USA

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স পাঠালে গুনতে হবে ৫ শতাংশ কর

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নামের একটি নতুন আইন প্রস্তাব করেছেন। এই বিলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অন্যান্য দেশে অর্থ পাঠানোর ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থাৎ, বিলটি পাস হলে আন্তর্জাতিক রেমিট্যান্সের ওপর এই কর আরোপ হবে। এর আওতায় পড়বেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন অথচ কাজ বা ব্যবসা সূত্রে সেদেশে থাকেন, তারাসহ এইচ-১বি ভিসা, এফ-১ ভিসাধারী এমনকি গ্রিনকার্ডধারীরাও।

করের ক্ষেত্রে কোনও ছাড় সীমা উল্লেখ নেই। অর্থাৎ, যে কোনও অঙ্কের অর্থ পাঠালেই কর দিতে হবে। তবে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলে তার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ বাজেট কমিটি ১,১১৬ পাতার নতুন এই বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেখানে বিলটি ১৭-১৬ ভোটে পাস হয়। এতে আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে ভোটের পথে একধাপ এগিয়ে গেল এই বিল।

বিলটি আইনে পরিণত হলে বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা লাখ লাখ ভারতীয় এবং অনাবাসী ভারতীয়রাসহ আরও একাধিক দেশের নাগরিকরা ।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিরা যারা নিয়মিত দেশে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন—পরিবারের ব্যয় মেটাতে বা বিনিয়োগের জন্য—তারা আগের মতো পুরো অর্থ পৌঁছে দিতে চাইলে তখন খরচ করতে হবে বাড়তি ডলার।

ভারতীয়দের জন্য বড় ধাক্কা:
এনডিটিভি জানায়, ভারতীয়দের জন্যই ধাক্কাটা বেশি হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৪৫ লাখ ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত নাগরিক রয়েছেন। তাদের অনেকে দেশেও পরিবারকে নিয়মিত অর্থ পাঠান।

‘রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার’ গত মার্চের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার (৩২ বিলিয়ন ডলার)- যা পুরো রেমিট্যান্সের ২৮ শতাংশ।

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’ আইনে পরিণত হলে কেবল এই অংকের উপরই কর হিসেবে ভারতীয়দের গুণতে হবে ১৬০ কোটি ডলার ( ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার)।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের মধ্যে দেশে অর্থ পাঠানোর আগ্রহ কমে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিয়োগ প্রবাহেও।

তবে, নতুন আইনে শুধু পারিবারিক খরচের জন্য অর্থ পাঠানোর ওপর নয়, শেয়ার বিক্রি বা অন্য বিনিয়োগের লাভের অর্থও এই করের আওতায় আসবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ভারতীয়দের জন্য দেশে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি:

ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য, প্রবাসীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্থ উপার্জন করে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাঠানোর কারণে দেশ থেকে অর্থ বাইরে চলে যাচ্ছে। এই প্রবাহ বন্ধ করা এবং অভ্যন্তরীন রাজস্ব বাড়াতে রেমিট্যান্সে কর বসানো দরকার।

এতে অভিবাসন ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে দাবি ট্রাম্পপন্থিদের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও আছে। আর তা হল, দেশের ভেতরের করদাতাদের সন্তুষ্ট করা এবং অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থানের বার্তা দেওয়া।

রিপাবলিকানদের সমর্থন পাওয়া নতুন প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে ওয়াশিংটনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ডেমোক্র্যাটরা বিলটির বিরোধিতা করছে।

ট্রাম্পের নিজ দলের মধ্যেও এই বিল নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। গত শুক্রবার বাজেট কমিটির কট্টরপন্থি একটি অংশ ট্রাম্প ও দলীয় নেতৃত্বের ইচ্ছার বিরোধিতা করে বিলটি আটকে দেয়।

তবে রোববারের ভোটে এটি অল্প ব্যবধানে পাস হয়ে পূর্ণাঙ্গ ভোটে ওঠার পথে এক ধাপ এগিয়ে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto