Bangladesh

যেসব ঋণ কখনো নেওয়াই হয়নি, গ্রামবাসীদের তা পরিশোধ করতে বলছে ব্যাংক

২০২১ সালের ১৯ জুন মারা যান সালেহা বেগম। এর দুই বছর পর জনতা ব্যাংকের স্থানীয় শাখা থেকে গত ১০ আগস্ট দুটি পৃথক নোটিশ পান তার স্বামী ফয়েজ উল্লাহ। দুটি নোটিশেই তাকে দেড় লাখ টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়।

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মান্ডারিতলা গ্রামের অধিবাসী ফয়েজ উল্লাহ, এর কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। কারণ, কোনো ঋণ নেওয়া তো দূরের কথা– তিনি বা তার স্ত্রী কখনো ঋণের জন্য আবেদনও করেননি।

নোটিশ পাওয়ার পরই তড়িঘড়ি করে জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখায় ছোটেন ফয়েজ। সেখানকার কর্মকর্তারা তাকে জানান, ২০২১ সালে সালেহা ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার তিনটি ঋণ নেন, যার সবগুলোই খেলাপি রয়েছে।

এরমধ্যে দুটি ঋণ ছিল কৃষি ও গবাদিপশু পালনের জন্য, আর তৃতীয় ঋণটি ছিল করোনার প্রণোদনা প্যাকেজ সংক্রান্ত।

ফয়েজ জানতে পারেন, তার স্ত্রীর নামে দুটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে, যেখানে ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লেনদেন নথিভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, ঋণগ্রহীতার মৃত্যুর ১৫ মাস পরেও হয়েছে লেনদেন। এসব হিসাবে ঋণের কিস্তি হিসেবে টাকা জমাও দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের নথি অনুসারে, তার স্ত্রী যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিলেন, সেই একই পরিমাণ ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং একই প্যাকেজের তিনটি ঋণ খেলাপি করেছেন পেশায় কৃষক ফয়েজ উল্লাহ নিজেও।  

এ ঘটনা শুধু ফয়েজের বেলাতেই ঘটেনি।

একই গ্রামের আরো অন্তত ৩৩ ব্যক্তি খেলাপি ঋণ পরিশোধের দাবি সংক্রান্ত একই রকম নোটিশ পেয়েছেন। এদের সকলেই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী – কৃষক, দিনমজুর বা তাদের গৃহিণী – যারা কোনোদিন ব্যাংক ঋণের আবেদনই করেননি।

এসব ঘটনার একটি একক যোগসূত্র আছে– ঋণের নথিপত্রে, ফয়েজসহ সকলের ঋণের গ্যারান্টর বা জামিনদার হিসেবে আহমেদুর রহমান নামের এক গ্রামবাসীর উল্লেখ আছে।  

নোটিশ পাওয়া ১৪ জন গ্রামবাসী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে জানান, করোনাকালীন ১,০০০ টাকা সহায়তা পেতে তাদের ব্যাংকে নিয়ে যান আহমেদুর রহমান। এই টাকা পেতে তাদের ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়।

ফয়েজ অবশ্য জানান, আহমেদুর তাকে এবং তার স্ত্রীকে একটি ঋণের জামিনদার হতে অনুরোধ করেন। পরে এই দম্পতি কিছু কাগজে সই-ও করেছিলেন।

ইমাম হোসেন ও নাসরিন আখতার নামের আরেক দম্পতি আবিস্কার করেন, তাদের নামে এ ধরনের ছয়টি ঋণ নেওয়া হয়েছে। এমনকী ঋণের কিস্তি হিসেবে ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমাও করা হয়েছে, যদিও এসম্পর্কে কিছুই জানতেন না তারা।

ইমাম টিবিএসকে বলেন, ‘করোনাকালীন ১,০০০ টাকা অনুদান পাইয়ে দিতে আহমেদুর আমাদের ব্যাংকে নিয়ে যান। এরপর তিনি ও ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাদের বলেন, সহায়তা পেতে হলে একাউন্ট খুলতে হবে।’

৩৫ বছর বয়সী দিনমজুর করিম উদ্দিন জানান, নোটিশ পাওয়ার পর তিনি হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। তার স্ত্রী ও মায়ের নামে অবশ্য মাত্র একটি করে ঋণ নেওয়া হয়েছে। সেটুকুই যা বাঁচোয়া।  
 
নথি অনুসারে, ২০২১ সালের জুন মাসে করিম উদ্দিন ও তার মায়ের জন্য ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাংক। এর একমাস পর তার স্ত্রীর নামেও ঋণ মঞ্জুর করা হয়।

করিম বলেন, ‘সহায়তা পেতে কেন ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে- একথা জিজ্ঞেস করলে ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, স্বচ্ছতার জন্যেই এটা করতে হবে।’

আরেক নোটিশপ্রাপ্ত রেহানা বেগম জানান, ‘কর্মকর্তারা বলেন, সরকার আমাদের ব্যাংক হিসাবে ১,০০০ টাকা জমা দেবে, এজন্য ব্লাঙ্ক চেকেও সই নেওয়া হয়। এখন আমরা আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।’

মাণ্ডারিতলার গ্রামবাসীদের কাছে পাঠানো নোটিশগুলো অনুসারে, সবকয়টি ঋণ ২০২১ সালের মার্চ থেকে নভেম্বরের মধ্যে ছাড় করা হয়েছে।

ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিটন ঘোষ স্বাক্ষরিত নোটিশগুলোয় সতর্ক করে বলা হয়, ঋণগ্রহীতারা ১৫ দিনের মধ্যে সুদসহ সম্পূর্ণ ঋণের অংক পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোটিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণগ্রহীতাদের সাথে একাধিকবার সরাসরি দেখা করেছেন ও ফোনে কথা বলেছেন, কিন্তু তারপরও তারা ঋণ পরিশোধ করেননি। তাই ‘আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে, গ্রহীতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসবের মূলে যিনি

করোনা মহামারির সময় অনেক গ্রামবাসী তাদের চাকরি বা আয়ের উৎস হারান। এসময় তাদের করোনাকালীন সরকারি অনুদান পেতে সহায়তা করার উছিলায় ব্যাংকে নিয়ে যান আহমেদুর রহমান।  

একই গ্রামের বাসিন্দা আহমেদুরের বাড়বকুণ্ড বাজারে একটি দোকান আছে। তার মাধ্যমেই ব্যাংক কর্মকর্তারা এসব ব্যক্তির সাথে পরিচিত হন বলে উল্লেখ করেন মিটন ঘোষ।

ওই সময়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন ইমতিয়াজুল আলম, বর্তমানে তিনি ব্যাংকের লালদীঘি শাখায় কর্মরত আছে। ইমতিয়াজুল এবং সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এসব ঋণ প্রদানে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে জানান মিটন ঘোষ।

মঙ্গলবার ইমতিয়াজুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ জারি ও ছাড়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আহমেদুর রহমানের থেকে কোনো সুবিধা নেইনি। তিনি তার আত্মীয়স্বজনকে ব্যাংকে পাঠাতেন। তার কথার ভিত্তিতে, আমরা সেসব ব্যক্তির নামে ঋণ দেই। এখন আমরা বুঝতে পারছি, তিনি সরকারি অনুদান পাইয়ে দেওয়ার নাম করে এসব মানুষের সাথে প্রতারণা করেছেন।’

ঋণ ছাড়ের ক্ষেত্রে বিধিমালা ভঙ্গ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমতিয়াজুল আলম স্বীকার করেন যে, ‘প্রক্রিয়ায় কিছু ঘাটতি ছিল’।

তিনি আরো বলেন, ‘এসব ঋণের সুদ ৪ শতাংশ হওয়ায়, রহমান হয়তো লাভবান হয়েছে। ব্যাংকে তার ভালো অংকের এফডিআর থাকায় আমারা তাকে বিশ্বাস করেছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, বৃহস্পতিবারেই সকল খেলাপি ঋণ পরিশোধ করে দেবেন।’

