যেভাবে হুমকির মুখে বাইডেনের পুনর্নির্বাচন
‘জেনোসাইড জো, গাজায় কত শিশু হত্যা করেছ?’ গত ২৩ জানুয়ারি ভার্জিনিয়া রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভাষণ দেওয়ার সময় ফিলিস্তিনপন্থি এক বিক্ষোভকারীর এমন চিৎকার তাঁর ভাষণকে ব্যাহত করে। এ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিক্ষোভ। আগামী নির্বাচনে বাইডেনের ফের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির ছাত্র বিক্ষোভ।
গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একশর বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে বিক্ষোভ। এ সময় দুই হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের জোয়ারে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাইডেন আগের চেয়ে আরও বেশি বাধার মুখে পড়ছেন বলে মনে হচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে সশস্ত্র হামলা চালানোর পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জেনোসাইড জো’ নামটি ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের প্রথম মাসগুলোয় বাইডেন যখন ইসরায়েল সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেওয়ার কথা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের আরব-মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং বাম-গণতান্ত্রিক ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন এটি স্পষ্ট ছিল না যে গাজায় যুদ্ধ এত দীর্ঘ মাস ধরে চলবে এবং অনেক মানুষ হতাহত হবে।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, যা তরুণ শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষের ঝড় বইয়ে দিয়েছে; যারা কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে। এই তরুণরা এবং তাদের কাছাকাছি দৃষ্টিভঙ্গির অন্যান্য সংখ্যালঘু যেমন– লাতিন, এশিয়ান, আফ্রিকান-মার্কিন, এলজিবিটি সম্প্রদায়ের সদস্যরা মূলত ডেমোক্র্যাট পার্টির ভোটার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। তাদের সমর্থন বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি করতে সক্ষম, যা পেলে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন বাইডেন।
বাইডেনের গাজা নীতি তাঁর পুনর্নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রভাবিত করবে– এমন আশঙ্কা ওই অঞ্চলে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই রয়েছে। এই অস্থিরতা প্রথম রাজনৈতিকভাবে প্রকাশ পায় প্রাইমারির সময়, যখন যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে উঠেছিল। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিনিধিদের অনেকে বাইডেনকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেননি।
বিভিন্ন জরিপে বাইডেনের জনপ্রিয়তা অনেকাংশে কমেছে। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমার পেছনে একটি কারণ হলো গাজার যুদ্ধ। যেহেতু তরুণদের একটি বড় অংশ মনে করে যে, ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলো ন্যায়সংগত নয়। মাত্র ২৮ শতাংশ মানুষ এর অনুমোদন দিয়েছিল। ৭১ শতাংশ অসম্মতি জানিয়েছিল এবং অসম্মতির পক্ষে তরুণদের অবস্থান অর্থাৎ যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম, তাদের অবস্থান বাড়তে বাড়তে ৮১ শতাংশে ঠেকেছে। বাইডেনের কূটনৈতিক দল যদি শিগগিরই গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে অগ্রগতি করতে না পারে তাহলে ক্যাম্পাসের অস্থিরতা বাইডেনের জন্য খারাপ দিন বয়ে আনতে যাচ্ছে।