Bangladesh

রাইট ট্র্যাকে বিএনপি

অর্থনীতির বেহাল দশা : দেশে কি ঔপনিবেশিক শাসন চলছে? ইচ্ছা করলেই কেউ আমরা সেন্ট মার্টিন-সাজেকে যেতে পারি না : মির্জা আব্বাস হাসিনার মতোই এ সরকার একেক সময় একেকটা ইস্যু তৈরি করছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ, উত্তরণের পথ বের করতে হবে : প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি কারো দাসত্ব করতে নয় : আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ‘বাংলাদেশপন্থি’ ভূমিকা পালন করতে হবে : নাহিদ ইসলাম

‘দিল্লির গোলামির জিঞ্জির ছিন্ন করেছি পি-ির দাসত্ব করতে নয়। ওয়াশিংটন কিংবা মস্কোর দাসত্ব করতেও নয়’-(আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া)। ‘আমার মনে হয় দেশে কোনো সরকার নেই। আমরা ঔপনিবেশিক শোষণের মধ্যে আছি। ইচ্ছা করলেই কেউ আমরা সেন্টমার্টিন যেতে পারি না। কেন আমরা সাজেক, বাঘাইছড়ি যেতে পারব না। আমরা কি পরাধীন কোনো দেশে বসবাস করছি’-(মির্জা আব্বাস)। ফেসবুক পেজে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া এই লেখা ও একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের এই বক্তব্য গতকাল ছিল টক অব দ্য কান্ট্রি। সর্বত্রই এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রায় সবাই এ বক্তব্যকে সময়োপযোগী ও সাহসী বক্তব্য হিসেবে অবিহিত করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছেÑ আমরা এখন কোথায় রয়েছি? আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের খবরে সবাই খুশি। কিন্তু সেন্টমার্টিনের অবস্থা কী? অর্থনীতি কোন পথে হাঁটছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স ছাড়া দেশের অর্থনীতির কি উন্নতি হয়েছে গত ৯ মাসে? অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টার কথাবার্তা ও কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে পতিত শেখ হাসিনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে একের পর এক ঘটনার জন্ম দিতো; বর্তমানে তেমনটিই চলছে। সকালে একটি ঘটনা তৈরি করল হৈচৈ পড়ে গেল, সরকারের বিপদে পড়ার শঙ্কা হলেই বিকেলে আরেকটি ঘটনা দিয়ে সেটি চাপা পড়ে গেল। একটির পর একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। মিয়ানমারের আরাকান আর্মিদের মানবিক করিডোর দেয়ার ইস্যু নিয়ে জনগণকে কেন অন্ধকারে রাখা হয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক ঠেকানো যাচ্ছে না। অথচ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো যাতে জনগণের দৃষ্টি না যায় সে লক্ষ্যে অন্য ইস্যু সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র বিএনপি ও তাদের সহযোগী দলগুলো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। দলটি স্রোতে গা ভাসায়নি। পান থেকে চুন খসলেই আন্দোলন এমন অবস্থানে নেই দলটি। তবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রয়োজনে অল্প সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করছে

দেশের অর্থনীতির চিত্র বোঝা যায় শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের কাফনের কাপড় পরে মিছিলের দৃশ্য দেখে। এপিল মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হলো ঢালঢোল পিটিয়ে। কিন্তু সেখানে বিদেশিরা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো বিনিয়োগকারী অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। তারা নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে বিনিয়োগ করবেনÑ এমন বার্তা দিয়েছেন। ব্যাংকিং সেক্টরের বেহাল দশা কাটেনি। টাকা ছাপিয়ে পুঁজি দিয়েও ব্যাংকগুলো ঠিকমতো চলছে না। বাধ্য হয়ে সরকারকে দুর্বল ব্যাংক সরকার ইচ্ছা করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীনে নিতে পারবেÑ এমন আইন করতে হয়েছে। গার্মেন্টস সেক্টরে নেই কোনো সুখবর। দেশীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে নেই কোনো সুব্যবস্থা। গ্যাস-বিদ্যুতের অপর্যাপ্ততায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিলেও ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে, তার নিশ্চয়তা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘ করতে একের পর এক সঙ্কটের নতুন নতুন ফ্রন্ট খোলা হচ্ছে। সংস্কারের নামে উপদেষ্টাদের কেউ কেউ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ধান্ধা করছেন। তারা বিদেশিদের এ কাজে ব্যবহার করছেন। এমনকি দেশের কোথায় কি হচ্ছে সে খবর মানুষ জানতে বা বুঝতে পারছে না।

জানতে চাইলে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, এখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এখান থেকে উত্তরণের পথ বের করতে হবে। রাজনৈতিক রেষারেষি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে খুশি হব, সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি সমঝোতা হলে। আর সে প্রত্যাশাটিই রাখছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের কারণে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ভালো নয়। বিদেশি শক্তিরাই বা এটিকে কীভাবে দেখবে? আমি এই নিষেধাজ্ঞায় শঙ্কিত। এতে রক্তপাত হতে পারে আবার সমঝোতাও হতে পারে। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার চাপে ড. ইউনূস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এখন ছাত্র-জনতার দাবি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এরপর তারা গণপরিষদ গঠন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের দাবি তুলবে। রাজপথে নামবে। কিছু রাজনৈতিক দল সমর্থনও করবে। ফলে আসন্ন নির্বাচনটি ঝুলে গেল।

অন্তর্বর্তী সরকার চলছে পুরোনো স্টাইলে। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো পলাতক হাসিনার অলিগার্করা। তারা নিজেদের মতো করে প্রশাসনে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন। উপদেষ্টাদের অনেকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আবার আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। ফলে প্রশাসনে গতি ফিরছে না। একটি বিপ্লবের পর যেভাবে পরিকল্পিতভাবে দেশপ্রেমিদের মেধা কাজে লাগাতে তাদের সরকারে নিয়ে কাজ করাতে হয় সে ধরনের তেমন উদ্যোগ নেই। দেশে অনেক যোগ্য ও মেধাবী লোকজন থাকার পরও বিদেশি নাগরিক এমন ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। তারা বিদেশিদের অঙ্গুলির নির্দেশে এটা সেটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কেউ কেউ সংস্কার ছাড়া দেশ অচল জিকির তুলছেন। দেশের অর্থনীতিতে এখনো গতি ফেরেনি। ভোক্তাদের এখন মূল শত্রু মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ রমজানে দ্রব্যমূল্যের গতি টেনে ধরা গেলেও এখন ফের ঊর্ধ্বগতি। ভিন্নভাবে বললে বলা যায়Ñ টাকার ক্রয়ক্ষমতা দিন দিন কমছে। এক টাকার জিনিস দুই টাকায় কিনতে হচ্ছে। টাকার দাম দেশে কমছে। একইভাবে কমছে ডলারের বিপরীতে। কারণ কী? আমরা আমদানি নির্ভর দেশ। পান থেকে চুন পর্যন্ত আমাদের আমদানি করতে হয়। ডিম, ডাল, পেঁয়াজ, চাল, গম থেকে শুরু করে সবই আমদানি করতে হয়। আর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট না ভেঙে পুরোনো সিন্ডিকেটের উপর সরকার নির্ভরশীল। আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে তৈরি পোশাক আর আছে কিছু সামান্য পণ্য। এ ছাড়া রফতানি হচ্ছে জনশক্তি। কিন্তু এই রফতানি দ্বারা আমদানির খরচ মেটানো যাচ্ছে না।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকশ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগে লাগাতার আন্দোলনকে নাটক আখ্যা দিয়ে বলেন, কোনো অপকর্মের আগে শেখ হাসিনাও মানুষের দৃষ্টি সরাতে এমন কৌশল অবলম্বন করতেন। বিএনপি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিরোধিতা না করলেও একটি অজনপ্রিয় দল শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপিকে হেয় করছে। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে চায় তারা দেশ ও জনগণের শত্রু। কারণ আওয়ামী লীগকে বিএনপি কখনো আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। ১৭ বছর যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছে বিএনপি তাদের পুনর্বাসন করবে এটি যারা বলে তারা বিএনপিকে হিংসা করে। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিয়ে দেশ ছেড়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ অথচ সরকার কিছুই জানে না; তারা কি জানে? প্রশাসনে বিএনপি নিধন করে আওয়ামী-জামাতপন্থিদের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনেক উপদেষ্টা যারা দেশের নাগরিক না তারাই দেশ পরিচালনা করছে। মনে হচ্ছে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে দেশে। করিডোর নিয়ে জামায়াত-এনসিপি কেউ কথা বলছে না। সেন্টমার্টিন, সাজেক নিয়ে এনসিপি কেন কথা বলছে নাÑ দলটির কাছে এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা আব্বাস বলেন, বিশ্বের ডিকশনারিতে মানবিক করিডোর বলে কিছু নেই। প্রয়োজনে একেকটি নাম দিয়ে এসব বানানো হচ্ছে।

মির্জা আব্বাস আরো বলেন, দেশে সন্দেহভাজন বিদেশিদের আগমন বেড়েছে। বিভিন্ন মিশন চালু হচ্ছে। সব অপকর্ম ইচ্ছাকৃতভাবে করছে সরকার, সরকার কার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করছে, এটি দেশপ্রেমিক সরকার নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য একেক সময় একেকটি ইস্যু তৈরি করেছে। ১৬ বছরে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াইশ ইস্যু তৈরি করেছে। সকালে একটি ঘটনা তৈরি করল হৈচৈ পড়ে গেল, বিকেলে আরেকটি ঘটনা দিয়ে সেটি চাপা পড়ে গেল। একটির পর একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আর যারা সমালোচনায় অভ্যস্ত তারা কোনো কর্মে অভ্যস্ত নয়। তারা সমালোচনায় খুব পটু; তখন বলতোÑ বিএনপি কী করে। তারা আসল ঘটনা থেকে দূরে রাখার জন্যই একটির পর একটি ঘটনা ঘটিয়েছে। আজ যারা আছে তারা কী সেটি অবলম্বন করতে পারে না? এ জন্যই হঠাৎ করে একটা ইস্যু এসে গেছে সীমান্তে আরাকানের। আবার বলে না, বিষয়টি চূড়ান্ত না। তবে ভেতরে কিন্তু একটি আলোচনা আছে, ইচ্ছা আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করছে বলে অভিযোগ করে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অপশক্তির অপতৎপরতা বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলো উদাসীন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আওয়ামী লীগের বিচারের কথা বললেও বাস্তবে তারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসন করছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গতকাল এক বিবৃতি বলেছে, বাংলাদেশের মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের অধ্যায়সমূহ তথা, ১৯৪৭, ১৯৭১ এবং ২০২৪ এর যথাযথ স্বীকৃতি এবং মর্যাদা বাংলাদেশে রাজনীতি করার পূর্বশর্ত। যারা ১৯৭১ সালে এই জনপদের মানুষের জনযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং যাদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, আমরা চাই তারা নিজেদের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান জাতির সামনে ব্যাখ্যা করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করবে এবং চব্বিশের অভ্যুত্থানের জনআকাক্সক্ষাকে বাস্তবায়নে সহযোগী হবে। তারা বিগত ফ্যাসিবাদী জমানায় নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে বাংলাদেশের নাগরিকদের পক্ষে চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা ভূমিকা পালন করেছেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদেরকে আবশ্যিকভাবে ‘বাংলাদেশপন্থি’ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে।

এনসিপি মনে করে কোনো রাজনৈতিক দল বা পক্ষের পূর্বেকার রাজনৈতিক অবস্থান বা আদর্শের কারণে ইতঃপূর্বের বিভাজন ও অনৈক্যের রাজনীতির সূত্রপাত ঘটলে, সংশ্লিষ্ট দল বা পক্ষের দায় রয়েছে বাংলাদেশের মানুষের সামনে নিজেদের সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যাখ্যা করে জাতীয় ঐক্যের পথে হাঁটার। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমেই কেবল মুজিববাদকে সামগ্রিকভাবে পরাস্ত করা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। বাংলাদেশের জনগণের সুন্দর ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য সব পক্ষকে দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানায় এনসিপি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bandar togel
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor