Hot

রফতানি আয়ে ধাক্কা, চাপে রিজার্ভ

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য মতে, সদ্য শেষ হওয়া এপ্রিল মাসে ৩৯১ কোটি ৬৯ লাখ (৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন) ডলার রফতানি আয় দেশে এসেছে। যা গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ১ শতাংশ কম। আর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল মাসে পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার। এপ্রিলে তা বড় ধাক্কা খেয়েছে; নেমে এসেছে ৪ বিলিয়ন ডলারের নিচে। নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেও ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ-এই চার মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি আয় দেশে এসেছিল। হঠাৎ করে রফতানি আয় হোঁচট খাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রফতানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, এতে উদ্বেগের মধ্যে থাকা বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ আরও চাপের মধ্যে পড়বে।

ইপিবি’র তথ্য মতে, টানা চার মাস পণ্য রফতানি থেকে ৫ বিলিয়ন (৫০০ কোটি) ডলারের বেশি আয় হয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে পণ্য রফতানি থেকে ৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল। ডিসেম্বরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ২০২৪ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। একক মাসের হিসাবে এই অঙ্ক এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে পণ্য রফতানি করে ৫১৮ কোটি ৭৫ লাখ (৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলার দেশে আনেন রফতানিকারকরা। মার্চে এনেছিলেন ৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য রফতানি থেকে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ১৭ লাখ (৪৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। তবে ৫০ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যের চেয়ে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরের এই ১০ মাসে পণ্য রফতানি থেকে ৪৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছিল।

গত বছরের অক্টোবরে রফতানি আয়ে ধস নেমেছিল। ওই মাসে পণ্য রফতানি করে ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ (৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের অক্টোবরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অক্টোবরের রফতানি আয় ছিল ২৬ মাস পর সবচেয়ে কম। ২০২১ সালের আগস্টে পণ্য রফতানি থেকে ৩৩৮ কোটি ৩০ লাখ (৩ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছিলেন বিভিন্ন খাতের রফতানিকারকরা। তবে পরের মাস নভেম্বরে রফতানি আয় বেশ খানিকটা বাড়ে; আসে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ (৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন) ডলার। দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কয়েক দিন বেশ কিছু পোশাক কারখানা বন্ধ থাকার পরও নভেম্বরে অক্টোবরের চেয়ে বেশি রফতানি আয় দেশে এসেছিল। ডিসেম্বরে এক লাফে বেড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়; পরের তিন মাসেও ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে আসে।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। তবে টানা তিন মাস (অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমায় ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) হিসাবে সামগ্রিক পণ্য রফতানি বৃদ্ধির গতি কমে দশমিক ৮৪ শতাংশে নেমে আসে।
জানুয়ারিতে রফতানি বাড়ায় প্রবৃদ্ধি বেড়ে ২ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও বেড়ে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশে ওঠে। মার্চ শেষে বেড়ে ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশে ওঠে। এপ্রিলে রফতানি আয় কমায় অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই সঙ্কটের সময় রফতানি আয় বাড়ায় এক ধরনের স্বস্তি ছিল। কিন্তু এপ্রিলে হোঁচট খাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ল। এতে রিজার্ভ আরও কমে যাবে।

পোশাক থেকেই এসেছে ৮৫.৫০ শতাংশ
জুলাই-এপ্রিল সময়ে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প থেকে এসেছে ৪০ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কমেছে ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে নিট পোশাক রফতানি থেকে এসেছে ২২ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় কমেছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ।
ওভেন পোশাক থেকে এসেছে ১৭ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার; গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে আয় বেড়েছে দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এই দশ মাসে পোশাক খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন ডলার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে তৈরি পোশাক রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৩৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

ইপিবির হিসাব বলছে, জুলাই-মার্চ এই দশ মাসে মোট রফতানি আয়ের ৮৫ দশমিক ৫০ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রতি বছরই এপ্রিল- ম মাসে রফতানি আয় একটু কম আসে। তবে এবার এপ্রিলে একটু বেশি কমেছে। ঈদের ছুটির কারণে কয়েক দিন কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ ছিল; রফতানি হয়নি। এপ্রিলে রফতানি কমার এটাও একটি কারণ।

তিনি বলেন, নানা বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমরা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা এখনও লেগে আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় আমাদের প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ পোশাক কেনা কমিয়ে দিয়েছে। তাদের এখন খাবারের পেছনে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমাদের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে।
নিট পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিটিএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সব মিলিয়ে আমরা ভালো নেই। আমাদের অর্ডার কমছে। আগামীতে রফতানি আরও কমবে বলে মনে হচ্ছে। গ্যাস সঙ্কট লেগেই আছে। বিশ্ব পরিস্থিতিও ভালো না। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রফতানি বাড়ার আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়।

কমবে রিজার্ভ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার। আর আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস’ হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। গত তিন সপ্তাহ ধরে এই দুই হিসাবেই রিজার্ভ প্রায় একই জায়গায় অবস্থান করছে। তবে আগামী সপ্তাহেই রিজার্ভ থেকে আরও প্রায় ১ দশমিক ৩০বিলিয়ন ডলার কমে যাবে। কেননা, চলতি সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মার্চ-এপ্রিল মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। সেই বিল ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি হবে বলে জানা গেছে। সে হিসাবে আকুর বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসবে। ‘গ্রস’ হিসাবে নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।

এটি অবশ্য প্রকৃত রিজার্ভ নয়। আর প্রকৃত ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ বের করতে বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল থেকে চলতি দায় বাবদ আকু বিল, বৈদেশিক পাওনা, প্রকল্প বকেয়া বিল এবং বিশেষ পরিপূরক মুদ্রার (এসডিআর) বকেয়া হিসেবে ৫ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। আর এতে বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক শূন্য ০৬ বিলিয়ন, যা দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়েও রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এদিকে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ কম থাকায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। একইসঙ্গে রিজার্ভ কিভাবে বৃদ্ধি পাবে তার সঠিক কর্মপরিকল্পনা আগামী ৮ মে’এর মধ্যে চেয়েছে সংস্থাটি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d