USA

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস: কঠোর পুলিশ, শিক্ষকসহ বহু শিক্ষার্থী আটক

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতা ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আচমকা পুলিশ প্রবেশ করে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে পুলিশ। এদিন পেনসিলভানিয়া, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হয় পুলিশ।

এর কয়েক ঘণ্টা আগে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়েও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয় এবং তাঁবুগুলো ভেঙে দেয়। শনিবার স্পেনের মাদ্রিদে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন। তবে এ সময় কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। বিক্ষোভকারীরা মাদ্রিদের প্রধান সড়ক দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে যান। এ সময় সাধারণ পথচারীরা তাদের হাত নেড়ে স্বাগত জানায়। খবর আলজাজিরা ও এএফপির। 
শুক্রবার ফিলাডেলফিয়ায় ও ক্যাম্পাস পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করা হয়েছিল। আটক না হতে চাইলে তাদের বিক্ষোভস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। শুরুতে কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৩৩ জন গ্রেপ্তার হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

তাদের  বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন শিক্ষার্থী। আর বাকিদের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নেন এবং বিক্ষোভ শুরু করেন।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, যেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইসরাইলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেয়। শুক্রবার ভোর চারটার দিকে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে পুলিশ। এরপর তারা বিক্ষোভস্থলটি চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে এবং সেখান থেকে সরে যাওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রায় ১৫ মিনিট সময় দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন, সতর্ক করার পরও সেখান থেকে না সরায় ১০ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধ অভিযান চালায়। সেখানেও বিক্ষোভকারীদের তাঁবু ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ২ হাজার ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ হিসাব করা হয়েছে। 
উট্রেচ্ট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসসহ নেদারল্যান্ডসের অন্যত্র বিক্ষোভকারীরা জড়ো হচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও  পুলিশের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনপন্থিদের বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদিনই নতুন দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, সুইডেন, গ্রীস, অস্ট্রিয়া, ইতালি, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারত, ইরাক, দক্ষিণ কোরিয়া, লেবানন, জর্ডান, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, পোলা-, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও মেক্সিকোয় বিক্ষোভ চলছে।

জার্মানির পূর্বাঞ্চলীয় শহর লিপজিগের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব লিপজিগের একটি লেকচার হল দখল করেন ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল। দখলের পর তারা হলের সমানে ব্যানার টানান। সেখানে লেখা ছিল, ‘গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় দখল’। ব্যানার টানানোর পাশাপাশি লেকচার হলের সামনে ব্যারিকেড স্থাপন করে সেটিকে ‘মুক্তাঞ্চল’ ঘোষণা এবং হলের আশপাশের ফাঁকা জমিতে অস্থায়ী তাঁবুও স্থাপন করেন তারা। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button