যুদ্ধ-প্রস্তুতি ও অস্ত্রে বড় বিনিয়োগ—যুক্তরাজ্য কী বার্তা দিচ্ছে

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সতর্ক করে বলেছেন, আধুনিক সামরিক ক্ষমতাসম্পন্ন শত্রু রাষ্ট্রগুলোর মুখোমুখি হতে এবং তাদের পরাজিত করতে যুক্তরাজ্যকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তার তার সরকার কমপক্ষে ছয়টি নতুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক কারখানা নির্মাণে দেড় বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
দ্য সান পত্রিকায় রবিবার স্টারমার লিখেছেন, ‘উন্নত সামরিক বাহিনী থাকা রাষ্ট্রগুলো আমাদের সরাসরি হুমকি দিচ্ছে, তাই আমাদের লড়াই করতে ও জয়ী হতে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা আবারও যুক্তরাজ্যের যুদ্ধ-প্রস্তুতির সক্ষমতা সশস্ত্র বাহিনীর কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।
এই ঘোষণাটি এসেছে সোমবার প্রকাশিত হতে যাওয়া একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনার আগে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ও ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মধ্যেই যুক্তরাজ্য এই পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া ট্রাম্পের মন্তব্যের পর ইউরোপীয় দেশগুলো সম্প্রতি নিজেদের সামরিক বাহিনীকে আরো শক্তিশালী করতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি রবিবার বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এই পরিকল্পিত বিনিয়োগ মস্কোর উদ্দেশে একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা এবং এটি যুক্তরাজ্যের মন্দার মুখে থাকা অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করতে সহায়তা করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করছি, যা এখন দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে…এবং এটি একটি ক্রমবর্ধমান হুমকির বিশ্ব। রাশিয়ার আগ্রাসন বাড়ছে, প্রতিদিন সাইবার হামলা হচ্ছে, নতুন পারমাণবিক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বের অন্য অঞ্চলেও উত্তেজনা বাড়ছে।’
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, এই তহবিল দিয়ে দেশীয়ভাবে সাত হাজার পর্যন্ত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করা হবে। এই প্যাকেজসহ দেশটির মোট গোলাবারুদ খাতে ব্যয় বর্তমান পার্লামেন্ট মেয়াদে ছয় বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে।
এদিকে দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এমন যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে ভাবছে যুক্তরাজ্য, যেগুলো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। তবে এই বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে লেবার পার্টির নির্বাচনী জয়ের পর আদেশ দেওয়া এই আসন্ন কৌশলগত পর্যালোচনায় উদীয়মান হুমকি ও তা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সামরিক সক্ষমতা বিশ্লেষণ করা হবে। স্টারমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের লক্ষ্যে পৌঁছনো হবে এবং পরবর্তীতে সেটি ৩ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।
এই অস্ত্র কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ এসেছে আগেই ঘোষিত আরো দুটি সরকারি বিনিয়োগ পরিকল্পনার পর। সেগুলো হলো যুদ্ধক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের জন্য এক বিলিয়ন পাউন্ড সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য আবাসন উন্নয়নে দেড় বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ।