Bangladesh

যুক্তরাষ্ট্রের সেই ১২ কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা

যে ১২ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের সমালোচনার জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিতে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করে যে ১২ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান চিঠি লিখেছিলেন, সেই সমালোচনার জবাবে তাঁদের প্রত্যেকের কাছে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরে চিঠি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ওই ১২ কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করারও চেষ্টা করছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় কমিটির ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সে সুযোগ সৃষ্টির জন্য তাঁরা প্রেসিডেন্টকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। পরে আরও ছয়জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভূমিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি লেখেন।

সংসদীয় কমিটির সূত্র জানায়, মার্কিন কংগ্রেসম্যান, সিনেটর ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যের বাংলাদেশের নির্বাচন ও অন্যান্য বিষয়ে চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সংসদীয় কমিটি। গতকালের বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৮ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির ছয়জন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি লেখেন। এর আগে গত ২৫ মে মার্কিন রিপাবলিকান পার্টির ছয়জন কংগ্রেসম্যান বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের কাছে চিঠি পাঠান। অতীতে রিপাবলিকান পার্টির এই কংগ্রেসম্যানেরা বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন, এমন নজির দেখা যায়নি।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই দুটি চিঠির কোনোটিই বাংলাদেশ দূতাবাস বা বাংলাদেশ সরকার বরাবর লেখা হয়নি। তবু এ সম্পর্কে জানার পর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠির অনুলিপি সংগ্রহ করে এবং সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট কংগ্রেসম্যানদের দপ্তরে যোগাযোগ করে। ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একাধিক কংগ্রেসম্যানের দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন এবং তাঁদের চিঠির বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

একই সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি মার্কিন আন্তর্জাতিক সংস্থাবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসন, হোয়াইট হাউস জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরিচালক এইলিন লাউবাচারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান যে ১২ জন কংগ্রেসম্যানের দুটি চিঠিতে কিছু ভ্রান্ত ধারণা এবং অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অভিযোগ করা হয়েছে। এসব ‘ভ্রান্ত ধারণা’ দূর করতে ওই সব মার্কিন কর্মকর্তার সহযোগিতা কামনা করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ১২ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক আয়োজনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে একাধিক কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠক চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই দুটি চিঠির জবাব হিসেবে বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত তুলে ধরে ১২ জন কংগ্রেসম্যান বরাবর পৃথক পৃথক চিঠি পাঠিয়েছেন।

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের জবাব দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতও ওয়াশিংটনে ব্রিফ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগের জবাব স্পষ্টভাবে প্রমাণসহ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সংবিধান অনুযায়ী সেভাবে আগামী নির্বাচন হবে। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা কারও যদি কিছু বলার থাকে, নির্বাচনে তাদের যেসব ভালো চর্চা আছে, সেগুলো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ‘শেয়ার’ করতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টের ৭০৫ জন সদস্যের মধ্যে ৬ জন সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি, ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি দিয়েছেন গত ১২ জুন। চিঠিতে তাঁরা বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটিকে এ–ও জানিয়েছে যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রায়ই তাঁদের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের কাছে সমসাময়িক বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এ রকম চিঠি লিখে থাকেন। তবে এই চিঠিতে নির্দিষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক দলের উল্লেখ রয়েছে এবং তা স্পষ্টভাবে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই বাংলাদেশ সরকার মনে করছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের ব্যক্তিগত মতামত, এটি ইইউর আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নয় বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়। সে কারণে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব বা চিঠি দেওয়া হয়নি বলে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d