Hot

যে আদালতে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি, সেই আদালতে হাসিনার বিচার চলছে

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় এক ছাত্রের বাবা বুধবার এই আবেদন করেছিলেন।

অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘আইসিটিতে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে’ বলে বুধবার জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন,‘আইসিটিতে বিচারের উদ্যোগ নেয়া হবে এটা ক্যাটাগরিক্যালি বলতে পারেন। এই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আছে, এই বিচারের আওতায় আমাদের সাবেক সরকার প্রধানসহ অন্য যারা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে আমরা তাদের কোনো ছাড় দেবো না।’

প্রশ্ন উঠছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য করা এই আইনে কি শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব? আইনটিতেই বা কী বলা আছে?

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারের একটি বিষয় ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হবার পর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার।

১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের অধীনেই অভিযুক্তদের তদন্ত এবং বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়।

মূলত ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্যই এই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল।

তবে ২০১০ সালের আগে আইনে কারো বিচার বা সাজা হয়নি।

২০০৯ সালে সংসদ অধিবেশনে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার’ বিষয়ে একটি মৌখিক প্রস্তাব পাশ হয়।

পরবর্তী সময়ে ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীকেও বিচারের আওতায় আনা এবং স্বাধীনভাবে ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ পরিচালনার বিধান যুক্ত করে আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়।

এর মাধ্যমেই ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।

যা আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে
১৯৭৩ সালে প্রণীত আইনের ৩(১) ধারায় বলা আছে, আইনের ২ নম্বর উপধারায় উল্লিখিত যেকোনো অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী [বা সংস্থা] বা কোনো সশস্ত্র, প্রতিরক্ষা বা সহায়ক বাহিনীর কোনো সদস্যের জাতীয়তা যাই হোক না কেন, তা যদি এই আইন প্রবর্তনের আগে বা পরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে সংঘটিত হয়, তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তার বিচারের এবং শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা থাকবে।

অর্থাৎ মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশন বিরোধী কাজসহ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যেকোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা দল, সেনাবাহিনী কিংবা তাদের সহযোগী সশস্ত্রবাহিনীর বিচারের ক্ষমতা ট্রাইব্যুনালকে দেয়া হয়েছে।

এই আইনের অধীনেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার করা সম্ভব বলে জানান বাংলাদেশ সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন,‘১৯৭৩-এর যে আইনটা আছে, ওখানে ক্রাইম এগেইন্সট হিউম্যানিটির (মানবতাবিরোধী অপরাধ) সংজ্ঞা অনুসারে এটি অফেন্স (অপরাধ) হিসেবে আসে, অন্যগুলোর মধ্যে না।’

আইন

অর্থাৎ, আইনের ৩ নম্বর ধারার ২(ক) উপধারায় উল্লিখিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা যেতে পারে।

এই ধারা অনুযায়ী, হত্যা, নির্মূল, দাসত্ব, নির্বাসন, কারাবরণ, অপহরণ, বন্দীকরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ বা কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত অন্যান্য অমানবিক কাজ বা রাজনৈতিক, জাতিগত বা ধর্মীয় ভিত্তিতে নিপীড়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এই ট্রাইব্যুনালে বিচার করা যাবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করেছেন রানা দাশগুপ্ত। তবে গত ১৩ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদেরও সাধারণ সম্পাদক।

রানা দাশগুপ্ত বলেন,‘এই আইনের একটা লম্বা প্রেক্ষাপট আছে। এটা করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। সেখানে যারা যুদ্ধাপরাধ করেছে, তাদের বিচার করার জন্য এই আইনটি করা হয়।’

ফলে এখন যে প্রেক্ষাপটে বিচারের কথা বলা হচ্ছে, তা প্রযোজ্য হয় না বলে তিনি মনে করেন।

তবে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ মনে করেন, আইনে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারে কোনো বাধা নেই।

তিনি বলেন, যে আইনটা এর আগের সরকার সংশোধন করেছিল, সেখানে আইন যেভাবে আছে সেই বিবেনায় ক্রাইম এগেইন্সট হিউম্যানিটি বা জেনোসাইড এসব বিষয় সেখানে বিচার করার সুযোগ আছে।

এছাড়াও ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং কোন কোন অপরাধে বিচার করা যাবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে আইনে বলা এবং ব্যাখ্যা দেয়া আছে বলেও মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।

সেক্ষেত্রে ‘এ নিয়ে কোনো বিতর্কের সুযোগ নেই’ বলেই মত তার।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যত মামলা

গত ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলিফ আহমেদ সিয়াম চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই দিন পর, অর্থাৎ সাত আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নয়জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে মামলা করা হয়।

সিয়ামের বাবা বুলবুল কবিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী এমএইচ তানিম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেন।

মিরপুরে কলেজ শিক্ষার্থী ফয়জুল ইসলাম রাজনকে হত্যার অভিযোগে একইদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

এছাড়াও রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় শাহাবুদ্দিন নামে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগে বৃহস্পতিবার শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের খবর আসে গণমাধ্যমে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor