USA

যুক্তরাষ্ট্র কি মন্দার পথে যাচ্ছে, কী বলছেন ট্রাম্প

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রশাসন ‘খুব বড়’ পদক্ষেপ নিতে চলেছে এবং স্বীকার করেছেন, এর ফলে দেশে ‘ক্রান্তিকালীন সময়’ বা ‘বিশৃঙ্খলা’ পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে।

তবে কী মন্দার পথে হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্র? ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্নই করা হয়েছিল ট্রাম্পকে। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এমন আগাম কথা ঘৃণা করি।’ গত সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।

কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য ভয়াবহ অবনমন নিয়ে অনেকের মধ্যে আশঙ্কা বেড়ে গেছে। ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার বড় ধরনের পতন দেখেছে।

ট্রাম্প যেভাবে একের পর এক দেশ ও পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ওপর কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কিন্তু এখনই মন্দার আশঙ্কা করা কি ঠিক হবে?

সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ইতিহাস এবং দেশটির বর্তমান অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে মন্দার আশঙ্কা কতটা যৌক্তিক, তা তুলে ধরেছে।

মন্দা কী

যুক্তরাষ্ট্রে প্রথাগতভাবে মন্দা বলতে বোঝায়, ‘দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাওয়া, পুরো অর্থনীতিতে এ ধারা ছড়িয়ে পড়া এবং বেশ কয়েক মাস বা বছর ধরে ওই পরিস্থিতি বিরাজ করা।’

যুক্তরাষ্ট্রে যখন মন্দার আশঙ্কা দেখা দেয়, তখন ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এটি একটি বেসরকারি অলাভজনক সংস্থা। সংস্থাটির ‘বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটি’ ব্যবসার নানা গতিপথ ও পরিসংখ্যান তুলে ধরে।

এই কমিটি তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে মন্দার হিসাব করে। সেগুলো হলো গভীরতা, বিস্তার এবং সময়।

মাঝেমধ্যে দেখা যায়, বিজনেস সাইকেল ডেটিং কমিটির কর্মকর্তারা মন্দার পূর্বাভাস দেওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা শুরু হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ইওয়াই-পার্থেননের প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ড্যাকো সোমবার সিএনএনকে বলেছেন, ‘সংজ্ঞার বেলায় আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। জিডিপিতে সংকোচন নানা কারণে হতে পারে। যেমন এমনটা হতে পারে বছরের প্রথম এক–চতুর্থাংশে, এমন একটি পরিবেশ থেকে যেখানে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আটলান্টা যে হিসাব দিয়েছে, তাতে এ বছরের প্রথম এক–চতুর্থাংশে জিডিপির সংকোচন হতে পারে। যদি তা–ই হয়, তবে ২০২২ সালের পর এই প্রথম বছরের এক–চতুর্থাংশে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি সংকুচিত হবে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি অনেক বেড়ে গেছে এবং গত কয়েক মাসে বাণিজ্য–ঘাটতিও বেড়েছে। এর কারণ, ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কারোপ। ট্রাম্প আরও শুল্ক আরোপ করতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন এবং ক্রেতারা আগাম পণ্য কিনে রাখতে ছুটছেন।

মন্দা কী আসন্ন

গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার পর অর্থনীতির বড় ক্ষেত্রগুলোতে ব্যাপকভাবে নীতিগত পরিবর্তন এনেছেন। এতে অনিশ্চয়তা অনেক বেড়ে গেছে এবং গত কয়েক সপ্তাহে অর্থনৈতিক সতর্কবার্তা তিন গুণ বেড়েছে।

কর্মী ছাঁটাই দ্রুত বাড়ছে এবং গত মাসে মুদ্রাস্ফীতি আবার বেড়েছে। ২০২৩ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রে এই প্রথম ভোক্তাপণ্যের দাম সবচেয়ে দ্রুত বেড়েছে।

অর্থনীতিবিদ ড্যাকো বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো লক্ষণ দেখিনি, যার ভিত্তিতে মন্দা আসন্ন, এমনটা বলা যায়। তবে আমরা বেসরকারি খাতে সক্রিয়তা কমে আসার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। আমরা শ্রমবাজারের গতি কমে আসা দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ক্রেতারা ব্যয়ের ব্যাপারে আরও সতর্ক হয়ে উঠছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্যবসায়ীরা ‘দেখা যাক কী হয়’ অবস্থানে চলে যাচ্ছেন এবং আমরা নীতিনির্ধারণের বেলায় অনেক বেশি অনিশ্চয়তা এবং পতনের অনেক বেশি ঝুঁকি দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে বাস্তবায়িত হতে চলেছে, এমন বাণিজ্য নীতিমালায়।’

ড্যাকো এ–ও বলেছেন, ‘মন্দা নিয়ে এখনই খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না। আমরা অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি প্রবৃদ্ধির বছর থেকে বেরিয়ে আসছি। এমন একটি পরিবেশ, যেখানে আয়ের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল, যেখানে উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল, যেখানে ভোক্তা ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল এবং বাস্তবে যেখানে পুরো অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল।’

যদিও ২০২৫ সাল শুরু হয়ে গেছে, খানিকটা সময়ও পেরিয়ে গেছে এবং যদি বাণিজ্যে এই বিধিনিষেধ এবং কঠোর অভিবাসন নীতি অব্যাহত থাকে, সর্বোপরি এই অনিশ্চয়তা যদি চলতে থাকে—তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি আরও কমে যাবে। যার ফলে আর্থিক বাজারে চাপ বাড়বে।

ড্যাকো বলেন, আগামী কয়েক মাসে যে বড় বড় ক্ষেত্রে নজর রাখতে হবে, তার অন্যতম মার্কিনদের আর্থিক স্বাস্থ্যের অবস্থা।

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ভোক্তা ব্যয় মার্কিন অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ। তাই এটিতে ফাটল ধরতে শুরু করলে, তা মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তিকে মুছে ফেলবে ও মন্দার সূত্রপাত করতে পারে।’

তবে এখন পর্যন্ত ভোক্তা ব্যয় যে পথে চলছে, তা উদ্বেগজনক নয় বলছেন ড্যাকো। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা গড় ভোক্তা ব্যয়ে শক্তিশালী অবস্থান দেখতে পাচ্ছি। যদিও এ ক্ষেত্রে উচ্চবিত্তরা তাদের যেটুকু ব্যয় করার কথা, তার চেয়ে বেশি ব্যয় করছে এবং যদি দলটি ব্যয় কমিয়ে দেয় বা তাদের আস্থায় ঝাঁকুনি খায়, তবে সেটা হবে উদ্বেগের।’

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা, ভোক্তা এবং বিনিয়োগ খাতের ওপর ট্রাম্পের শুল্কারোপের কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা এখন পর্যন্ত স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের তিন বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছেন। ফলে মার্কিনদের মধ্যে দেশে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

অবশ্য কানাডা ও মেক্সিকোর অনেক পণ্যের ওপর ট্রাম্পের শুল্কারোপ এখনো কার্যকর হয়নি। শুল্ক কার্যকর হওয়ার সময় পিছিয়ে ২ এপ্রিল করা হয়েছে।

ড্যাকো বলেছেন, ‘এ ধরনে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ঘিরে অনিশ্চয়তা এবং অস্পষ্টতা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য কোনোভাবেই সহায়ক না।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d