Bangladesh

যেভাবে উদ্ধার হতে পারে জিম্মি নাবিকরা

ভারত মহাসগর থেকে চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান কবির গ্রুপের ‘এমভি আব্দুল্লাহ’র অপহরণ এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এই জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় দেশবাসী। এরমধ্যে জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছেন আশার কথা। তারা বলছেন, ২০১০ সালে জাহাজ মণি নামের তাদের একটি জাহাজ যেভাবে অপরণ করেছিল  সোমালিয়ার দস্যুরা, পরে মুক্তিপণ ও কূটনীতিক প্রচেষ্টায় নাবিকরা মুক্তি পেয়েছিলেন। এবারও তারা সেভাবে নাবিকদের মুক্ত করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

কবির গ্রুপের মিডিয়া এডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। এর আগেও জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া আমাদের একটি জাহাজ ১০০ দিনের মধ্যে ২৬ নাবিকসহ অক্ষত উদ্ধার করেছি। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এবারও অক্ষত অবস্থায় নাবিকদের উদ্ধার করতে পারবো।’

তিনি বলেন, ‘তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ পরিশোধ করলে সাধারণত তারা জাহাজে থাকা নাবিকদের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু তাদের যোগাযোগ শুরুর পর মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় প্রয়োজন হয়।’

মঙ্গলবার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া এমভি আবদুল্লাহ কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন একটি জাহাজ। সাগরে থাকা বাংলাদেশের পতাকাবাহী ৫১টি জাহাজের মধ্যে ২৩টি  এই কবির গ্রুপের। গ্রুপটির ‘এস আর শিপিং’ নামে একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের হয়ে জাহাজগুলো পরিচালিত হয়।

আগে সে প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ব্রেভ রয়েল শিপিং। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এই ব্রেভ রয়েলের জাহাজ মণি নামের জাহাজকে অপহরণ করেন সোমালিয়ার জলদস্যুররা। তবে ১০০ দিনের মাথায় ওই জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রী মুক্তি পায়।

২০১০ সালের ১১ই নভেম্বর ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’ ৪৩ হাজার ১৫০ টন নিকেল আকরিক নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে যাত্রা শুরু করে। এর মধ্যে একবার জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে যাত্রাবিরতি করে। ২৭ নভেম্বর রওনা হয় গ্রিসের উদ্দেশে। এর মাত্র নয়দিন পর ২০১০ সালের ৫ই ডিসেম্বর জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জাহাজটির নির্ধারিত যাত্রাপথ ছিল সুয়েজ ক্যানালের ভেতর দিয়ে। কিন্তু ছিনতাইয়ের পরপরই জাহাজটির গতিপথ সোমালিয়ার দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়।

এদিকে প্রথম সাত দিন জাহাজটির কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা যায়নি। ১১ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টা নাগাদ জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে গিয়ে ভিড়ে। ওই সময়ের উপগ্রহচিত্র থেকে দেখা যায়, জাহাজটি সোমালিয়ার জলসীমার ভেতরে উপকূল থেকে সাত মাইল দূরে গারাকাড নামক স্থানের কাছাকাছি নোঙর করেছে। মূলত তখনই নিশ্চিত হওয়া যায় যে, সোমালিয়ার জলদস্যুরাই জাহাজটি ছিনতাই করেছে।

এদিকে ১৩ই ডিসেম্বর সোমালিয়ার জলদস্যুরা তাদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি নাবিকদের ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবি করে। লিওন নামের একজন জলদস্যুদের পক্ষে দরকষাকষি করছিলেন। তিনি নাবিকদের জানান, জলদস্যুরা ৯ই মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চায়। এ ব্যাপারে জলদস্যুদের পক্ষ থেকে জাহাজমালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি জাহান মণিতে থাকা ২৬ জন বাংলাদেশির সবাই তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ২ থেকে ৪ মিনিট কথাও বলেন।
ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম ওই সময় সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘ছিনতাই হওয়ার পর ১২ই ডিসেম্বর জলদস্যুরা তাদের সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে। জাহাজের ক্যাপ্টেন ছাড়াও নাবিকদের সঙ্গেও কথা হয়। এরপর থেকে দস্যুদের সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনে প্রায় নিয়মিতই মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।’

জানা যায়, ছিনতাই হওয়ার পর থেকে জাহাজ মালিকপক্ষ জিম্মি নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে। অন্যদিকে নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে ২৪শে ডিসেম্বর জাহাজের ক্যাপ্টেন ফরিদ আহমেদ ব্রেভরয়েল শিপিংয়ের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিমকে ফোনে জানান, পরিস্থিতি ভয়াবহ। জাহাজের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জ্বালানি শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশেষে ২০১১ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সোমালিয়ার জলদস্যুদের দরকষাকষি বা নেগোশিয়েশন চূড়ান্ত হয়। ওই বছরের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জলদস্যুদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুক্তির বিষয়ে লিখিত চুক্তি হয়। সমঝোতা অনুযায়ী জলদস্যুরা এমভি জাহান মণিকে ওমানের সালালাহ বন্দর পর্যন্ত যাওয়ার মতো জ্বালানি তেল এবং নাবিকদের খাওয়া-দাওয়া ও কিছু ওষুধপত্র সরবরাহ করে।

১১ই মার্চ ব্রেভ রয়ালসের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, জলদস্যুদের সকল দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার পরেই জাহাজটিকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় কেউ মধ্যস্থতা করেনি। গত তিন মাস ধরে তাদেরকেই নাবিকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে হয়েছে।’

১২ই মার্চ একটি ছোট বিমান সোমালিয়া উপকূলের উদ্দেশে ওড়ে যায়। সেখানে সোমালিয়ান জলদস্যুদের বহনকারী একটি স্পিডবোটে বিশেষ কৌশলে দুটি ওয়াটারপ্রুফ স্যুটকেস ছুঁড়ে দেয়া হয়। যা ছিল ১০০ ডলারের নোটের বান্ডিলে পূর্ণ। পরে জাহাজটির ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদ জানান, সেই স্যুটকেসে মুক্তিপণের টাকা পেয়ে জলদস্যুরা আনন্দে চিৎকার করে উঠেছিল। তবে পরে জানা যায়, জলদস্যুদেরকে মুক্তিপণ বাবদ ২৮ কোটি টাকা দিয়েছিল মালিকপক্ষ।

অবশেষে ছিনতাইয়ের ১০০ দিনের মাথায় ২০১১ সালের ১৪ই মার্চ সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে নাবিক এবং জাহাজটি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়। জাহাজটি নাবিকদের নিয়ে সোমালিয়ার উপকূলীয় গ্রাম গারাকাড থেকে ওমানের সালালা বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। সোমালিয়ার জলদস্যুরাই নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে জাহাজটি সেখানকার জলসীমা পার করে দেয়, যাতে তারা আবার জলদস্যুদের কবলে না পড়েন।

২০১১ সালের ১৪ই মার্চ ব্রেভ রয়েল শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কূটনৈতিক সফলতার মধ্য দিয়ে জাহাজ ও এর নাবিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে মুক্ত করা গেছে। মালিকপক্ষ থেকে কোনো মুক্তিপণ দেয়া হয়নি এবং আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।’

তবে ১৮ই মার্চ জাহান মণি’র মালিকপক্ষ ব্রেভ রয়েল শিপিং ম্যানেজমেন্ট (বিডি) লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মেহেরুল করিম সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘২৮ কোটি টাকা মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুরা নাবিকদের ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে।’

এমভি জাহান মনি উদ্ধার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে কারা জড়িত এবং তারা কী চায় তা জানতে জাহাজ হাইজ্যাক হওয়ার পর আরও এক সপ্তাহ সময় লাগে। কারণ হাইজ্যাকের পর তারা জাহাজের মালিকের সংস্থার খোঁজ করে একটি প্রোফাইল তৈরি করে। তাদের মুক্তিপণের পরিমাণ কোম্পানির প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি যত ছোট, মুক্তিপণের দাবি তত কম। কোম্পানি যত বড়, মুক্তিপণের দাবি তত বেশি।’

কবির গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাহরিয়ার জাহান বলেন, ‘নাবিক পরিবারের সবাইকে আশ্বস্ত করছি। তাদেরকে বলেছি আপনারা দোয়া করুন। অতীতের অভিজ্ঞতায় আমরা যাতে ভালো একটি সমাধানে পৌঁছতে পারি। নাবিকদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।’

এদিকে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন রকম আশার বাণী শোনালেও নাবিকদের পরিবারের সদস্যদের ভয় কাটছে না। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়েই বুধবার সকালে নগরের আগ্রাবাদে বারিক বিল্ডিং এলাকায় কবির গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে ভিড় করতে শুরু করেন তারা। কর্তৃপক্ষ অক্ষত অবস্থায় জিম্মি নাবিকদের ফেরানোর আশ্বাস দিলেও কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারছেন না তারা।

কবির গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে আসা স্বজনদের একজন জিম্মি নাবিক নুর উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘আমাকে আমার স্বামী ফোন দিয়ে বলেছিলেন তাদের জাহাজে জলদস্যু আক্রমণ করেছে। তাদের অবস্থা অনেক খারাপ। তাদের অফিসে কল দিয়ে বিষয়টি জানাতে বলেছে। আমি সাথে সাথে জানিয়েছি। এখন এখানে এসেছি। মনকে কোনোভাবেই বুঝাতে পারছি না।

এদিকে বুধবার রাতে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, নাবিকরা ভালো আছেন। জলদস্যুরা সবাইকে সাহরি খেতেও দিয়েছেন। এরমধ্যে তাদেরকে বহনকারী জাহাজ সোমালিয়ার উপত্যকার দিকে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যে এটি উপকূলের কোথাও নোঙর করবে। মার্চেন্ট নেভির ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খানের কাছে অপরিচিত নম্বর থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় এমন তথ্য জানান জাহাজের চিফ অফিসার ক্যাপ্টেন মো. আতিক উল্লাহ।

ক্যাপ্টেন আতিক ইউএ খান বলেন, ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ অপরিচিত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট থেকে অডিও পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, গত রাতে সবার মোবাইল সিজ করা হয়েছিল। সবাইকে ব্রিজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়নি। সবাই যেহেতু কো-অপারেশন করছে,  জলদস্যুরাও ভালো আচরণ করছে। সবাইকে সেহেরি করানোও হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d