রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৬৩ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ

২০২৫-২৬ অর্থবছরে সরকার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন (৬ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার) নির্ধারণ করেছে। জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য সচিব বলেন, সমাপ্ত অর্থবছর ২০২৪-২৫-এ বাংলাদেশ পণ্য খাতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৭ শতাংশ এবং পূর্ববর্তী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮.৫৮ শতাংশ বেশি। সেবা খাতের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়নের বিপরীতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক অর্থবছরে রপ্তানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনা করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, লক্ষ্যমাত্রা পণ্য খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি এবং সেবা খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের—অর্থাৎ মোট ৬৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কম্পাউন্ড বার্ষিক বৃদ্ধির হার পণ্য খাতে হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সেবা খাতে হয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাত (ওভেন)-এর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ২০ হাজার ৭৯০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত (নিট)-এর রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ২৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। হোম টেক্সটাইল খাতের রপ্তানির বিশ্ববাজারের আকৃতি, প্রবৃদ্ধি এবং আমাদের সক্ষমতার প্রেক্ষাপটে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ১ হাজার ২০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত লেদার ও লেদার গুডসের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ১ হাজার ২৫০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং এ খাতের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনাপূর্বক এ খাতের প্রতিনিধি ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব করেন।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ৫৩৯ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। এ খাতে নীতিগত সহায়তা, ভেনামি চিংড়ির হ্যাচারির লাইসেন্স প্রদান ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা বৃদ্ধি করার বিষয়ে সরকারের যথাযথ সহায়তা ও সহযোগিতা পেলে প্রস্তাবিত হারের চেয়েও বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে এ খাতের প্রতিনিধি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ৯০০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। পণ্যের গুণগত মান যাচাই করার জন্য ল্যাব টেস্টিং-এর উপর গুরুত্ব আরোপ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)-এর সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে এ খাতে বাংলাদেশ একটি টেকসই পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে।
কৃষি পণ্যের লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে মার্কিন ডলার ১ হাজার ২১০ দশমিক ৪০ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে। কার্গো বিমান, বিমানবন্দরে কুলিং সিস্টেম এবং ইডিএস মেশিনের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করে অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।
বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে সেটি অর্জিত হবে। আমাদের আশা, আরও বেশি হবে। কারণ ইউএস ট্রেডের ক্ষেত্রে আলোচনা ভালো হয়েছে। তবে ব্যাংক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও হয়রানির কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো দূর করলে রপ্তানি আয় আরো বাড়বে।