Bangladesh

রমজানে কঠিন সংকটের শঙ্কা

আসন্ন রমজানে দেশ কঠিন সংকটে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্পবাণিজ্যবিষয়ক বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে স্থানীয় শিল্পে স্থবিরতা, অন্যদিকে নানা জটিলতায় আমদানি কমে যাওয়ায় বাড়তি চাহিদার বিপরীতে পণ্য সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসাবাণিজ্যে গতি ফেরাতে সবরকম ভীতি কাটিয়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘দেশের সব রকম ব্যবসাবাণিজ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্বস্তি বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। ঘন ঘন আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে হবে।’

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে শ্লথগতি বিরাজ করছে। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে আসা মন্দা বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করে। জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের পণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার দ্রুত অবমূল্যায়ন, ডলারের অভাবে অনেক ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসাবাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হয়। পাশাপাশি সরকারের ঋণ বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের কারণে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাননি। আবার বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপন করেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়া এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চয়তার কারণে উৎপাদন শুরু করা যায়নি। এ কারণে বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন বাড়েনি।

উদ্যোক্তারা বলছেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরও ব্যবসাবাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়নি। উল্টো ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ওপর নানামুখী চাপ অব্যাহত থাকায় নতুন বিনিয়োগ অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট, আইনশৃঙ্খলায় অস্বস্তিসহ নানা কারণে উৎপাদনে গতি ফেরেনি। বরং কারখানায় হামলা, হয়রানিমূলক মামলা, ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ভিত্তিহীন নানা প্রচারে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংক ঋণের বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন করায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ব্যবসা করেও যাঁরা কখনো খেলাপি হননি, নতুন নিয়মের ফাঁদে পড়ে তাঁরাও এখন খেলাপির তালিকায় যুক্ত হচ্ছেন।

কোনো শিল্প গ্রুপের আওতাভুক্ত একটি কোম্পানি খেলাপি হলে পুরো গ্রুপের নতুন ঋণসুবিধা বন্ধের নিয়ম করায় অনেক ভালো প্রতিষ্ঠান বিপাকে পড়ছে। একটি কোম্পানি খারাপ হলে পুরো গ্রুপের সিআইবি রিপোর্ট খারাপ দেখানো হচ্ছে। এর ভিত্তিতে ওই গ্রুপকে খেলাপি গণ্য করে ব্যাংকসুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ নিয়মের কারণে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিতেও ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে জানা গেছে। আমদানিকারকরা সাধারণত ইউপাস এলসি সুবিধায় শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন। এ ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের মূল্য পরিশোধে ২৭০ দিন সময় থাকে। এ সময়ের মধ্যেই একজন আমদানিকারক পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করেন। সেখান থেকে আসা আয় দিয়ে সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধের পর উদ্বৃত্ত অর্থ মুনাফা হিসেবে থাকে।

আমদানিকারকরা জানান, দেশে ইস্পাত, সিমেন্ট, বস্ত্রের মতো ভারী শিল্প ছাড়াও ভোজ্য তেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের কাঁচামাল ইউপাস এলসির মাধ্যমে আমদানি করা হয়। এরপর সেগুলো শিল্পকারখানায় প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহারোপযোগী পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা হয়। এভাবে মূল্য সংযোজন (ভ্যালু অ্যাড) করে আমদানিকারক পণ্যের আমদানি ব্যয় তুলে নেন। এ প্রক্রিয়ায় কমপক্ষে ১৮০ দিন লাগে। এরপর একজন আমদানিকারক ব্যাংকের মাধ্যমে সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধ করেন। কিন্তু গত এক বছরে ডলারের বিনিময় হার ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহকারীর পাওনা পরিশোধে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইছেন ইউপাস এলসি খোলার সময় যে চুক্তি করা হয়েছিল সে অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করতে। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলারের বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী হিসাব করছে। ব্যাংকের দাবি মানতে গেলে আমদানিকারকদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত লোকসানে পড়তে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউপাস এলসিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে রূপান্তরের সুযোগ দেওয়া হলে ব্যবসায়ীদের সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তা না হলে এসব এলসি খেলাপিতে পরিণত হবে। এতে ব্যাংক খাতের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে।

আগের ইউপাস এলসি নিয়ে জটিলতা এবং এ প্রক্রিয়ায় আনা পণ্য বিক্রি করে লোকসান হওয়ায় অনেকেই নতুন করে কাঁচামাল আনতে পারছেন না। এ কারণে রোজার মাসে অনেক পণ্য চাহিদা অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনও (বিটিটিসি) ইতোমধ্যে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বিটিটিসির প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানির ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯১ টন কমেছে। একই সময়ে পাম তেলের এলসি কমেছে ৭৭ হাজার ৯৩০ টন। আর পাম তেল আমদানি কম হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩৮৬ টন। একইভাবে সয়াবিন বীজ আমদানি আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার টন কম। এ ছাড়া পরিশোধিত ভোজ্য তেল, চিনি ও পিঁয়াজ আমদানিও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বাজারে এসব পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে যে পরিমাণ এলসি খোলা দরকার ছিল, তার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। ফলে এখন থেকে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেওয়া না হলে আগামী মার্চে পবিত্র রমজানে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর সাত দফা সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। সেই সঙ্গে ভোজ্য তেল, চিনি ও ডালের মিলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, অনেক ব্যবসায়ী বিপুল বিনিয়োগে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে তুললেও শুধু গ্যাসের সরবরাহ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছেন না। এর মধ্যে বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপ দৈনিক ১ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সয়াবিন তেলের মিল স্থাপন করলেও গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন করতে পারছে না। ইতোমধ্যে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় টাকা জমা নিলেও এখন পর্যন্ত গ্যাস দেয়নি। পরিকল্পনামতো উৎপাদন শুরু করতে না পারায় একদিকে প্রতিষ্ঠানটির বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আটকে পড়েছে, অন্যদিকে বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহ বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

এভাবে অনেক ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করলেও গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেনি। অনেকেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নতুন প্রকল্প করলেও সময়মতো পণ্য বাজারজাত করতে পারছে না। নতুন কারখানা থেকে কোনো আয় না হলেও ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। আবার গ্যাসের দাম তিন গুণ করার কারণেও পণ্য উৎপাদন ব্যয় ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। এসব কারণে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অনেক ব্যবসায়ী অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব দিক থেকেই তাঁদের হাত-পা বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ফলে প্রকৃত উদ্যোক্তারা এখন ব্যবসাবাণিজ্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাঁরা ক্রমে হতাশ হয়ে পড়ছেন। শিগগিরই পরিস্থিতি না বদলালে সার্বিক অর্থনীতিতে এর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ ব্যবসায়ীরা তাঁদের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে না পারলে কোটি কোটি মানুষের কর্মহীন হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। সেই সঙ্গে কমে যাবে সরকারের রাজস্ব।

সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার বিনিয়োগকে যদি উৎসাহিত করতে পারে, তা হলেই দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু সেজন্য কিছুটা সময় লাগবে। কারণ বিগত সরকার লুটপাট করে অর্থনীতি বরবাদ করে দিয়ে গেছে। দেশ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। এগুলোর যে সম্মিলিত প্রভাব তা আরও বেশ কিছুদিন আমাদের ভোগ করতে হবে। এর কোনো সহজ সমাধান নেই।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d