট্রনীতি ও জলবায়ু। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের শুরু পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ওই সময় ব্যবসায়ী এবং সম্পদশালীদের জন্য আয়কর কর্তন করেছিলেন। তবে এবার পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে সব রকম আমদানিতে কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করবেন। তিনি বলেছেন, এর ফলে মার্কিনিদের আয়কর কমিয়ে আনতে পারবেন তিনি। উপরে উল্লিখিত ৫টি ইস্যুতে তুমুল বিতর্ক চলছে কমালা হ্যারিস ও ট্রাম্পের মধ্যে। হোয়াইট হাউসে প্রবেশের চাবি হাতে পেতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। এ সময়ে দুই প্রার্থীই সর্বোচ্চ চেষ্টা ও কৌশল ব্যবহার করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচত হলে পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রিপ্টো কারেন্সির রাজধানী বানিয়ে ফেলবেন। সেপ্টেম্বরে ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সির প্ল্যাটফরম চালু করবেন। অন্যদিকে ডেমোক্রেট কমালা মধ্যম শ্রেণির পরিবারগুলোর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থনীতিতে তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির। তা করতে তিনি ধনী ব্যক্তিদের আয়কর বৃদ্ধি করবেন।
৬০ বছর বয়সী কমালা প্রথমবারের মতো বাড়ির ক্রেতাদের সহায়তা দেয়া, শিশুদের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিট এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অভিবাসন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে ডকুমেন্টবিহীন অবৈধভাবে অবস্থানকারী লাখ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ২০১৬ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করবেন। এবার তিনি অভিযোগ করেছেন অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের রক্তে বিষ মিশিয়ে দিচ্ছেন। ওদিকে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যেসব মানুষ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবে তাদের করুণ পরিণতির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিবাসন নীতিকে কঠোর করার পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন করেছেন। এক্ষেত্রে সীমান্তে যেসব প্রতিবন্ধকতা বসানো হয়েছে সেসব নজরদারি করার কথা বলেছেন। ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে রোয়ে ভার্সাস ওয়েড নীতিকে উল্টে দিয়ে গর্ভপাতের অধিকারকে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে কিছু রাজ্যে গর্ভপাত পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়। এরপর কিছু ভোটারের কাছে প্রজননের এই অধিকারটি বড় ইস্যু হয়ে আছে।
১৯৭৩ সালের ওই নীতি যারা বাতিল করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সেইসব বিচারপতিকে নিয়ে গর্ব করেন ট্রাম্প। কারণ, তাদেরকে তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি নির্বাচিত হন তাহলে গর্ভপাতে ব্যবহৃত ওষুধ হাতের নাগালে পাওয়ার অধিকারে বিধিনিষেধ দেবেন। উল্লেখ্য, ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প গত বছর লেখিকা ই. জ্যাঁ ক্যারোলকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তা সত্ত্বেও তিনি নারীদের মহৎ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে ডেমোক্রেট কমালা হ্যারিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচিত হলে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাতের অধিকার পুনর্বহাল করে ফেডারেল আইন করবেন। তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক সংশোধনীর পক্ষে কিনা সে সিদ্ধান্ত দেবেন ১০টি রাজ্যের ভোটার। এটা তাদের রাজ্যগুলোতে গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়টি নির্ধারণ করবে। ওদিকে মধ্যপ্রাচ্যে এবং ইউক্রেনে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে দ্রুততার সঙ্গে উভয় যুদ্ধেরই সমাধান করবেন। তবে কীভাবে করবেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেননি। ২০২২ সালে রাশিয়া আগ্রাসন চালায় ইউক্রেনে। তারপর থেকে কিয়েভকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তার নিন্দা জানান ট্রাম্প। অন্যদিকে নির্বাচিত হলে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমালা হ্যারিস। তবে ইসরাইলকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প ও কমালা দু’জনেই। তার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের বিষয়টিতে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস। চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহৎ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারী যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এই বিষয়ে এই দুই প্রার্থীর কেউই কোনো বিস্তৃত প্ল্যাটফরম নিয়ে কথা বলেননি। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তনকে ভুয়া বলে ট্রাম্প এর নিন্দা জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং ইলেকট্রিক যানবাহনের ক্ষেত্রে দেয়া ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করেছেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আরও একবার যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। এর আগে নির্বাচিত হয়েই তিনি এই কাজটি করেছিলেন। তবে বাইডেন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার যুক্ত করেছে। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা বিষয়ক আইনকে অনুমোদন করেছেন কমালা হ্যারিস। এর ফলে পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে।