Hot

যেভাবে গায়েব হয় সমবায়ের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ

রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ‘সমবায় ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি সোনার খোঁজ’ পাওয়া যাচ্ছে না, এমন বক্তব্য দেয়ার পর এ নিয়ে মতিঝিলের ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। ব্যাংকের সোনা কীভাবে গায়েব হলো সেটি নিয়ে কৌতূহল ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমেও আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
এদিকে গ্রাহকরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। টাকা উত্তোলনে আমানতকারীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সোমবার ব্যাংকটির হেড অফিস মতিঝিল শাখায় এ চিত্র দেখা গেছে।
কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর কোথায় কী অবস্থা রয়েছে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। সমবায় ব্যাংকের অবস্থা দেখতে গিয়ে জানলাম, ব্যাংকের ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের সম্পত্তি বেদখল হয়ে আছে। যারা একসময় ব্যাংকে ছিলেন তারাই বেদখল করে বসে আছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সমবায় ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতেও পারছে না। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার জন্যই ডুবতে বসেছে ব্যাংকটি। তার এই বক্তব্য দেয়ার পরপরই বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কৌতূহলী হয়ে ওঠেন।

যেভাবে গায়েব হলো সোনা: ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ বছরে দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো অনেকটা আড়ালে থাকা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডেও লুটপাটের মহোৎসব চলেছে। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাসের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে লুট হয়েছে ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ। 

এত স্বর্ণ কারা রেখেছিল-এই প্রশ্নের উত্তর জানতে সমবায় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় সূত্র জানায়, সমবায় ব্যাংকের লকার থেকে খোয়া যাওয়া ওই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের মালিক নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড। তারা তাদের গ্রাহকদের স্বর্ণ বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়েছিল, যার সুদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। 
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৭ সাল থেকে সমবায়ের সঙ্গে এমন বন্ধকী ব্যবসা করে আসছিল। ২০১২-১৩ সালের দিকে তারা কাস্টমারের স্বর্ণ মেরে লাপাত্তা হয়ে যায়। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে একটি ডিসপিউট মামলা করা হয়। মামলার রায় হলে তাদের সঙ্গে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু সেই স্বর্ণগুলো নিতে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ লিমিটেডের কেউ নিতে আসেননি। সবমিলিয়ে যথাসময়ে ঋণ শোধ না করায় এক পর্যায়ে ব্যাংক সেই সোনা নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় ব্যাংকের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, কো-অপারেটিভের সদস্যরা জমা রাখা সোনা ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে নিতে চাইলে নিতে পারবে। এ সুযোগটি নিয়েছিল কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা ভুয়া ব্যক্তিকে ওই সমিতির সদস্য সাজিয়ে ভুয়া রসিদ বানিয়ে ঋণ হিসেবে নেয়া টাকা জমা দিয়ে সোনা তুলে নেয়। 
ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানায়, যখন কো-অপারেটিভ লিমিটেডের কোনো সদস্য আসেনি তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগায় খোদ ব্যাংকের একটি চক্র। গ্রাহকের পরিচয়পত্র নকল করে সমবায় ব্যাংকে আবেদন করার নাটক সাজায় চক্রটি। স্বর্ণ ফেরত পেতে ১ হাজার ৯৮৪টি আবেদন করেন গ্রাহকরা। কিন্তু এরা সবাই ছিল ভুয়া গ্রাহক। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুদককে জানানো হলে তারা তদন্ত শুরু করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার আসামি করা হয়েছে সমবায় ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তাকে। যদিও এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি একরত্তি স্বর্ণও।

ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জালিয়াতির ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ব্যাংকের দুটি বিভাগ। একটি স্বর্ণ বিভাগ ও অপরটি হিসাব বিভাগ। সমবায় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় সার্বিক কাজের দায়িত্ব ও তত্ত্বাবধানে ছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডিজিএম বা উপ-মহাব্যবস্থাপক। তারা কোনো সমস্যায় পড়লে জিএম বা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত চিঠি দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু স্বর্ণ আত্মসাতের ঘটনা দুদক পর্যন্ত গড়ালেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি ডিজিএম। এ ঘটনায় দুদকের করা মামলায় সেই সময় গ্রেপ্তার হন সমবায় ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক আব্দুল আলিম, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) হেদায়েত কবীর, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার ও সমবায় ভূমি উন্নয়ন ব্যাংকের এস এস রোড শাখার ব্যবস্থাপক মো. মাহাবুবুল হক, প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ওমর ফারুক ও সিনিয়র অফিসার (ক্যাশ) নূর মোহাম্মদ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এসব ব্যক্তিরা ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৩১৬ জন গ্রাহকের বন্ধক রাখা সাত হাজার ৩৯৮ ভরি ১১ আনা সোনা আত্মসাতের চেষ্টা করেছে, যার তখনকার বাজার মূল্য উল্লেখ করা হয় ৪০ কোটি ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮৮ টাকা। এর মধ্যে, ভুয়া ব্যক্তিকে গ্রাহক সাজিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার সোনা তারা আত্মসাৎ করেন। এ মামলা এখনো চলছে।
সোমবার দুপুরে মতিঝিল শাখায় টাকা তুলতে আসেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, আমার ১০ ভরি সোনা রাখা ছিল। পাশাপাশি কয়েক লাখ টাকাও রাখা ছিল। সেটা তুললাম। এ ছাড়া সোনাও তোলার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলাম। কারণ কখন কী হয়ে যায় বলা যায় না। 
আরেক মহিলা গ্রাহক কুলসুম বানু বলেন, এই ব্যাংকে টাকা ও সোনা জমা রেখেছি। সোনা গায়েব হওয়ার কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। তাই জমানো টাকাগুলো তুলে নিলাম। পাশাপাশি সোনাও তুলে নিলাম। 

ব্যাংকটির এক পিয়ন বলেন, আগের অন্য যেকোনো দিনের তুলনায় আজ (সোমবার) সকাল থেকে অনেক গ্রাহক এসেছে। আগে এত আসতো না। সোনা গায়েব হওয়ার খবর প্রচার হওয়ার কারণে গ্রাহকরা শঙ্কিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। 
প্রতিষ্ঠানটির এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, করোনা মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই স্বর্ণ লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংকের ভল্ট থেকে তুলে নেয়া ওই ১২ হাজার ভরি স্বর্ণের মালিক ভুয়া ছিল। বর্তমানে ব্যাংকটির এমডি পদ শূন্য রয়েছে।
ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানুল গনি জানান, কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে ভুয়া গ্রাহকরা তুলে নিয়েছিল। পরে এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা করে, যা এখনো বিচারাধীন আছে। মূলত সোনার বাজার দর অনেক বেশি হওয়ায় লোন শোধ করেই ভুয়া ব্যক্তিরা সোনা তুলে নিয়ে লাভবান হয়েছিল। 

প্রসঙ্গত, সমবায় ব্যাংক হচ্ছে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। সমবায় আইনের বিধান অনুযায়ী এটি সমবায় খাতে অর্থ সরবরাহকারী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি সমবায় সমিতির ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দিতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d