USA

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই: স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে বাইডেন

মেয়াদের শেষ স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার স্থান নেই। মার্কিন কংগ্রেসের যৌথসভায় এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্পের নাম সরাসরি না নিয়ে ১৩ বার ‘পূর্বসূরি’ শব্দটি ব্যবহার করেন।

ট্রাম্পকে তিনি রাশিয়ার কাছে মাথা নত করার জন্য অভিযুক্ত করেন এবং ক্যাপিটল দাঙ্গার জন্য দায়ী করে কঠোর সমালোচনা করেছেন। ভাষণে বাইডেন অভিবাসন, গর্ভপাত, অর্থনীতি এবং গাজা ও ইউক্রেন পরিস্থিতিও তুলে ধরেন।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে দেওয়া এই বক্তব্যে মার্কিন অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য তুলে ধরেন বাইডেন এবং নিজেকে তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে এগিয়ে রাখার জন্য নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের যুগ্ম-অধিবেশনে বাইডেন এই ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আজ আমার লক্ষ্য কংগ্রেসকে জাগিয়ে তোলা এবং মার্কিন জনগণকে সতর্ক করা। কারণ এখনকার সময়টা স্বাভাবিক নয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র উভয়ই আক্রান্ত হয়েছে। 

ভাষণে বাইডেন বলেন, তার প্রশাসন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করবে। যার ফলে গাজায় আরো বেশি পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে পারবে। এই জেটির মাধ্যমে জাহাজে করে বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অস্থায়ী আশ্রয় নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়ে আসা যাবে। তবে এই জেটি নির্মাণে কত দিন সময় লাগবে, তা জানাননি বাইডেন।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বড় আকারে সহায়তা করে যাচ্ছে কিয়েভকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ইউক্রেনে বড় আকারে মার্কিন সহায়তা পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাইডেন ইউক্রেনের ত্রাণ প্যাকেজের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সিনেটের প্রতি অনুরোধ জানান। বাইডেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি এবং তার প্রতি আমার বার্তা খুবই সহজ—আমরা চলে যাচ্ছি না। আমরা মাথা নত করব না। আমি মাথা নত করব না।’

কিছুদিন আগে ট্রাম্প রাশিয়ার উদ্দেশে বলেছিলেন, ন্যাটো জোটের যেসব দেশ প্রতিরক্ষায় যথেষ্ট পরিমাণ খরচ করে না, তাদের রাশিয়া চাইলে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বাইডেন বলেন, এক সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেছেন। তিনি রুশ নেতার কাছে মাথা নত করেছেন। আমার মতে এটা নিন্দনীয়। ভয়ানক ও অগ্রহণযোগ্য।

বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন অঙ্গীকার করেন, তিনি সারা দেশে আবারও গর্ভপাতের বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নেবেন। তিনি বলেন, যদি মার্কিন জনগণ আমাকে এমন একটি কংগ্রেস দেয়, যারা (সন্তান জন্মদান বিষয়ে) সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন জানায়, তাহলে আমি রো বনাম ওয়েড মামলার রায় পুনর্বহাল করে সে অনুযায়ী আইনও পাশ করব। তিনি গর্ভপাতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্যও ট্রাম্পকে দায়ী করেন।

বাইডেনের ভাষণের বড় অংশ জুড়ে ছিল অভ্যন্তরীণ বিষয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার অর্থনীতিতে তার প্রশাসনের সাফল্য। বাইডেন দাবি করেন, কোভিড-১৯ মহামারির পর প্রায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেছেন তিনি। এক্ষেত্রে তার তৈরি করা নীতিমালা সবচেয়ে কার্যকর হয়েছে। তিনি বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সারা বিশ্বের ঈর্ষার কারণ, মাত্র তিন বছরে আমরা ১ কোটি ৫০ লাখ চাকরি। তিনি মার্কিন শ্রম ইউনিয়ন ও মধ্যবিত্তদের প্রশংসা করেন এবং অঙ্গীকার করেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে উপযুক্ত কর আদায় নিশ্চিত করবেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, তিনি অনেক বছর ধরে রিপাবলিকান পার্টির ‘বন্ধু’ এবং অন্যদের কাছ থেকে শুনেছেন যে চীনের অগ্রগতি হচ্ছে আর আমেরিকা পিছিয়ে পড়ছে। তারা বিষয়টি উলটো করে দেখছেন। আমেরিকা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির ধারেকাছেও কেউ নেই। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের দেশজ উত্পাদন বেড়ে গেছে। চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যঘাটতি এক দশকের বেশি সময়ে সবচেয়ে কম। আমরা চীনের অন্যায্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি।

ট্রাম্পেরজবাব

এদিকে কংগ্রেসের যৌথ সভায় যে ভাষণ দিয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন তার প্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সমালোচনার প্রায় সবটুকু জুড়েই ছিল বাইডেনের অভিবাসন নীতি। ট্রাম্প বলেন, জো বাইডেন নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করতে চলেছেন । তবে তিনি আর তার দল যে মারাত্মক ক্ষতি করেছেন তার জবাবদিহি না করে পাগলের মতো মিথ্যে কথা বলেছেন। তারা সেই একই নীতি অনুসরণ করছেন, যা একটা ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, আমরা একটি দেশ হিসেবে এটা আর মেনে নিতে পারছি না। তিনি ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তার শাসনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমি যখন দায়িত্ব ছাড়ি, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জো বাইডেনকে সবচেয়ে নিরাপদ সীমান্ত দিয়ে যাই। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি তেমন নেই। ট্রাম্প আরো কঠোর ভাষায় বাইডেনের অনেক যুক্তি খণ্ডনের চেষ্টা করেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button