USA

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে কে জিতবেন?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টশিয়াল নির্বাচনের আর বাকি তিন দিন। তুমুল হাড্ডাহাড্ডির লড়াইয়ে শেষে ‘কার জিত হবে’ এ নিয়ে এখন আলোচনা সবখানে। এ নির্বাচন নিয়ে মার্কিন নাগরিকদের মাঝেও উদ্বেগের শেষ নেই। মার্কিন সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (এপিএ) এক গবেষণায় দেখিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক প্রতি ১০ জন নাগরিকের মধ্যে সাত জনই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে মানসিক চাপে আছেন। গত চার বছরে হওয়া দুটি যুদ্ধ, গণহত্যা, নৈতিক প্রশ্ন এবং ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক মেরুকরণ; সব মিলিয়ে এই নির্বাচনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে আরও অনেককে প্রভাবিত করবে।

আমরা জানি নির্বাচনের পূর্বাভাসের জন্য জরিপগুলো সবক্ষেত্রে ভালো ফল দেয় না। যদি করেও, এবারের সমীক্ষাগুলোও দেখাচ্ছে যে, দুই প্রার্থীর মধ্যে তফাৎ নেই বললেই চলে। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে সমীক্ষার গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রা (মার্জিন অব এরর) হিসেবে নিলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস, দুজনেরই নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা সামনে সমান। নির্বাচন-পূর্ব সমীক্ষায় আগের দুবার ট্রাম্প কখনো তার ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বীর এতটা কাছাকাছি ছিলেন না। ২০১৬ এবং ২০২০ সালে দুবারই ‘সুপ্ত’ ট্রাম্প ভোটারদের হিসাব উঠে আসেনি সমীক্ষায়। এবারও এমন হবে ধরে নিয়ে অনেকে এরই মধ্যে ট্রাম্পকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক কিছুই সম্ভব। ট্রাম্প বড় ব্যবধানে এমনকি ভূমিধস জয়ও পেতে পারেন। একই কথা প্রযোজ্য কমলার ক্ষেত্রেও।

আবার নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান অনেক কমও থাকতে পারে। এমনকি দুই প্রার্থীর ইলেক্টর সংখ্যা সমানও হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের রায় দেবে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ, যেখানে এখন রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেক্ষেত্রে হয়তো ট্রাম্প জিতবেন। আবার ২০০০ সালের বুশ বনাম আল গোর নির্বাচনের মতোও কিছু হতে পারে। সেবার নির্বাচনের ব্যবধান এতই কম ছিল যে কয়েক সপ্তাহ লাগিয়ে পুনর্গণনা চালানোর পর সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়েছিল সমাধানের জন্য।

ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করাটা এত কঠিন হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, এবার সামান্য হলেও ট্রাম্প কলঙ্কিত এবং কমলা অপ্রত্যাশিতভাবে মধ্যপন্থী প্রচার চালিয়েছেন—লিজ চেনির মতো রিপাবলিকানদের নিজের দলে ভিড়িয়েছেন, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকানদের ভোট পেতে শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের চাইতে বন্দুকের মালিকানা নিয়ে বেশি কথা বলেছেন। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা এবং মধ্যবিত্তের আবাসন ব্যয় কমানোর মতো জনপ্রিয় অর্থনৈতিক নীতি নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

নির্বাচনী প্রচারণা হিসেবে প্রার্থীরা কেমন কৌশল অবলম্বন করতে পারবেন, তা নিয়েও ধোঁয়াশা আছে। মিশিগানের একজন নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাট জানান, তার কাছে অজানা এক নম্বর থেকে বার্তা আসে। যেখানে ‘রিপাবলিকান অ্যাকাউন্টিবিলিটি প্যাক্ট’ নাম নিয়ে সাবেক ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, ৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের জন্য তারা আর ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। খুব সম্ভবত কমলা শিবির থেকে আসা এরকম কৌশল নিয়ে গণমাধ্যমে তেমন আলোচনা হয়নি। আবার ভোটার টানতে ট্রাম্প শিবির এআই দিয়ে যেসব ভুয়া ছবি তৈরি করেছে—যেমন ট্রাম্পকে ঘিরে আছে সব কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার—এগুলো গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। তবে তাদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার ব্যাপকতা সম্বন্ধে এখনো ধারণা নেই আমাদের। এরকম প্রচারণা দিয়েই ২০২০ সালে ট্রাম্পপন্থীদের বিশ্বাস করানো হয়েছিল, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে বাস করেন এমন ভোটারদের জন্য অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবার মতো অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো বৈদেশিক নীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতিও ভোটারদের প্রভাবিত করে। সেপ্টেম্বরে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি জরিপ অনুসারে, ৭০ শতাংশ ট্রাম্প সমর্থক এবং ৫৪ শতাংশ কমলা সমর্থক পররাষ্ট্রনীতিকে তাদের ভোটের পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক বলে মনে করেন। ইসরায়েলের গণহত্যা নিয়ে অনেকেই বেশ মর্মাহত। বিশেষ করে আরব আমেরিকানরা—যাদের অনেকেই গাজা বা লেবাননে পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন—তারা প্রতিবাদ হিসেবে বাইডেনের সহযোগী কমলাকে ভোট দেবেন না, কিংবা একেবারেই ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।  

