Hot

রক্তাক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

রোববার রাতের উত্তেজনা শেষে গতকাল দিনভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। দফায় দফায় হামলা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। বহিরাগতদের নিয়ে চালানো ছাত্রলীগের হামলা থেকে বাদ যাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। দিনভর চলা সংঘর্ষ থামাতে কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। সন্ধ্যায় উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে সহিংসতা থামাতে নামানো হয় পুলিশ। এ সময় তৎপর হয় প্রশাসনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা হয়েছে মেডিকেলের জরুরি বিভাগে। 

হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগের নেতাদের সামনের সারিতে দেখা গেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ বিকাল ৩টায় সারা দেশে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।রাজু ভাস্কর্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ চলাকালে দুপুর সোয়া ২টার দিকে খবর আসে বিজয় একাত্তর হলে শিক্ষার্থীদের আটকে রেখেছে ছাত্রলীগ।

বিজ্ঞাপন এরপর টিএসসি থেকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলে গেলে ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়। ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে হলের অভ্যন্তরে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হলে মোটরসাইকেলও ভাঙে। এ সময় শিক্ষার্থীরা পার্শ্ববর্তী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, পল্লী কবি জসীমউদ্দীন হল ও মাস্টার দা’ সূর্যসেন হল থেকেও বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ছাত্রলীগ বারবার পিছু হটছিল। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু হলের পকেট গেইট দিয়ে প্রবেশ করেন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে বিজনেস ফ্যাকাল্টির সামনে থেকে হামলা চালায় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ভাঙচুর করা হয় সূর্যসেন হলেও।

বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে মধুর ক্যান্টিন থেকে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মহানগরের নেতাকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা মল চত্বর থেকে ভিসি চত্বরের দিকে পিছু হটে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা, রড, হকিস্টিক, পাইপ, স্টাম্প নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ভিসি চত্বরে ছাত্রলীগের হামলায় বাদ যাননি নারী শিক্ষার্থীরাও। ধরে ধরে শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছে তারা। বিআরটিসি গাড়িতে আশ্রয় নেয়াদেরও মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত ও ফুলার রোড দিয়ে পিছু হটে। তখন হেলমেট পরিহিত কিছু ব্যক্তিকে খুবই মারমুখী অবস্থায় দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য থাকলেও তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন। ভিসি চত্বরের দখল নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন নেতাকর্মীরা। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, জামায়াত-শিবির ও বিএনপি’র চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন হলে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রলীগের অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, রাজাকার স্লোগান দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা কলঙ্কিত করেছে।

আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করেছি। আন্দোলনকারীরা সরে গেলে টিএসসি, ভিসি চত্বরসহ পুরো ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তারা স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করতে থাকে। টিএসসি’তে আবারো আসতে থাকে মহানগর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এরপর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবারো মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে এগোতে থাকেন। এ সময়  বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা থালাবাসন বাজিয়ে ছাত্রলীগকে ভুয়া, টোকাই ও গো-ব্যাক স্লোগান দেন। এর আগে দুপুর ১২টার থেকে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় তারা ‘তুমি কে আমি কে- রাজাকার রাজাকার, কে বলছে কে বলেছে সরকার সরকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি নই, আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও আশেপাশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন।

তপ্ত দুপুরের রোদে পুড়ে দাবি আদায়ে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে কোটা সংস্কারে সংসদের বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করে আইন পাস করার দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে একই স্থানে বেলা ৩টায় ছাত্রলীগের প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। মধুর ক্যান্টিনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। রাজু ভাস্কর্যের বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি ২ শতাংশ নিয়ে পড়ে আছেন। ৯৮ শতাংশকে বানিয়ে দিলেন রাজাকার। একটা দেশের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজাকার হতে পারে বা। আপনার বক্তব্য কল্পনাপ্রসূত। অতিদ্রুত বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পদ যেদিন চলে যাবে তখন কেউ ভাইকে চিনবে না। আপনাদের আহ্বান জানাই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন। ছাত্রলীগের বন্ধুদের কাছে জানতে চাই, আপনার লেখাপড়া আর কতোদিন? পায়ের জুতা নেতাদের পেছনে ক্ষয় না করে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করুন। সময় গেলে আর করার কিছুই থাকবে না। পদ চলে গেলে হলের সিটটাও থাকবে না। 

প্রথম দফার সংঘর্ষ শেষে বিকাল ৫টার দিকে শহীদুল্লাহ হলের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুইপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০টির অধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দেখা যায় ছাত্রলীগকে। সংগঠনটির নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি-সোটা, রড, স্টাম্প, হকিস্টিক দিয়ে হামলা চালায়।

সংঘর্ষের সময় শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা ভিতরে অবস্থান নেন। অন্যদিকে ছাত্রলীগ ঢাকা চানখাঁরপুল মোড় ও দোয়েল চত্বরের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। শিক্ষার্থীরাও পাল্টা হিসেবে ইটপাটকেল ছুড়ে ছাত্রলীগের দিকে। দুইপক্ষের সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের আরেকটি গ্রুপ ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে গিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রলীগের হামলায় মেডিকেলের ভেতর আতঙ্ক শুরু হয়। আহত হয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ একই সময়ে শহীদ মিনার, ফুলার রোডসহ আশপাশের এলাকায় সন্দেহ হলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। দুইপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়েল চত্বর দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে পুলিশ। ডিএমপি যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এ সময় শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের ভেতরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। অন্যদিকে পুলিশকে অনুরোধ করেন বহিরাগতদের সরানোর। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন।

শিক্ষার্থীরা ‘দালাল দালাল’ ও ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। তারা বহিরাগতদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান। কিছুক্ষণ পর আসেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. মাকসুদুর রহমানও। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের হাতে সবকিছু নেই। সুযোগ থাকলে আমরা বহিরাগতদের আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আমরা হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হলের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে বহিরাগত যারা আছে তাদের বের করার ব্যবস্থা করবো। শিক্ষার্থীদের হলে ঢোকানোর আগে বহিরাগতদের বের করাটা কঠিন হচ্ছে। রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে ৩০ গজ দূরে একটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) নিয়ে কয়েকশ’ পুলিশ সদস্য অবস্থান নিয়ে ছিলেন। এর আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হল গেট থেকে দোয়েল চত্বরের দিকে নিয়ে যায় পুলিশ। এদিকে আহত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে প্রক্টর বলেন, কত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান এখন আমরা বলতে পারি না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আহত সব শিক্ষার্থীকে সুচিকিৎসা নিশ্চিতের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভা থেকে পাঁচ সিদ্ধান্ত: এদিকে বিকাল ৫টায় ভিসি প্রফেসর ড. এএসএম মাকসুদ কামালের বাসভবনে বসে প্রভোস্ট কমিটির জরুরি সভা। ভিসি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) প্রফেসর  ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) প্রফেসর ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিভিন্ন হল/হোস্টেলসমূহের প্রাধ্যক্ষ/ওয়ার্ডেনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেগুলো হলো- শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব হলে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন; প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিধানে সার্বক্ষণিকভাবে হলে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন; হলসমূহে কোনো বহিরাগত অবস্থান করতে পারবেন না; যেকোনো ধরনের গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানানো হচ্ছে; সকলকে নাশকতামূলক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য বলা যাচ্ছে। কেউ নাশকতামূলক কাজে জড়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রভোস্ট কমিটির সভা শেষে ভিসি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় হল প্রভোস্টরা হলে অবস্থান করবেন। যাবতীয় দিকনির্দেশনা আমরা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিয়ে দেবো। 

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে গভীর রাতে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাজপথে: এদিকে রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। তারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল থেকে বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার-রাজাকার’, ‘এই বাংলার মাটি, রাজাকারের ঘাঁটি’ ইত্যাদি স্লোগান  দিতে থাকেন। এক সময় খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, ঢাবির মাস্টারদা সূর্যসেন, বিজয় একাত্তর ও মুহসিন হলের শিক্ষার্থীদের গেটে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। পরে তাদের ছাড়িয়ে নিতে অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরা বিজয় একাত্তর হলের সামনে জড়ো হন। রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেগম রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা গেটের তালা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসেন। পরে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসিন হল, সূর্যসেন হল, বিজয় একাত্তর হল, জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু হল, জসীম উদ্দীন হল, শহীদুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল, এফএইচ হল, একুশে হল এবং রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন টিএসসিতে। এ সময় তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারও বাপের না’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘আমার স্বাধীন বাংলায়, একের কথা চলে না’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি-বাঙালি’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারও বাপের না’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলার জেরে রোববার রাত ১১টার দিকে বিক্ষোভের ডাক দেয়া হয়েছে। এ সময় ছাত্রলীগ মধুর ক্যান্টিনে জড়ো হলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে বহিরাগত ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। রাত দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে গেলে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ। আহত হয়ে ২৯৮ শিক্ষার্থী ঢামেকে, ভর্তি ১২ জনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ২৯৩ জন আহত হয়েছেন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকহা) চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার পর থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আহতদের উদ্ধার করে ঢামেকহা’র জরুরি বিভাগে আনা হয়। 