কিন্তু, বৃহস্পতিবার মিটন ঘোষ জানান, কোণো ঋণই এখনো পরিশোধ করা হয়নি।

সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, এসব ঋণের জামিনদার আহমেদুর রহমান, সেই সবকিছু জানে।

এদিকে নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই ঋণের বিষয়ে জানতে আহমেদুরের বাড়িতে ভিড় করছেন গ্রামের মানুষজন। কিন্তু, তিনি কোনো দায়িত্ব নিতে নারাজ। বরং, সব দোষ দিচ্ছেন ব্যাংককে।

‘আমি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। তারা আমার গ্রামের বাসিন্দা ছিল বলে, আমি জামিনদার হিসেবে ব্যাংকের অনুরোধে কাগজপত্রে সই করেছিলাম। এজন্য ব্যাংক দায়ী। গ্রামবাসীরা ঋণ নিয়ে কিস্তি পরিশোধ করেনি। এখন তারা মিথ্যা বলছে,’ রহমান বলেন।

রহমানের কাছ থেকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে গ্রামবাসী বিষয়টি মিমাংসা করার উদ্দেশ্যে পুলিশ ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের কাছে যান।

টিবিএস-এর সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জালাল উল্লাহ বলেন, ‘কৃষকদের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ পাওয়ার পর আমি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন তারা কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঋণ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংক কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।’

‘শুধু ব্যাংক কর্মকর্তারা জানেন কীভাবে ঋণ দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে ব্যাংক আমাদের কাছে এসে তাদের গ্রাহকদের ঠিকানা যাচাই করে দেখে যে তারা আমাদের এলাকায় থাকেন কি-না।’

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদাকাতুল্লাহ মিয়াজাই মনে করেন, ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আহমেদুর রহমানের যোগসাজশ রয়েছে। ‘আমার এলাকায় আমরা এমন অন্তত ৫০টি অভিযোগ পেয়েছি,’ তিনি বলেন।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এ শাখার অধীনে ৫০–৫৫ জন এমন সন্দেহজনক ঋণের শিকার হয়েছেন।

সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ টিবিএসকে বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছি। তারা সবাই বলেছেন, তারা ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেননি। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে আমরা তাদের দাবির সত্যতাও পেয়েছি।’

এখন যা বলছে ব্যাংক

জনতা ব্যাংকের বাড়বকুণ্ড শাখার ব্যবস্থাপক মিটন ঘোষ টিবিএসকে বলেন, ‘আমাদের কাছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সুপারিশসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র রয়েছে। আর ঋণগ্রহীতারা নিজেরাই তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলেছেন।’

তিনি বলেন, ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক আহমেদুর রহমান ব্যাংকটির সঙ্গে বেশ কয়েকজন ঋণগ্রহীতার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘ঋণ নেওয়ার পর ঋণগ্রহীতারা হয়তো আহমেদুর রহমানের সঙ্গে ওই টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু, এখন তাদের নোটিশ দেওয়ার পর তারা ব্যাংককে দায়ী করছেন।’

‘ঋণ বিতরণের সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না। যদিও সমস্ত নথিপত্র ঠিকঠাকই রয়েছে, তবে ঋণ পর্যবেক্ষণে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে,’ তিনি বলেন।

এক সপ্তাহ ধরে অনেক চেষ্টা করেও চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনতা ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক নুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মঙ্গলবার তিনি ফোন ধরলেও প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর ফোন কেটে দেন।

কল, ক্ষুদেবার্তা এবং হোয়াটসঅ্যাপ-এ বার্তার মাধ্যমে তার সঙ্গে আরেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এরপর তিনি স্পষ্টতই এ প্রতিবেদকের ফোন নম্বরটি ব্লক করে দেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d