Bangladesh

যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমেছে আমদানি-রপ্তানি

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বহুমুখী বৈদেশিক বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি এবং বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহও কমে শীর্ষ থেকে চতুর্থ অবস্থানে নেমেছে। কমে গেছে বৈদেশিক অনুদান আসার প্রবণতাও। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগও কমেছে। সামগ্রিকভাবে কমেছে দেশটি থেকে বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার প্রবণতাও। এর মধ্যেও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমছে, সামান্য বেড়েছে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি বিভিন্ন প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। মানবাধিকার ও নির্বাচন ইস্যুতে ইতোমধ্যে ভিসানীতি আরোপ করেছে। এর পাশাপাশি শ্রমিক অধিকার হরণ করলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য হ্রাস পাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে ওইসব বিষয়ও জড়িত। একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের উৎস। দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষ দেশ ছিল এক সময়। এছাড়া বাংলাদেশে বৈদেশিক বিনিয়োগে দেশটির অবস্থান শীর্ষ কাতারে রয়েছে। পাশাপাশি অনুদান থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আসে। বৈদেশিক ঋণের অন্যতম উৎস যুক্তরাষ্ট্র। এসব খাতে দেশটি থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ কমে গেলে বাংলাদেশে ডলারের প্রবাহে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হঠাৎ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। তখন ডলার সংকট আরও প্রকট হবে। দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এর ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, একতরফা নির্বাচন বিদেশিরা মেনে নেবে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে শুধু অর্থনৈতিক বিষয়ই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা আসতে পারে। বড় কোনো দেশ থেকে এ ধরনের বাধা এলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে। দেশের ইমেজ নষ্ট হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ১০ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং মোট রেমিট্যান্স আসার মধ্যে অবস্থান চতুর্থ। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিল শীর্ষে। আলোচ্য সময়ে শীর্ষ অবস্থান থেকে নেমে গেছে চতুর্থ অবস্থানে। গত অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার। ওই সময়ে যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। ওই সময়ের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসা কমেছে ৪৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, অক্টোবর-ডিসেম্বরে এসেছে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ৮৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, এপ্রিল-জুনে ৭২ কোটি ৮ লাখ ডলার ও জুলাই-সেপ্টেম্বরে এসেছে ৫১ কোটি ১৭ লাখ ডলার। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী প্রতি প্রান্তিকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আসে ১২০ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ১৮৪ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১১ দশমিক ২২ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ২৪০ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৪৬ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছে ৩৪৪ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে ৩৫২ কোটি ডলার, যা মোট রেমিট্যান্সের ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৬ বছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। এখন সেখান থেকে কমছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ২৮৭ কোটি ডলার। এর মধ্যে জুনে ৮৭ কোটি ডলার, জুলাইয়ে ৮১ কোটি ডলার, আগস্টে ৮০ কোটি ডলার, সেপ্টেম্বরে ৬৮ কোটি ও অক্টোবরে ৫৮ কোটি ডলার রপ্তানি আয় এসেছে। তথ্যে দেখা যাচ্ছে প্রতি মাসেই আয় কমছে। গত অবছরের জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি আয় এসেছিল ৩০৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে দেশটি থেকে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। গত অর্থবছর দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ৯৭০ কোটি ডলার। যা মোট রপ্তানি আয়ের সাড়ে ১৭ শতাংশ। এককভাবে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। এখন রপ্তানি আয় কমছে। ফলে সার্বিকভাবে রপ্তানি আয় কমছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের আমদানি কমেছে। ডলার সংকটের কারণে গত বছরের এপ্রিল থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে ওইসব পদক্ষেপ আরও কঠোর করা হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবেই আমদানি কমেছে। এর অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি কমেছে। গত বছরের এপ্রিল-জুনে আমদানি করা হয়েছিল ৮২ কোটি ৯ লাখ ডলারের পণ্য। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ৫৬ কোটি ডলারের ও এপ্রিল জুনে ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি প্রান্তিকেই আমদানি কমছে। গত বছরের এপ্রিল-জুনের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। একই সময়ে মোট আমদানি কমেছে ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরে আমদানি কমেছিল ১৬ শতাংশ। মোট আমদানির মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে করা হয়।

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের (এফডিআই) স্থিতিও কমছে। জুন পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগের নিট স্থিতি ছিল ৩৯৫ কোটি ডলার। এর আগে গত ডিসেম্বরে ছিল ৪১০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের স্থিতি কমেছে ৪ শতাংশ।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের সামান্য বিনিয়োগ রয়েছে। এর স্থিতিও কমেছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৪০ হাজার ডলার। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ছিল ২১ লাখ ডলার। ওই সময়ে বিনিয়োগ কমেছে ৪১ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেসরকারি ঋণের বড় অংশই আসে আমদানির মাধ্যমে। আমদানি কম হওয়ায় এ খাতে ঋণের প্রবাহও কমেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ৭৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। গত জুনে তা কমে ৬৯ কোটি ডলারে নামে। ওই সময়ে ঋণের স্থিতি কমেছে ১১ শতাংশ। তবে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ বাড়ছে। জুলাইয়ে ছিল ৬২ কোটি ডলার, আগস্টে তা বেড়ে হয় ৭১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে। আগের ঋণের মেয়াদ বাড়ানো ও বাড়তি সুদের কারণে এ খাতে পরিশোধ হচ্ছে কম। যে কারণে স্থিতি বেড়েছে।

Show More

8 Comments

  1. I do not know whether it’s just me or if everyone else experiencing issues with your site.
    It appears like some of the written text within your
    posts are running off the screen. Can someone else please provide
    feedback and let me know if this is happening to them too?
    This may be a problem with my browser because I’ve had this happen previously.
    Kudos

    Also visit my homepage; vpn special

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button