ভর্তি ১২ জন হলেন- ইয়াকুব, কাজী তাসনিম ফেরদৌস, অমি, আমিনুর, শুভ, গিয়াসউদ্দীন, নাসির, অপি, মেহেদী, সিয়াম, হাসিব, ফাহাদ। এ ছাড়া ঢামেকে আসা আহতদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- সায়মা, তামান্না, ফাহমিদা, এসকায়া, মাহমুদুল হাসান, নাজিব, মাসুদ, জাহিদ, সাখাওয়াত, সায়মন, সাকিব, ইভা, ইমরান, কাজী তাসনিম, সাকিল, ইভা, ফাহিম, এনামুল, শাকিল, হামজা, রিফাদ রশিদ, জহির, তিশা, রানা, সুজন, রফিক, সীমা, ইমু, ইসরাত, জুয়েল, জুবেল, লিখন, সাজ্জাদ, আভানা, নাঈম, সাব্বির, রায়হান, কাইয়ুম, মেঘ বাসু, সাকিব, ফাহিম, আহসানুল্লাহ, লাবিব, তানভীর, ফাহমিদুল, রেয়োম, শাকিল, প্রিয়া, সাব্বির, মাসুম, ফাহিন, ইমন, আবু যাহেদ, শুভ, সাকিব, মাহবুব, জুনায়েদ, মুরাদ, মেহেদী আসাদুল্লাহ, খোকন, উজ্জ্বল, অরপি, ইতি, রাফিম, সিয়াম, অমি, জামিয়া, সুমন, রিজভী, আবিদ ও তরিকুল। এ ছাড়াও চিকিৎসা নিতে আসা বাকি শিক্ষার্থীর নাম জানা যায়নি

সূত্রগুলো বলছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। তবে বেশির ভাগই আহত হয়েছেন আন্দোলনকারীদের মধ্যে থেকে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল জখম। মারামারির ঘটনায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। শিক্ষার্থীদের চিৎকার-চেচামেচি দেখে অনেক রোগী কান্না করে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত আনসার সদস্য। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাসপাতালের ভেতরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনার ঘটে। এতে মেডিকেলের ভেতরে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: এদিকে রাজধানীর নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রাখে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দুপুরের এই অবরোধে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ট্রাফিক পুলিশের গুলশান বিভাগ জানিয়েছে, বেলা ২টার দিকে আফতাব নগরের সামনের সড়ক অবরোধ করেন ব্র্যাক ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ৪টার দিকে নতুন বাজারের সড়কে নেমে যান চলাচল আটকে দেয় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পৌনে ৫টায় নতুন বাজারের অবরোধকারীরা সড়ক ছেড়ে দেন। এ ছাড়া কুড়িল এলাকাতেও কিছু শিক্ষার্থী সড়কে বিক্ষোভ করেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ’ এ বলা হচ্ছে, নতুন বাজার, আফতাব নগর ও যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে পৃথকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে ব্র্যাক, নর্থসাউথ, ইস্টওয়েস্ট ও ইউআইইউ’র শিক্ষার্থীরা।

সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা বিরোধীদের বিক্ষোভ আজ

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে সারা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরের সামনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দাবি মানা না হলে বিক্ষোভ থেকে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণারও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এদিন ঢাবি এলাকায় দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষের পর সন্ধ্যা ৬টার দিকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে সাঁজোয়া যানসহ কয়েকশ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ সময় পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। সংঘর্ষের পর কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা শহীদুল্লাহ হলের গেটের ভেতরে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পরপরই তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এরমধ্যে হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ জাভেদ হোসেন শিক্ষার্থীদের হলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখান করেন। রাতে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হলের ভেতরে ও গেটের কাছে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন। এছাড়া কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি অংশ হলের পাশের চানখারপুল মোড় ও শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটের আশেপাশে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রাত ৯টার দিকে পুলিশ সদস্যরা সাঁজোয়া যানসহ হলের সামনে থেকে সরে দোয়েল চত্বরের দিকে অবস্থান নেন। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোটা আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল দোয়েল চত্বরের দিকে আসলে প্রতিনিধিরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। কোটা আন্দোলকারীদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করতে যেতে চাইলে পুলিশ তাদেরকে নিষেধ করেন। পরে তারা দোয়েল চত্বরেই সংবাদ সম্মেলন করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা মনে করি এই হামলা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আমরা গত কয়েকদিন ধরে বলছিলাম সরকার, আইনশৃখলা বাহিনী এবং ছাত্রলীগ পরিকল্পনা করছে এই আন্দোলনকে সহিংসভাবে দমন করার জন্য। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এভাবে এই আন্দোলনকে দমন করা যাবে না। আমাদের কর্মসূচি ছিল শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর অবমাননাকর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে। আমরা এখনো বলতে চাই, আমরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করি। 

ঢাবি শিক্ষার্থী নাহিদ আরও বলেন, আমরা সারাদেশের মানুষের কাছে আহ্বান করব, আপনারা নেমে আসুন। শিক্ষার্থীরা নেমে আসুন, সাধারণ মানুষ নেমে আসুন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার আদায় করুন। সারাদেশের সব মানুষকে আহ্বান করব আমাদের মিছিলকে বড় গণজমায়েত তৈরি করুন। বৃহত্তর গণআন্দোলনের দিকে আমাদের যেতে হবে। এটা আর ছাত্রদের আন্দোলন নাই, এই আন্দোলনে যখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উস্কানি দিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে এ আন্দোলনে নেমে আসতে হবে। এরপর আমরা সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করব। 

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদের বৈধ পরিচয়পত্র থাকার পরও পুলিশ আমাদের শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলনের অনুমতি দেয় না। অন্যদিকে বহিরাগত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিনভর ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তুলে। তিনি বলেন, সারা দেশে নির্মমভাবে আমাদের ওপর হামলা চালানো হলো। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং প্রক্টর আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor