USA

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেক্সাসকে কেন স্বাধীন করতে চান তাঁরা

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যটি ২০০ বছর আগে একটি স্বাধীন দেশ ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ এখন চাইছেন, টেক্সাস যেন আবারও সেই মর্যাদা ফিরে পায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পরিচিতি পাক এই রাজ্য।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে টেক্সাসের বিচ্ছিন্ন হওয়ার এই প্রক্রিয়াকে তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘টেক্সিট’। এই উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা এর নাম দিয়েছেন ‘টেক্সিট’।

টেক্সাসের স্বাধীনতার দাবি করা টেক্সাস ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের (টিএনএম) প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল মিলার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা টেক্সাসের বাসিন্দারা জানি, সীমান্তকে নিরাপদ করতে এবং বিশ্বের অন্য ২০০টি দেশের মতো করে স্বায়ত্তশাসিত স্বাধীন দেশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য অভিবাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার এটাই (টেক্সিট) একমাত্র পথ।’

২০০৫ সাল থেকে টেক্সাসের স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন মিলার। তবে তিনি মনে করেন, এখনকার মতো করে আগে কখনো এতটা লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।

একসময় স্বাধীন ছিল টেক্সাস
ঊনবিংশ শতাব্দীতে টেক্সাস মেক্সিকোর অংশ ছিল। তবে ১৮৩৬ সালে টেক্সাস বিপ্লবের পর এটি সার্বভৌমত্ব অর্জন করে। মাত্র ৯ বছর পর ২৮তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয় টেক্সাস।

মিলার ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোট থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে আসা অর্থাৎ ব্রেক্সিটের অনুকরণে ‘টেক্সিট’ আন্দোলনের নাম দিয়েছেন।

মিলার বলেন, টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অংশের ইতিহাস এবং স্বার্থগুলোকে ধারণ করে। তবে স্পেনের কাতালান অঞ্চলের স্বাধীনতার প্রবক্তাদের মতো করে তাঁরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের সমস্যাগুলো বোঝে না।

টেক্সাসের স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা রাখা মানুষেরা চাইছেন অঙ্গরাজ্যটির আইনসভায় এমন একটি আইন পাস করুক, যার আওতায় তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হওয়ার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করতে পারবেন। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে সংবিধান অনুসারে অঙ্গরাজ্যগুলোর এমন উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি ১৮৬১ সালে টেক্সাসসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যগুলোর আলাদা হওয়ার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটি ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ।

সম্প্রতি টেক্সাসের একটি রেস্তোরাঁয় টেক্সাস ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল মিলারের বক্তব৵ শুনতে এসেছিলেন মিস্টি ওয়াল্টারস। এই গৃহিণীর বয়স ৫০–এর কোঠায়। তিনি বলেন, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দারা মনে করেন, তাঁরা প্রথমত টেক্সান, এরপর আমেরিকান।

ওয়াল্টারস বলেন, ‘টেক্সাসকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং নিজেদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।’

‘প্রথমত টেক্সান, পরে আমেরিকান’
ফেব্রুয়ারিতে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সাস পলিটিকস প্রজেক্টের এক জরিপে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ২৬ শতাংশই মনে করেন তাঁরা প্রথমত টেক্সান, আর দ্বিতীয়ত আমেরিকান। ২০১৪ সালে করা জরিপে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে মানুষের মনোভাবে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি।

তবে অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সাস পলিটিকস প্রজেক্টের গবেষণা পরিচালক জসুয়া ব্ল্যাঙ্ক মনে করেন, এর মানে এই নয় যে ২৬ শতাংশের সবাই রক্তপাতের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চান।

চলতি মাসে নিউজ উইকের এক জরিপে দেখা গেছে, টেক্সাসের ৬৭ শতাংশ বাসিন্দা চায় অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবেই থাকুক।

সুদূর দক্ষিণ টেক্সাসের ইগল পাস শহরে গভর্নর অ্যাবট রিও গ্র্যান্ডে নদীর তীরে শেলবি পার্ক নামের একটি এলাকার সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এই এলাকা মেক্সিকো থেকে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যকে আলাদা করে। এই এলাকাটিই যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টেক্সাসের স্থানীয় প্রশাসনের বিরোধের মূল কারণ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন তথা যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা এর নাম দিয়েছেন টেক্সিট

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন তথা যুক্তরাজ্যের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় (ব্রেক্সিট) উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁরা এর নাম দিয়েছেন টেক্সিট

গভর্নর অ্যাবট অভিযোগ করে থাকেন, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বিপুলসংখ্যক লোকের প্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তিনি সীমান্তের কিছু অংশে রেজার তার লাগিয়েছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন প্রশাসন মামলা করে। প্রশাসনের দাবি, সীমান্ত এলাকায় নিয়ন্ত্রণ আরোপের এখতিয়ার শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের আছে।

স্বাধীনতাপন্থী নেতা সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতিকে ১৮৩৫ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন, যখন টেক্সাস মেক্সিকোর অংশ ছিল।

তখন মেক্সিকোর ধার দেওয়া একটি কামান ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল টেক্সাস। উপরন্তু তারা একটি পতাকা উড়েয়েছিল, যাতে লেখা ছিল ‘এসো এবং এটি নিয়ে যাও’। আর এর মধ্য দিয়েই তখন টেক্সাসের সফল স্বাধীনতাযুদ্ধের সূত্রপাত হয়েছিল।

মিলার মনে করেন, ইগল পাস পার্কের চারপাশের উত্তেজনা ওই কামানের ঘটনার চেয়েও বেশি জটিল সমস্যা। তিনি এটিকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে একটি ‘ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের’ প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মিলারের সমর্থকেরা মনে করেন, এখন শান্তিপূর্ণভাবেই টেক্সাস আলাদা হতে পারে। তবে ব্ল্যাঙ্ক তা মনে করেন না। তিনি বলেন, টেক্সাস শান্তিপূর্ণভাবে আলাদা হতে পারবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ টেক্সাসের পক্ষে যাবে, এমন কোনো শর্ত নিয়ে আলোচনা করবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d