রঙিন আইফোন ১৬
নিয়মের ব্যত্যয় না ঘটিয়ে অ্যাপল মঞ্চে উপস্থিত সাদামাটা অ্যাপলপ্রধান টিম কুক। জানালেন, দেখালেন কী কী উদ্ভাবন নিয়ে এবারে হাজির আইফোন। শুধু আইফোন নয়, অ্যাপল ওয়াচ ও এয়ারপডস নিয়ে উপস্থিত ভক্তদের একেবারে মন্ত্রমুগ্ধ করে তোলেন তিনি। লিখেছেন সাব্বিন হাসান
অ্যাপল এবার নিজেকে ভেঙে দৃষ্টিনন্দন রং, সংস্করণ আর বৈচিত্র্যের সমন্বয় করেছে। যেন তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
স্মার্ট ঘড়ি
অ্যাপল ওয়াচ সিরিজ ১০ মডেলের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন টিম কুক। সিরিজ ১০ স্মার্ট ঘড়ির নানা দিক তুলে ধরেন অ্যাপলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জেফ উইলিয়ামস। স্মার্ট ঘড়ির সিরিজ ১০ মডেলের পর্দা অতীতের যে কোনো অ্যাপল ওয়াচের মধ্যে আকারে বড়।
আগের সব মডেলের তুলনায় ৩০ শতাংশ বড় পর্দায় তুলনামূলক বেশি ই-মেইল বা মেসেজ উপভোগ করতে পারবেন অ্যাপলভক্তরা। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ও এলইডি ডিসপ্লে ছাড়াও ঘড়ির পর্দা ৪০ শতাংশের বেশি উজ্জ্বলতা পেয়েছে। স্মার্ট ঘড়ির অন্যতম দুটি বৈশিষ্ট্য উজ্জ্বল পর্দা ও গড়নে পাতলা।
ক্যাপচার বাটন
আইফোনের এবারের সিরিজে আইফোন ১৬, ১৬ প্লাস, ১৬ প্রো ও প্রো ম্যাক্স– চারটি মডেলেই রঙের বৈচিত্র্য ও স্টোরেজের তারতম্য আনা হয়েছে। মানোন্নত সুবিধার আইপড ও অ্যাপল (ওয়াচ) ঘড়িতেই দৃশ্যমান পরিবর্তন এনেছে অ্যাপল।
ডিজিটাল বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন ঘোষণায় আইফোন ১৬ সিরিজের প্রতিটি মডেলের ডিসপ্লে অতীতের যে কোনো মডেলের তুলনায় আকারে বড়ই হবে। অর্থাৎ উচ্চতায় বড় হবে। আইফোনের নতুন সিরিজে ব্যাটারি পরিষেবায় স্বাচ্ছন্দ্য বাড়বে। ফটোগ্রাফিতে চারটি মডেলেই মিলবে ‘ক্যাপচার’ বাটনের দুর্দান্ত সুবিধা। ক্যাপচার বাটনটি মূল ডিসপ্লের নিচের অংশে জায়গা পেয়েছে। লক না খুলে সরাসরি ক্যাপচার বাটনে ক্লিক করলেই ক্যামেরা অন হয়ে যাবে। শুধু ক্যাপচার নয়; ছবি তোলার প্রয়োজনীয় সব ফিচারই ওই বাটন দিয়ে সম্পাদনা করা যাবে সহজে।
ডিসপ্লের বেজেল আরও পাতলা করা হয়েছে ১৬ সিরিজের সব মডেলে। নন-প্রো ১৬, ১৬ প্লাস মডেল দুটিতে আকার বা বেজেলে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। নন-প্রো মডেল দুটির ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট ৬০ হার্টজ।
ক্যামেরার লেন্সে আবার দুর্দান্ত কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান। নতুন সিরিজের ক্যামেরা সজ্জায় অ্যাপল ফিরিয়ে আনছে পাঁচ বছর আগের আইফোনের ক্যামেরার ধাঁচ। অর্থাৎ লেন্স দুটো লম্বালম্বিভাবে থাকবে। দুটি লেন্সের একটি ৪৮ মেগা পিক্সেলের মেন সেন্সর, অন্যটা ১২ মেগা পিক্সেলের আলট্রাওয়াইড লেন্স।
আইফোন ১৬ প্রো আর প্রো ম্যাক্স মডেলে আগের মতোই তিনটি ক্যামেরা। ৪৮ মেগা পিক্সেলের প্রধান ক্যামেরা, ৪৮ মেগা পিক্সেলের আলট্রাওয়াইড আর একটা ফাইভ-এক্স অপটিক্যাল জুম লেন্স সবার নজর কেড়েছে।
চারটি মডেলেই ব্যাটারির ক্ষমতা সামান্য বাড়ছে। সঙ্গে প্রো মডেল দুটিতে ৪০ ওয়াটের চার্জিং সাপোর্ট, ২০ ওয়াটের ম্যাগসেফ চার্জিং তো থাকছেই। আইফোন ১৬ আর প্লাস মডেলে থাকছে যথাক্রমে ২৭ ওয়াট ও ১৫ ওয়াট সমর্থিত চার্জিং সিস্টেম।
নতুন মডেলে প্রসেসর আপডেট হবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিবারের মতো এবারও গতি বাড়ছে প্রসেসরে। আইফোন ১৬ ও প্লাস মডেলে থাকবে বায়োনিক এ১৮ চিপ। সময়ের সবচেয়ে যোগ্য অ্যাপ্লিকেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আইফোনের নতুন চারটি মডেলেই থাকবে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স। ছবি ছাড়াও নিত্যনতুন সব ফিচার ও অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারকে বহুমাত্রিক করবে অ্যাপল এআই।
অ্যাপল এয়ারপডস
নতুন এয়ারপডস এখন ভক্তদের অপেক্ষায়। এইচ-ফোর চিপসহ এয়ারপডস ফোর মডেলের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওপেন-ইয়ার ডিজাইন ছাড়াও নতুন এয়ারপডসের অডিও হবে আগের তুলনায় স্বচ্ছ ও নিখুঁত। ইউএসবিসি চার্জিং কেসের এয়ারপডসে থাকছে অ্যাকটিভ নয়েজ ক্যানসেলেশন (এএনসি) সুবিধা।
প্রাথমিক মানের এয়ারপডস-ফোর-মডেলের দাম ১২৯ ডলার। আর এএনসি সুবিধার এয়ারপডসের দাম ১৭৯ ডলার।
আইফোন ১৬ ও ১৬ প্লাস মডেলের ক্যামেরার মতো বাটনের মাধ্যমে ছবি তোলায় দুর্দান্ত সুবিধা এবং ভিডিও ফিচার বাড়তি আকর্ষণ। ৬.১ ইঞ্চি স্ক্রিনের আইফোন ১৬ মডেলের দাম পড়বে ন্যূনতম ৭৯৯ ডলার।
অন্যদিকে ৬.৭ ইঞ্চি স্ক্রিনের আইফোন ১৬ প্লাস মডেলের দাম শুরু ৮৯৯ ডলার থেকে। কালো, সাদা, সবুজ, গোলাপি ও নীল– পাঁচটি রঙের বৈচিত্র্য এনেছে আইফোন ১৬ সিরিজ। আইফোন ১৬ প্রো ও প্রো ম্যাক্সের স্ক্রিন হবে যথাক্রমে ৬.৩ ইঞ্চি ও ৬.৯ ইঞ্চি। প্রো মডেলের আইফোন দুটির দাম হবে স্টোরেজভেদে ন্যূনতম ৯৯৯ ডলার ও ১ হাজার ১৯৯ ডলার।
‘ইটস গ্লাে টাইম’
যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপল ব্র্যান্ডের বার্ষিক সম্মেলন ‘ইটস গ্লো টাইম’ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অ্যাপল) টিম কুকের নেতৃত্বে নতুন ঘরানার সব প্রযুক্তি ও পণ্যের বিষয়ে উপস্থিত দর্শকের তথ্যচিত্র উপস্থাপন করে। নতুন সিরিজের আইফোনে মানোন্নত হার্ডওয়্যার, এআই প্রযুক্তির মিশেল, ডিজাইন ও রঙের বহুমাত্রিকতা মুগ্ধতা ছড়ায় সারাবিশ্বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সারাবিশ্বে অ্যাপল তার মুগ্ধতা ছড়াতে অনেক সংস্করণ নিয়ে হাজির। কারণ, সাধ্যের মধ্যে এবার অনেকেই যেন আইফোন কিনতে পারেন, সে জায়গায় অ্যাপল পরিকল্পনা নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেছে। অর্থাৎ অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অ্যাপল বিক্রিতে বাড়তি চাঙ্গা ভাব আনতেই এমনটা করেছে অ্যাপল পণ্য উদ্ভাবকরা।
অ্যাপলভক্তরা এবার পেয়েছে বাড়তি কিছু চমক। মডেল ও স্টোরেজের তুলনাচিত্রে এসেছে দৃশ্যমান সব পরিবর্তন। আইফোন প্রো মডেলের ডিসপ্লের আকার বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৬.৩ ইঞ্চি এবং ৬.৯ ইঞ্চি। ডিসপ্লের আকার বাড়লেও ফোনের আকার আদৌ কিন্তু বাড়েনি। সহজে বললে, দৈর্ঘ্য বাড়লেও প্রস্থ আগের মতো আছে। ফলে আইফোন হাতে নিতে যে অভ্যস্ততা ভক্তদের, তা অক্ষতই থাকছে।
অন্যদিকে ১৬ প্রো ও ১৬ প্রো ম্যাক্স মডেলে থাকবে বায়োনিক এ ১৮ প্রো প্রসেসর। বলা বাহুল্য, ব্যাটারি, গতি ও ডিসপ্লের প্রশ্নে প্রসেসর হচ্ছে সবচেয়ে বড় কারিগর। আর প্রসেসর উন্নয়নে মুনশিয়ানা দেখাতে অ্যাপল বরাবরই সিদ্ধহস্ত।