Uncategorized

যুক্তরাষ্ট্র : পতনের মুখোমুখি একটি সাম্রাজ্য

সর্বপ্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের উত্থান ঘটেছিল। সেসময় বিখ্যাত ব্রেটন উডস কনফারেন্সে দেশটি একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, যা বাস্তবে একটি সাম্রাজ্যিক অর্থনীতি হিসাবে কাজ করে থাকে, অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ফল পাশ্চাত্যের নাগরিকদের হাতে তুলে দেয়। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের জন্য নিরাপত্তা ছায়া প্রদানের জন্য ন্যাটো তৈরি করেছে, যাতে তাদের সংগঠনগুলো অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার মতো সাধারণ বৈশ্বিক নীতিগুলো তৈরি ও আরোপ করতে পারে। শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে, এই ব্যবস্থা বিশ্ব আধিপত্যের এমন একটি মাত্রা অর্জন করেছে, যা প‚র্ববর্তী কোন সাম্রাজ্য কখনও কল্পনাও করেনি।

কিন্তু গত দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য হ্রাস পেয়েছে। এই সহস্রাব্দের শুরুতে পশ্চিমারা বিশ্ব অর্থনৈতিক উৎপাদনের চার-পঞ্চমাংশ ছিল। এখন তা তিন-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছে এবং আরো পতন ঘটছে। যখন পশ্চিমা দেশগুলো তাদের গতিশীলতা পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম করছে, উন্নয়নশীল দেশগুলো তখন বিশ্বের দ্রæততম বর্ধনশীল অর্থনীতির কাতারে রয়েছে। চীনের নেতৃত্বধীন ব্রিক্স এবং সউদী আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেকের মতো প্রতিষ্ঠান এবং চীনের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে তারা তাদের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তিকে রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মনে হতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্র অতীত সাম্রাজ্যগুলোর পরিণতি অনুসরণ করছে: পতন এবং অবশেষে ধ্বংসপ্রাপ্ত।

যুদ্ধোত্তর সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নতি খুব ধীরে হলেও তারা উন্নয়ন করেছে। এই শতাব্দীর শেষের দিকে তারা সেই প্রসারিত অর্থনৈতিক প্রভাবকে রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক শক্তিতে রূপান্তর করতে শুরু করেছে। তারা শুধু ভালো বাণিজ্য ও আর্থিক চুক্তির জন্য দরকষাকষির ক্ষমতা অর্জন করতে শুরু করেনি, পশ্চিমা ব্যবসার জন্য বর্তমানে প্রয়োজনীয় দুটি সম্পদ ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রচুর শ্রম সরবরাহর গুরুত্বপূূূূূূূূূূূূূূর্ণ দর কষাকষিও তাদের হাতে রয়েছে।

সিয়াটলে ১৯৯৯ সালের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর এই আরো দৃঢ়তার প্রথম লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি দেখা গিয়েছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি দল পশ্চিমা আধিপত্য বন্ধ করার জন্য সম্মেলনে যোগ দেয়, প্রতিনিধিদের কাছে উপস্থাপনের জন্য একটি খসড়া চুক্তি তৈরি করে মুষ্টিমেয় পশ্চিমা মিত্রদের দীর্ঘদিনের অনুশীলনের অবসান ঘটায়। তারপর থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলো ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ওপর তাদের নির্ভরতা কমিয়েছে, ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গঠন করেছে এবং বাণিজ্য ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে, যা ডলারের উপর তাদের নির্ভরতা কমিয়ে দিয়েছে।

যদিও পশ্চিমা দেশগুলো আর উৎপাদন এবং পরিষেবাগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করে না, তবুও তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ফার্মাসিউটিক্যালসের মতো জ্ঞান-নিবিড় শিল্পে, বা বিলাস দ্রব্য, খেলাধুলা এবং বিনোদনের ব্র্যান্ড মূল্য তৈরি করেছে এবং আধিপত্য ধরে রেখেছে। তবে এর জন্য শ্রমিক লাগে। পশ্চিমা সমাজগুলো ক্রমহ্রাসমান জন্মহার এবং বার্ধক্যজনিত জনসংখ্যার কারণে পর্যাপ্ত কর্মী তৈরি করতে পারছে না। ফলে তাদের বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চল থেকে সুলভ মূল্যে আসে, যারা পশ্চিমা বিশ্বে অভিবাসন করে। অনেক বাড়িতে বা দেশে বসেই পশ্চিমা সরবরাহ পরিষেবা প্রদানকারী ব্যবসায়গুলোতে কাজ করে।

চীনের অনিবার্য উত্থানের কারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীন উভয়েরই মুখোমুখি হওয়ার বিপদ রয়েছে, যেমন রোগবালাই এবং জলবায়ু পরিবর্তন, যা সমস্ত মানবতাকে ধ্বংস করে দেবে, যদি না জাতিগুলো একসাথে তাদের মোকাবেলা করে। বিশ্ব অর্থনীতি পরিবর্তিত হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র আর কখনও বিশে^র ওপর কর্তৃত্ব করতে সক্ষম হবে না যেমনটি একসময় করেছিল। কিন্তু দেশটিকে গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হলে সমমনাদের জোটে যোগ দিয়ে নিয়ে নতুন বিশ্ব গড়ার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এটি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এর মতো পদ্ধতির মাধ্যমে তার অতীত গৌরব পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা ছেড়ে দিতে হবে। এটি সেই একই আবেগ, যা মহাপরাক্রমশীল রোমান সাম্রাজ্যকে সামরিক দুঃসাহসিকতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল, যা এর চ‚ড়ান্ত ধ্বংস নিয়ে আসে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button