Trending

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক-ভারতের নিষেধাজ্ঞা চিন্তিত ব্যবসায়ীরা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের পর বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে আরেকটি ধাক্কা লেগেছে। এর মধ্যে মার্কিন শুল্ক আপাতত স্থগিত হলেও শঙ্কা কাটেনি। তবে এরই মধ্যে ভারত তাদের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিছুদিন আগে ট্রান্সশিপমেন্টও বাতিল করেছে দেশটি। সব মিলিয়ে দুই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেশের রপ্তানিতে চাপ বাড়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

এদিকে স্থলপথে বাংলাদেশি কিছু পণ্য আমদানিতে ভারতের বিধিনিষেধ বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। 

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, অর্থনৈতিক স্থবিরতার মধ্যে ভারতে স্থলবন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পাল্টা শুল্কহার বাংলাদেশের রপ্তানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। 

ওদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পাল্টা পদক্ষেপের বদলে দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চায় সরকার। এ ছাড়া দুই দেশই সদস্য হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আপাতত দ্বিপক্ষীয় আলোচনাতেই জোর দিচ্ছে সরকার। 

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশর বড় অংশীদার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৪৪.৪৬ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ২০.৬০ শতাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও জনসংখ্যাবহুল প্রতিবশী দেশ ভারত থেকে। আর আমদানির ক্ষেত্রে ভারত দ্বিতীয় এবং যুক্তরাষ্ট্র পঞ্চম।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১০.৫৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে বাংলাদেশ ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে এবং রপ্তানি করেছে ১.৫৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য। গত অর্থবছর বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ১০.১৩ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭.৬০ বিলিয়ন ডলার। অর্র্থাৎ আমদানি-রপ্তানির গুরুত্বতে দুই দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অত্যধিক। 

গত ৩রা এপ্রিল বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা এতদিন ১৫ শতাংশ ছিল। যদিও তিন মাসের জন্য আপাতত স্থগিত আছে। আর গত ১৭ই মে ভারত স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৈরি পোশাকসহ ৭টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দুই বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতের সীমান্তবর্তী বন্দরগুলোতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন পাল্টা শুল্কহার প্রত্যাহার না করলে রপ্তানির গতি কমবে এবং উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্কহার স্থগিত করেছে, কিন্তু এখনো তা রয়ে গেছে। যদি আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে শুল্ক কমাতে বা ঐকমত্য তৈরি করতে রাজি করতে না পারি, তাহলে আমাদের উচ্চতর কর দিতে হবে। এটি বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। সময় ও খরচ বাড়বে। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। রপ্তানি কমে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচামাল রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাংলাদেশি আমদানিকারকদের পণ্য পেতে দেরি হচ্ছে, যা সরাসরি প্রভাব ফেলছে গার্মেন্টস, ওষুধ ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতে। আগে যেখানে বেনাপোল দিয়ে রপ্তানিপণ্য ভারতে পাঠাতে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনদিন লাগতো, সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে অনেক বেশি সময় লাগবে। আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করহার নিয়ে দ্রুত সমাধান না হলে আমরা প্রতিযোগিতায় হেরে যাবো। ফলে সামগ্রিক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম বলেন, আমাদের অধিকাংশ কাঁচামাল ভারতের ওপর নির্ভরশীল। স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি বন্ধ থাকায় আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, সময়মতো বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য সরবরাহ করা যাচ্ছে না। 

বিজিএমইএ সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কাঁচামালের সহজ প্রাপ্তি জরুরি। সুতরাং, এ সমস্যার আশু সমাধান দরকার। অন্যথায় আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবো না। কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি, বাজার ও সরবরাহ উৎস বৈচিত্র্যকরণ এবং উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ানোই হতে পারে বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। 

বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজল কে শামীম এহসান বলেন, ভারতে আমাদের রপ্তানির বেশির ভাগই স্থলবন্দর দিয়ে। স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আমাদের অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। কারণ সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য পাঠাতে হলে খরচ ও সময় বাড়বে। এতে মূল্য প্রতিযোগিতা হারাবো। ক্রেতারা স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্ডার দিতে পারবে না। ভারতের বাজারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে নিষেধাজ্ঞা একটি বড় বাধা হলো। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস, সরকার শিগগির সংকট সমাধানের জন্য একটি ঐকমত্যে পৌঁছাবে।

ভারতের বাজারে বড় রপ্তানিকারকদের একটি বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের পানীয় থেকে শুরু করে কনফেকশনারি সামগ্রী, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী ভারতের বাজারে রপ্তানি করি।

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব সামগ্রী আমদানিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এর ফলে আমাদের পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাণ গ্রুপ মূলত স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি করে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ইতিমধ্যেই আমাদের রপ্তানির ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কেননা, সমুদ্র বা আকাশ পথে পণ্য রপ্তানি অনেক ব্যয়বহুল।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে বলেন, ব্যবসায়ীদের সাময়িক হয়তো কিছু ক্ষতি হবে, তবে দীর্ঘমেয়াদে আমরা মনে করি, এটি আমাদের আত্মনির্ভরশীলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ।

বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য: দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভারতের হিস্যা অনেক বেশি। ভারত থেকে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তার তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি খুবই নগণ্য। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে বাংলাদেশ ৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১.৫৭ বিলিয়ন ডলারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ২.১৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে ১.৯৯ বিলিয়ন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১.২৭৯ বিলিয়ন ও ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১.৯৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ। 
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এরপরই রপ্তানি হয় ১৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য। বড় ক্ষতি হবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে। এ ছাড়া ভারতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিকপণ্য, তিন কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও তুলার সুতার ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাবপত্র রপ্তানি হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto