রহস্য উদ্ঘাটন ৬৪ শতাংশ মামলার, পিবিআই’র ৬৪৬৯ হত্যা মামলার তদন্ত
প্রতিষ্ঠার পর থেকে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া প্রায় সাড়ে ৬ হাজার হত্যা মামলার ৬৪ শতাংশের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এসব মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে জমা দিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠার নয় বছরে পিবিআই বেশি আলোচনায় এসেছে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য ভেদ করার কারণে।
২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে ৬৭, ৬৩, ৬২, ৬৪, ৬৮, ৬৯ ও ৬২ ভাগ হত্যা মামলার রহস্য ভেদ করেছে সংস্থাটি। এসব মামলায় ২২ হাজার ২৭৯ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে।
হত্যা মামলাগুলোর বেশিরভাগই ছিল ক্লুলেস এবং আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। তদন্তে মোট ২২ ধাপ অতিক্রম করে মামলাগুলোর সমাধান করেছে সংস্থাটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পিবিআই সূত্র বলছে, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। এর পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৪৬৯টি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এসব মামলার মধ্যে ৩ হাজার ৩২১টির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে সংস্থাটি।
মামলাগুলোর মোট অভিযুক্ত করা হয়েছে, ২২ হাজার ২৭৯ জনকে। এছাড়া ৯৯১টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট সত্য ও ৯৪টি মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত চলাকালীন প্রত্যাহার হয়েছে ৯৭টি মামলা।
সব মিলে পিবিআই’র কাছে আসা ৬ হাজার ৪৬৯টি হত্যা মামলার মধ্যে মোট নিষ্পত্তি হয়েছে ৫ হাজার ১৩২টি। বর্তমানে তদন্তাধীন আছে ১ হাজার ৩৩৭টি মামলা। এসব মামলার অধিকাংশই আদালতের নির্দেশে তদন্তভার পায় পিবিআই। সারা দেশে ৫২টি ইউনিট এসব মামলা তদন্ত করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা কোনো কূল-কিনারা না পেলেও পিবিআই অসংখ্য মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। ৩০ বছর পর রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার ২৫ জন তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলের পর ঘটনাটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয় পিবিআই।
পিবিআই প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, হত্যা মামলা তদন্তে আমার নিখুঁতভাবে অগ্রসর হয়ে থাকি। একটু সময় লাগলেও আমরা ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি। ফলে অন্যান্য সংস্থার হাল ছেড়ে দেওয়া অনেক ক্লুলেস মামলাও আমরা উদ্ঘাটন করেছি। পিবিআইকে যদি ক্রমান্বয়ে তদন্তকারী সংস্থা হিসাবে টিকে থাকতে হয় তাহলে নতুন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় একটি কথা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করি যে, যার নাই কোনো তদবির তার আছে পিবিআই। মামলার ক্ষেত্রে যাদের কোনো তদবির নেই, উচ্চ পর্যায়ে লোকও নেই, যারা মামলার হাল ছেড়ে দেয় অনেক সময়। সেই মামলা তদন্ত করে আসামি ধরেছে পিবিআই।’
পিবিআই উদ্ঘাটিত চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার মধ্যে রয়েছে, রাজশাহীর বোয়ালমারির হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালে পুলিশ কন্যা হত্যা মামলা। হোটেলের একটি কক্ষ থেকে ২০১৬ সালে পুলিশ কন্যা সুমাইয়া নাসরিন ও তার বন্ধু মিজানুর রহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মিজানুর রহমানের মরদেহ ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল। আর তার বান্ধবী সুমাইয়া নাসরিনের মরদেহ বিছানায় বালিশ চাপা দেয়া অবস্থায় পড়ে ছিল। ঘটনার পর সুমাইয়ার বাবা বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয় আত্মহত্যা জনিত কারণে মৃত্যু।
থানা পুলিশও তদন্ত করে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পেয়ে ময়নাতদন্তের ওপর ভিত্তি করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু এ প্রতিবেদনে আদালত সন্তুষ্ট না হওয়ায় মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেয়। পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে ঘটনাটি ছিল হত্যাকাণ্ড।
ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ওই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পিবিআই।
শ্রীমঙ্গলের হাজিপুরে ২০১৭ সালে খুন হন প্রতিবন্ধী আরিফুল ইসলাম (১৮)। এ ঘটনায় তার বাবা মো. আরবেশ আলী বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে শ্রীমঙ্গল থানায় হত্যা মামলা কারেন। শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামিদের মধ্যে তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে বাকিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
কিন্তু বাদীর নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে ২০১৮ সালে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তে পালটে যায় মামলার দৃশ্যপট। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঠাণ্ডা মাথায় আরিফুলকে হত্যা করে মামলাটি করা হয়েছে এমন তথ্য উঠে আসে তদন্তে।
বাদীপক্ষের তিনজন হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছে। মামলাটি এখনো আদালতে বিচারাধীন।
পিবিআইয়ের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এসব হত্যা মামলা তদন্ত করতে ২২টি ধাপ অতিক্রম করতে হয় তাদের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ঘটনাস্থলের স্কেচ ম্যাপ প্রণয়ন করা, ঘটনাস্থলের ছবি তোলা, ঘটনাস্থল ভালোভাবে তল্লাশি করা, আলামত সঠিকভাবে জব্দ করা।
মোবাইলের সিডিআর সংগ্রহ করা, বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা করা, প্রত্যক্ষ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করা, শোনা সাক্ষীর সাক্ষ্য পরিহার করা, সাক্ষীদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করার সময় তাহাদের সাক্ষ্যগত ওয়েট বিবেচনা করা (নিরপেক্ষ, অনাত্মীয় কিংবা কোনো স্বার্থ নেই এমন)।
এছাড়া ভুক্তভোগীর সঙ্গে পূর্বে শত্রুতা সংক্রান্তে কোনো তথ্য পাওয়া যায় কি না, মূলদলিল/চাক্ষুস সাক্ষী ইত্যাদি সংগ্রহ করা, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য/সালিশ নামা ইত্যাদি সংগ্রহ করা, পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের আগে বাদীর সঙ্গে পরামর্শ করা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ৯৭০ জনবল নিয়ে ২০১২ সালে পিবিআই যাত্রা শুরু করে। ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি বিধিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে সারা দেশের ৫২টি ইউনিটে ২ হাজার জনবল নিয়ে খুন, ডাকাতি, দস্যুতা, প্রতারণা, মানব পাচারহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ তদন্ত করছে পিবিআই।
Very interesting subject, thank you for posting.Raise your business