যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ চলছে ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে, চাপে প্রশাসন
- বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করায় প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।
- শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অধিকাংশ বিক্ষোভই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণ করে দেশটির বিভিন্ন ক্যাম্পাসজুড়ে কমপক্ষে ৪০টি ফিলিস্তিনপন্থী প্রতিবাদশিবির গড়ে উঠেছে। বিক্ষোভ সামাল দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। চাপে পড়েছে প্রশাসন। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকায় এর প্রেসিডেন্ট মিনোশি শফিকের বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে প্রস্তাব পাস করেছে।
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অধিকাংশ বিক্ষোভই শান্তিপূর্ণভাবে পালন করা হচ্ছে। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা থেকে তাদের প্রতিষ্ঠানকে দূরে সরে আসার মতো বিষয়। তবে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ জন্য ডাকা হচ্ছে পুলিশ। ইতিমধ্যে গত এক সপ্তাহের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করায় প্রায় ৫৫০ জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। কোথাও কোথাও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে এসেছে।
গত শুক্রবার রাতে এনবিসি টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ৪০টিরও বেশি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ক্যাম্পাসে তাঁবু তৈরি করে গাজায় ইসরায়েলে হামলা বন্ধের দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।
গত শুক্রবার রাতে বোস্টনের ইমারসন কলেজ থেকে কমপক্ষে ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ ছাড়া ওহাইও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত ৬২-১৪ ভোটে পাস হয়েছে। গত সপ্তাহে নিউইয়র্ক পুলিশকে ক্যাম্পাসে তলব করায় এবং শিক্ষার্থীদের তাঁবু ভেঙে ফেলার জন্য তাদের অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর থেকে শফিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। শফিকের ওই আদেশের পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট দুই ঘণ্টার বৈঠক আহ্বান করে। এতে একটি প্রস্তাব অনুমোদন পায়। তাতে বলা হয়েছে, শফিকের প্রশাসন একাডেমিক স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করেছে এবং পুলিশ ডেকে ও বিক্ষোভ বন্ধ করে ছাত্র ও অনুষদ সদস্যদের গোপনীয়তা এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিক্ষোভের অধিকারকে অবজ্ঞা করেছে। বেশির ভাগ অনুষদ সদস্য এবং অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কয়েকজন ছাত্র নিয়ে গঠিত সিনেট অবশ্য ওই প্রস্তাবে শফিকের নাম দেয়নি।
এ ব্যাপারে শফিকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি সিনেট সদস্য হলেও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। কলাম্বিয়ার মুখপাত্র বেন চ্যাং বলেন, প্রশাসন সিনেটের সঙ্গে একমত।
এদিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের বৈঠকের পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের প্রাথমিক দাবিগুলোর ব্যাপারে সম্মতি দেয়নি। ইসরায়েলে বিনিয়োগ বন্ধ থেকে সরে আসেনি। ডক্টরাল চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জোনাথন বেন-মেনাকেম কলেন, ‘কলাম্বিয়া তাঁদের দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।’
এদিকে গত জানুয়ারি মাসে এক বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কলাম্বিয়ার বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থী।
জর্জিয়ার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গত বৃহস্পতিবার রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। ওই দিন দর্শন বিভাগের প্রধান নো লি ম্যাকাফিকে গ্রেপ্তারের পরপরই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। তাঁকে গ্রেপ্তারের আগে তিনি আটলান্টা পুলিশকে শিক্ষার্থীদের তাঁবুর দিকে এগোনোর একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। তিনি ওই সময় পুলিশকে থামতে বলার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ক্যারোলিন ফোহলিনকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো এক ভিডিওতে দেখা যায়, নিজের পরিচয় দেওয়ার পরও তাঁকে মাটিতে ফেলে দিয়ে হাতে হাতকড়া পরানো হয়।
ওহাইওতেও পুলিশের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতে অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বোস্টনের ইমারসন কলেজ থেকেও ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের মারধর করার পাশাপাশি তাঁদের মাটিতে চেপে ধরার ঘটনাও ঘটে।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ শুরুর পর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার শুরু হলে গত রোববার ইমারসন কলেজ বিক্ষোভের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে যে বিক্ষোভ হচ্ছে, তার মূল কেন্দ্র হচ্ছে ইমারসন কলেজ। এখান থেকে ১০৮ জনকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সেখানে ইসরায়েলপন্থী ও ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে পরস্পরবিরোধী স্লোগান দিচ্ছেন।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে লাগাম লাগাতে আইনপ্রণেতাদের ক্রমবর্ধমান চাপের সম্মুখীন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারই জেরে বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল কলাম্বিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যক্রম তদন্ত শুরু করেছে।
নিউইয়র্ক পুলিশ দাবি করেছে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বাইরের আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি হরণ করার চেষ্টা করছে।