যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে সহিংসতা, রণক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2024/05/prothomalo-bangla_2024-05_a6965548-00d0-42db-bdb6-be69b767a6dd_ucla_1.webp)
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ আরও সহিংস রূপ নিয়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের পাশাপাশি ইসরায়েলপন্থীরা হামলা চালাচ্ছেন। এমন এক হামলার পর দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে মঙ্গলবার রাতে রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস (ইউসিএলএ) ক্যাম্পাস।
লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩২ হাজার স্নাতকের শিক্ষার্থী রয়েছেন। বেশ কয়েক দিন ধরে তাঁদের অনেকে ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। পাল্টায় গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিবাদে কয়েক দিন ধরে কর্মসূচি পালন করছিলেন ইসরায়েলপন্থী শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টানিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করছেন।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ফিলিস্তিনিপন্থী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ইসরায়েল সমর্থকেরা। তাঁরা ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের দিকে আতশবাজি, পানির বোতল ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন। লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের তাঁবু ও প্ল্যাকার্ডেও ভাঙচুর করা হয়। এর একপর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুই পক্ষের শিক্ষার্থীরা। সংঘাত দমাতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। বুধবার ভোর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ইউসিএলএ উপাচার্য মেরি ওসাকো এ ঘটনাকে ‘ভয়াবহ সহিংসতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছে, ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে সহিংসতার একাধিক ঘটনার পর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ ডেকেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রায় সাত মাস ধরে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন প্রায় ৩৫ হাজার ফিলিস্তিনি। সেখানে দেখা দিয়েছে মানবিক সংকট। ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয় বিক্ষোভ। ২০২০ সালে মার্কিন শিক্ষার্থীদের বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের পর এটাই তাঁদের সবচেয়ে বড় আন্দোলন।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোকারীদের তাঁবু ভাঙচুর করেন ইসরায়েলের সমর্থকেরা
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টানিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ইসরায়েল এবং দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহকারী মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে অনুদান নেওয়া বন্ধের দাবিতে সমাবেশ, মিছিল ও অনশন করছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের এসব কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে হাজারো শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীকে।
এর মধ্যে বিগত ২৪ ঘণ্টায় নিউইয়র্কের সিটি কলেজ, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা চ্যাপেল হিল ও ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটি থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আটক হয়েছেন। তবে পুলিশের এই দমন-পীড়নে থামছেন না বিক্ষোভকারীরা। বরং একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নতুন করে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের সূচনা হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসে পুলিশ
হল থেকে বিক্ষোভকারীদের হটাল পুলিশ
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে গত ১৮ এপ্রিল প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপরই বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তারের পরও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে চলছিল আন্দোলন। এরই মধ্যে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন হ্যামিলটন হিল দখলে নেন শিক্ষার্থীরা।
তাঁবু সরিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ বন্ধ করতে সোমবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে তা না মানায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিষ্কার করা শুরু হয়। তারপরই হ্যামিল্টন হল দখল করেন বিক্ষোভকারীরা। ভবনে ‘হিন্দস হল’ লেখা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। গাজায় নিহত শিশু হিন্দ রজবের সম্মানে এমনটা করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের অন্তত ছয়টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।
২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা ভবনটি দখলে রেখে বিক্ষোভ করেন। পরে মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে সেখানে পুলিশি তৎপরতা শুরু হয়। পুলিশকে ঠেকাতে ফটকের বাইরে মানবঢাল তৈরি করেন বিক্ষোভকারীরা। শেষ পর্যন্ত হ্যামিল্টন হলে ঢুকে পড়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা অন্য বিক্ষোভকারীরা—‘লজ্জা, লজ্জা’, ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ স্লোগান দেন।
নিউইয়র্কের মেয়র এরিক এডামস জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে নিউইয়র্কের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা জন চেল বলেন, নিউইয়র্ক সিটি কলেজ থেকে ১৭৩ জন ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ১১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
![সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক থেকে এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2024-05%2F51cada8f-bd98-44e8-beae-4d39e3a63cd9%2Fulca_4.jpg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
সিটি কলেজ অব নিউইয়র্ক থেকে এক বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও বিক্ষোভ
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের অন্তত ছয়টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটি ও মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়েছে।
কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির কিউবেক ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা তাঁবু গেড়েছেন। পুলিশ এই তাঁবু গুঁড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটির মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতেও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়েছে।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ হয়েছে মিসরের রাজধানী কায়রোয় আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে, ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো অ্যান্ড সারবোন, ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ ও ইতালির স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটি, ইউসিএল ও ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।