International

যুদ্ধে না যেতে ইউক্রেন ছাড়ছেন তরুণেরা, পুলিশের তল্লাশি

সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বয়স হয়েছে, এমন তরুণদের বেআইনিভাবে দেশত্যাগ ঠেকাতে ইউক্রেনজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ। চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে ২০০টি তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে গতকাল শুক্রবার পুলিশ জানিয়েছে।

সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য বাড়ানোর অংশ হিসেবে সেনার সংখ্যা বাড়াতে বিস্তৃত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ইউক্রেন। দেশটি রাশিয়ার তুলনামূলক বড় সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে রুশ সেনাবাহিনী সম্মুখসমরের কয়েকটি জায়গায় অগ্রসর হচ্ছে।

ইউক্রেনের পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, সামরিক সেবা দেওয়ার বয়স হয়েছে, এমন ইউক্রেনীয় পুরুষদের বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার ঘটনায় দুই শতাধিক অভিযান চালিয়েছে জাতীয় পুলিশ বাহিনী।

এ ধরনের অভিযানের সর্বশেষ ঘোষণাটি দেওয়া হলো গতকাল। এর আগে গত সপ্তাহে দেশজুড়ে ব্যাপক আকারে এ ধরনের তল্লাশি অভিযান শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তখন কিয়েভ জানায়, ৬০০টি বাড়ি, দপ্তর ও স্থাপনায় তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে।

সামরিক বাহিনীর সামর্থ্য বাড়াতে বিস্তৃত পরিসরে সেনা সংগ্রহের পদক্ষেপ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এতে যুদ্ধে যাওয়ার বয়স হয়েছে, এমন ইউক্রেনীয় ছেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হাজারো মানুষকে ইউরোপে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেকেই মানব পাচারে ব্যবহৃত ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি পথ ও নদীপথ দিয়ে দেশ ছাড়ছেন।

পুলিশ বলেছে, বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা কর্মসূচি ফাঁকি দেওয়া ব্যক্তিদের বেআইনিভাবে ইউক্রেন সীমান্ত পারাপারে সহায়তায় জড়িত চক্রগুলোকে লক্ষ্য করে প্রাথমিকভাবে গত সপ্তাহে অভিযান চালানো হয়।

গতকাল পুলিশ বলেছে, ১৯টি পৃথক অঞ্চলে তারা অভিযান চালিয়েছে। পুলিশের প্রকাশ করা ছবিতে দেখে মনে হয়েছে, অস্ত্রসজ্জিত কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত বাসাবাড়ি ও দপ্তরে প্রবেশ করছেন।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এর পর থেকেই সেনা মোতায়েনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর পরিকল্পিত দুর্নীতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা প্রদান থেকে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়মুক্তি দেওয়ার বড় ধরনের দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার পর গত বছর পদত্যাগ করেন ইউক্রেনের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা আন্দ্রি কোস্তিন।

যুক্তরাজ্য-ইউক্রেন ১০০ বছরের চুক্তি

এদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে শত বছরের অংশীদারত্ব চুক্তি সই করেছে ইউক্রেন। বৃহস্পতিবার অঘোষিত সফরে কিয়েভে যান যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। এমন সময় স্টারমার ইউক্রেন সফর করলেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই নিজেদের পক্ষে সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছে কিয়েভ।

গত জুলাইতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি সফরে গেলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তিনি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে দৃঢ় সমর্থনের অঙ্গীকার করেন। স্টারমার বলেন, যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার ‘নিশ্চয়তা’ থাকতে হবে।

স্টারমার আরও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির পর ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করতে শান্তিরক্ষী মোতায়েন নিয়ে মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে তিনি আলোচনা করবেন।

যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ১০০ বছরের অংশীদারত্ব চুক্তির প্রশংসা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অন্য মিত্রদেশগুলোর সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঘনিষ্ঠ।’

ইউক্রেনকে ‘ভবিষ্যৎ ন্যাটো মিত্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এই চুক্তির অধীনে ‘প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গভীর’ করার এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা শিল্পকে শক্তিশালী করার অঙ্গীকার করেছে লন্ডন ও কিয়েভ।

এ ছাড়া রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা মুক্ত করার কথা জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল রুশ মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। গত বছরের ৬ আগস্ট আকস্মিক অভিযান চালিয়ে কুরস্কের একটি অংশ দখল করে নেয় ইউক্রেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button