যে কারণে গ্রিসে পাড়ি জমাচ্ছে হাজার হাজার ইসরাইলি
হামাসের আল আকসা তুফান অভিযান শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার ইহুদি ইসরাইল থেকে পালিয়ে গ্রিসে যাচ্ছে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে বলে হিব্রু ভাষার একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
সম্প্রতি ‘ডি মার্কার’ নামে ওই সংবাদমাধ্যমটি হারেৎজ পত্রিকার অর্থনৈতিক খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে গ্রিসে ইসরাইলিদের অভিবাসন সম্পর্কিত এই নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে।
এছাড়া ইরানের বার্তা সংস্থা তাসনিম’র হিব্রু বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাজার হাজার ইসরাইলি পরিবার এখন গ্রিসকে তাদের অস্থায়ী বা স্থায়ী আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর এ ব্যাপক সংখ্যক ইসরাইলির গ্রিসে পাড়ি জমানোর কারণে সেখানে অ্যাপার্টমেন্ট কেনার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় আবাসনের পরিমাণ কম থাকায় বাড়িভাড়াও অনেক বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি গ্রিসের ইভা দ্বীপের এক রিয়েল এস্টেট এজেন্সির মালিকের সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন দৈনিক ‘ডি মার্কার’ পত্রিকার ৬৫ বছর বয়সি প্রতিবেদক ডর রউফম্যান।
ওই সাক্ষাতকারে রিয়েল এস্টেট এজেন্সির মালিক বলেছেন, ইহুদি অভিবাসনের ঢেউ রাজধানী এথেন্সের দিকে। তবে আপনি কিবসিয়া এবং গ্লিভাদায় ইসরাইলি অভিবাসীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপস্থিতি দেখতে পাবেন। বর্তমানে এথেন্সের উত্তরে শত শত ইসরাইলি পরিবার পাওয়া যাবে, যারা নিজেদের জন্য এরই মধ্যে একটি কিন্ডারগার্টেন এবং একটি ইহুদি স্কুল তৈরি করেছে।
ওই প্রতিবেদনের আরেকটি অংশে বলা হয়েছে, এখানে আসা ইহুদিদের ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই এবং তারা এখানেই থাকতে এসেছে।
এথেন্সে বসবাসকারী এক ইসরাইলি এবং গ্রিসে ইসরাইলিদের একটি সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ম্যানেজার তানিয়া ক্রোটেক্সি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আমি ইসরাইলে ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না’।
তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে এসেছি, তখন ইসরাইলিদের সংখ্যা ছিল মাত্র ৫০। কিন্তু গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় দেড় থেকে দুই হাজার সদস্যের তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি, যাদের গণনা করা যায়। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে এমন অনেক ইহুদি রয়েছে, যারা মোটেই তৎপর নয় এবং তাদের সংখ্যাই অনেক বেশি।’
তানিয়া ক্রোটেক্সি আরও জানান, ইসরাইলের অনেক পরিবার তাদের স্বামী যুদ্ধে যাওয়ার পর এখানে এসেছেন। তাই একাধিক সন্তান আছে এমন নারীদের অ্যাপার্টমেন্ট খোঁজা এখানে এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে ইসরাইলি সাংবাদিক ডর রউফম্যান বলেন, যখন আমি এথেন্সের একটি ক্যাফের গ্রিক মালিককে তার ইসরাইলি বন্ধুদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি, তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি এখন সময় এসেছে তোমরা (ইসরাইলিরা) আমাদের দেশ ছেড়ে সম্পত্তি কেনার জন্য অন্য কোনো দেশে চলে যাও। তোমাদের জন্য অন্য কোথাও অভিবাসন করাই ভালো, গ্রিসে নয়।’
আমি তখন তাকে জিজ্ঞাসা করি, আমাদের ওপর তোমাদের এত রাগ কেন? এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ান নাগরিকদের ব্যাপারে আপনি কেন এই রাগ বা ক্ষোভ অনুভব করছেন না? তখন তিনি উত্তরে বলেন, আমি হয়তো রাশিয়ানদের পছন্দ নাও করতে পারি। কিন্তু আপনাদের (ইসরাইল) সরকার ফিলিস্তিনে বড় ধরনের অপরাধযজ্ঞে লিপ্ত। যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’