যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধের আইন স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটিতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটক নিষিদ্ধ করাসংক্রান্ত একটি আইন স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ আইনের অধীন আগামী ১৯ জানুয়ারির মধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন টিকটককে যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মার্কিন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে হবে, নইলে দেশটিতে অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখন আইনটি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানানোর পেছনে ট্রাম্পের যুক্তি, ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ বিষয়ে একটা ‘রাজনৈতিক সমাধানে’ পৌঁছাতে তাঁকে সময় দেওয়া উচিত।
ট্রাম্প ওই অনুরোধ জানানোর পর এ বিষয়ে ১০ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস গত এপ্রিলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকটক বিক্রি, নইলে বন্ধ করে দেওয়াবিষয়ক বিলের পক্ষে ভোট দেয়। পরে দেশটির একটি আপিল আদালত একই আদেশ দেন।
টিকটকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইনটি তুলে নিতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আদালত যদি আগামী মাসের শুনানিতে তাদের পক্ষে আদেশ না দেন, অ্যাপটি ১৯ জানুয়ারি থেকে, অর্থাৎ ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থেই নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
এর আগে গত ১১ মার্চ ট্রাম্প (সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী) বলেছিলেন, টিকটক জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে তিনি একই সঙ্গে বলেন, এ অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে বাচ্চাদের কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এতে শুধু মেটার মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের অবস্থানই শক্তিশালী হবে। ট্রাম্পের শেষ কথাটির সমালোচনা করেছিলেন রিপাবলিকানরা।
আরও আগে ২০২০ সালে ট্রাম্প টিকটক ও চীনা মালিকানাধীন আরেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাট নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে আদালতের বাধায় তিনি আর সফল হননি। টিকটক নিয়ে ট্রাম্পের বর্তমান অবস্থান তাঁর ওই অবস্থানের একেবারে উল্টো।
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের ১৭ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছেন। ফলে এটি সে দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল মাধ্যম হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।
টিকটকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আইনটি তুলে নিতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। তবে আদালত যদি আগামী মাসের শুনানিতে তাদের পক্ষে আদেশ না দেন, অ্যাপটি ১৯ জানুয়ারি থেকে, অর্থাৎ ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার এক দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থেই নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
ট্রাম্পের প্রধান আইনজীবী জন সাউয়ার বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিতর্কের (টিকটক নিষিদ্ধ করা) মেরিট নিয়ে কোনো অবস্থান নিচ্ছেন না। পরিবর্তে টিকটক নিষিদ্ধে ১৯ জানুয়ারি ২০২৫–এর যে সময়সীমা রয়েছে, সেটি স্থগিত রাখার বিষয় আদালতকে বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এটি বিবেচনা করা হলে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ প্রশাসন বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে সমাধানের সুযোগ পাবে।’
এর আগে গত ডিসেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টিকটকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শোউ ঝি সাক্ষাৎ করেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, টিকটকের বিষয়ে তাঁর একধরনের আকর্ষণ রয়েছে এবং তিনি চান অ্যাপটি অন্তত আরও কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয়া থাকুক। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ অ্যাপে তিনি কোটি কোটি ভিউ পেয়েছেন।
সার্বিক বিষয়ে টিকটক কর্তৃপক্ষের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তারা তাৎক্ষণিকভাবে এতে সাড়া দেয়নি।
প্রসঙ্গত, টিকটকে ছোট ভিডিও দেওয়া হয়। তবে অনেক সময় অবান্তর ভিডিও-ও পোস্ট করা হয়ে থাকে। আর সেগুলো তরুণ জনগোষ্ঠী বেশ পছন্দ করে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছে বিজ্ঞাপন প্রকাশকারীরা। তাদের কাছ থেকে অনেক বিজ্ঞাপনদাতা সরে গেছে এবং টিকটকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে।
মার্কিন কংগ্রেসের ভয়, টিকটকের চীনা মালিকেরা যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও চীনা মালিকেরা এ আশঙ্কা নাকচ করে দিয়েছেন।
টিকটকে পুরুষদের লাইফস্টাইল ভিডিও তৈরি করেন ক্রিস বাকেট। তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা ১৩ লাখ। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, এ প্ল্যাটফর্ম টিকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি মনে করি না যে যুক্তরাষ্ট্রে এ অ্যাপের আর আয়ু আছে।’ তিনি তাঁর ফলোয়ারদের বলেছেন যে তাঁরা যেন তাঁকে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, এক্স ও থ্রেডসে ফলো করেন।