তবে মনে রাখতে হবে, দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ফলাফল উল্টে দেওয়ার মতো যথেষ্ট ভোট আরব আমেরিকানদের নেই। এমনও হতে পারে, অনেক আরব আমেরিকান ফিলিস্তিন ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত কমলাকেই ভোট দেবেন। কারণ ইসরায়েলের চরমপন্থীদের প্রথম পছন্দ ট্রাম্প এবং তার কথাবার্তায় ফিলিস্তিনিদের নিয়ে উস্কানিমূলক মন্তব্য বেশি থাকে। যদি দোদুল্যমান রাজ্যগুলোয় আরব আমেরিকানরা তরুণ ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে দলে দলে ট্রাম্প বা ফিলিস্তিনপন্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী জিল স্টেইনকে ভোট দেন, কিংবা একেবারে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, তাহলে কমলার ভরাডুবি হতে পারে। 

সামগ্রিকভাবে জাতীয় অনুভূতি, এমনকি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কে পাবেন তাও এখনো অস্পষ্ট। ট্রাম্প আগের দুই নির্বাচনেই কম ভোট পেয়েছিলেন, কিন্তু ইলেক্টোরাল কলেজে হিলারিকে হারিয়েছিলেন। নিউ ইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্র্যাটপন্থী রাজ্যগুলোতেও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এসব রাজ্যে কমলা এগিয়ে থাকলেও ডেমোক্র্যাট হিসেবে যথেষ্ট সমর্থন পাচ্ছেন না। ২০২২ সালের মিডটার্ম নির্বাচনে নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েছিল রিপাবলিকানরা। তারা ক্যালিফোর্নিয়ার মতো রাজ্যেও অনেক আসন পেয়েছে। ট্রাম্পের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া একেবারে অসম্ভব না। আবার কমলার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট না পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজে জেতাটা অসম্ভব না। ২০১৬ ও ২০২০ নির্বাচনে যেমনটা দেখেছি আমরা, সেরকমও হতে পারে। এবারের স্ক্রিপ্ট হয়তো ভিন্ন হতে পারে। 

নির্বাচনের ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, এখানে ঐতিহাসিকভাবে ক্ষমতাসীন দল বাড়তি সুবিধা পায়। ১৯৮৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১৪ জন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, যার মধ্যে ১১ জনই জিতেছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে অনেক দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেরও রাজনৈতিক বাস্তবতা বদলে গেছে। প্রচলিত রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর খুব একটা খাটছে না। গভীর রাজনৈতিক অবিশ্বাস ও অসন্তোষের একটি যুগে বাস করছি আমরা। ২০২০ সালে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে থাকা জনমত বাইডেনকে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে সেসময় কোভিড মহামারী মোকাবিলায় ব্যর্থ হচ্ছিলেন ট্রাম্প। 

এই নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনদের সুবিধা তত্ত্ব প্রয়োগ করা যাবে না। এটি চার বছর আগে পুনঃনির্বাচনে হারা একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বর্তমান প্রশাসনের প্রশ্নবিদ্ধ ভাইস প্রেসিডেন্টের মধ্যকার লড়াই। কমলা হ্যারিস বলতে গেলে ক্ষমতাসীন প্রশাসনের পক্ষ থেকেই লড়ছেন। কারণ বাইডেন প্রশাসন থেকে তিনি নিজেকে আলাদা করেননি এবং বর্তমান সরকারের ত্রুটি-দুর্বলতা নিয়েও কথা বলেননি। বাইডেনের রেকর্ড তার ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার আপনি অন্যভাবেও দেখতে পারেন। কমলা শ্বেতাঙ্গ না, তিনি ইতিহাসের প্রথম নারী ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং (বাইডেন, ট্রাম্পের মতো) তার বয়স ৮০-র ঘরে না। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এক নতুনত্বের ইঙ্গিত দেন। আবার যেহেতু মার্কিন সমাজ থেকে বর্ণবাদ এবং লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়ে যায়নি, এই ব্যাপারগুলো তার বিপক্ষেও কাজ করতে পারে। এ নিয়ে আপনি আলাপ আলোচনা চালিয়ে যেতে পারেন, অনেক উদ্ভট দৃশ্যকল্পও কল্পনা করতে পারেন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত এসব আলোচনা থামবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, নির্বাচনের দিন পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিনের মানচিত্র লাল বা নীল হওয়ার আগ পর্যন্ত বিজয়ীর নাম জানতে পারব না আমরা। 

অবশ্য মার্কিন নির্বাচনের মতো একটি বৈশ্বিক ঘটনাকে ঘিরে অনিশ্চয়তা অনেক বড় করে দেখানো হচ্ছে। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, এমনকি মূলধারার গণমাধ্যমেও নির্বাচনী পূর্বাভাস বা ভবিষ্যদ্বাণীকে গেমের মতো দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এসব দৃশ্যকল্প নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ রাজনৈতিক বিশ্লেষণের পরও শেষ কথা একটিই—আমরা জানি না নির্বাচনে কী হবে। আপনি বলতে পারেন ‘ট্রাম্প জিতবে’ বা ‘কমলা জিতবে’, কিন্তু সেটা কেবলই একটি অনুমান। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor