Hot

যেভাবে এগুবে সংস্কার কমিশন

রাষ্ট্র সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয় সেক্টরের জন্য ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করছে সরকার। আগামী ১লা অক্টোবর থেকে
আনুষ্ঠানিকভাবে এই কমিশন কাজ শুরু করবে। কমিশন প্রধান হিসেবে ৬ জন বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের কাজের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চান দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সরকারি সূত্র জানায়, প্রতিটি কমিশনে বিশেষজ্ঞ সদস্য যুক্ত করা হবে। তারা আলোচনা করে, জনসাধারণের মতামত নিয়ে একটি প্রস্তাব তৈরি করে সরকারের কাছে উপস্থাপন করবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি হবে সংস্কারের রূপরেখা। যে ছয় কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হবে। কমিশন প্রধানের দায়িত্ব পাওয়া বিশিষ্টজনরাও জানিয়েছেন, কম সময়ের মধ্যেই যাতে ভালো প্রস্তাবনা দেয়া যায় সেই চেষ্টা তারা করবেন। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনে সময়োপযোগী পরামর্শ দিতে চান তারা। 

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, আমাদের যাত্রা এখনো শুরু হয়নি। প্রথম কাজ হচ্ছে- কমিশন গঠন করতে হবে। কমিশনের কিছু ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। তারা এ কাজে সহায়তা করবে। কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুসংহত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটা একটি প্রিভিলাইজড। সম্মান। কর্মপরিধি নিয়ে আমাদের অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনা করতে হবে। আমাদের একটি সুপারিশমালা তৈরি করতে হবে।  

সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) সচিব এবং পরে ২০০৭ সাল পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন সফর রাজ হোসেন। পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান এর দায়িত্ব পাওয়া এই বিশিষ্টজন বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতা শুনেছি। এখন পর্যন্ত কোনো অফিসিয়াল চিঠি পাইনি। তবে এটা ১লা অক্টোবর থেকে শুরু করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। অফিসিয়াল চিঠিতে কর্মপরিধি এবং পরিকল্পনা তারা ঠিক করে দিবেন। এবং আমরা একসঙ্গে বসে এর ভিত্তিতে কাজ করবো। অর্থাৎ ১লা অক্টোবর থেকে আমরা আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবো। আমি বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমি সচিব ছিলাম। এখানে ’ল অ্যান্ড পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দায়িত্বে ছিলাম। পুরো কাজের একটি অংশ হচ্ছে পুলিশ। নিজস্ব পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে যেভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান চলে সেভাবে চলুক। আইন-কানুন পরিবর্তন হবে। আমরা সবসময় স্বপ্ন দেখি আমাদের দেশটি আরও উন্নত হবে। আর্থিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে উন্নত হবে। সেটা করতে গিয়ে খণ্ডিত একটি দায়িত্বও যদি হয় সেটাই করবো। উন্নত দেশে যেভাবে হয় সেভাবে আমাদের নাগরিক সুবিধা যেন পায় সেটার চেষ্টা করবো। জনসাধারণ যেন তাদের অধিকার ফিরে পায় তার জন্য কাজ করবো। পুলিশ প্রশাসনকে জনবান্ধব করতে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বসবো। এবং পুলিশের যারা সেবা পাচ্ছে তাদের সঙ্গেও বসবো। পুলিশ কতটুকু সেবা দিতে পারবে এবং সাধারণ মানুষ কতখানি চান? এছাড়া মানবসম্পদসহ কিছু সীমাবদ্ধতা তো রয়েই গেছে। ঘটনাচক্রে বাংলাদেশ সরকার আমাকে অনেকবার আমেরিকা, লন্ডন পাঠিয়েছে। পড়াশোনা করেছি। আমরা চাই আমাদের অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষা এটা কাজে লাগুক। 

দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জানা যাচ্ছে- আমাদের এই কমিশনে আরও সদস্য নিযুক্ত হবেন। তাদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করবো। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন এর সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের জন্মলগ্ন থেকে সম্পৃক্ততা আমাদের ছিল। কাজেই আমাদের একটি স্টেক (অংশীজন) আছে। যে কারণে দুদক প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং তখন থেকেই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এখন পর্যন্ত যে বিষয়গুলো দুদক কার্যকর করতে পারেনি সে বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো। প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাদের যে ব্যর্থতা সেগুলো চিহ্নিত করা। এর মধ্যে দুদকের নিজস্ব কিছু প্রতিকূলতা আছে। দুদকের কর্ণধার হিসেবে চেয়ারম্যানসহ যাদের নিয়োগ দেয়া হয় আমরা দেখেছি এ পর্যন্ত দলীয় প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে শীর্ষ পর্যায়ে নিয়োগ হয়েছে। দু’-একটি ঘটনা ছাড়া। এর ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় থেকে দলীয় প্রভাব এবং তার ফলে যারা নিযুক্ত হয়েছেন তাদের যে দলীয় আনুগত্য এর কারণে যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের ক্ষেত্রে দুদক কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। কীভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে কাজ করবো। পাশাপাশি দুদক আমলাতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তাদের ব্যক্তিগত আনুগত্য থাকে আমলাতন্ত্রের প্রতি। যে কারণে দুদকের যে সত্তা সেটার সঙ্গে একত্রিত হতে পারেনি। আমলাতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়ার একটি প্রবণতা আছে। এই প্রক্রিয়াকে ভাঙতে হবে। দুদকের অভ্যন্তরে যারা কর্মীবাহিনী তাদের অনেকেই সততার সঙ্গে কাজ করে থাকেন। কিন্তু তারা কোণঠাসা অবস্থায় থাকেন। এটা কেন এবং কীভাবে হয় সেটা দেখা হবে। দুদকের আইন এবং নীতিমালা এমনভাবে আছে যেগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাকে সংশোধন করা দরকার সেটা দেখা হবে এবং পরিবর্তন করা হবে। দুদকের নিজস্ব আইনের বাইরে, মানিলন্ডারিং, কর, সিভিল সার্ভিস আইন রয়েছে। এগুলোর প্রতি নজর দিতে হবে। দেশে এবং দেশের বাইরে যে অর্থ পাচার এক্ষেত্রে দুদকের সঙ্গে আরও কয়েকটি সংস্থা তাদের দক্ষতা, নিরপেক্ষতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি। তাদের দুদকের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা। আমরা যদি স্বপ্নের দুদক দেখতে চাই বা পেয়েও যাই এই সংস্কারের বাস্তবায়নের মাধ্যমে যদি হয় এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপাদান আমাদের রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্র এই দু’টি থেকে উত্তরণ করতে না পারলে দুদক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে- এটা আশা করা যাবে না। দুদকের সংস্কার কার্যক্রম দুদকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এতে আমাদের কাজে সুফল আসবে না। এখানে পরিধিটা বৃদ্ধির চেষ্টা করবো। আমলাতন্ত্রের দলীয়করণ প্রতিহত করার উপায় কি? সেটা দেখা হবে। 

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান এক প্রতিক্রিয়ায় মানবজমিনকে বলেন, বিচার বিভাগে থাকা অবস্থায় যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছি একইভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো। আরও বেশি এবং আমার সর্বোচ্চটা দিয়েই দায়িত্ব পালন করবো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d