রাজধানীর বাজারে উঠেছে শীতের সবজি: দামে আগুন নেভেনি
রাজধানীর বাজারগুলোতে শীতের আগাম সবজি উঠতে শুরু করেছে। কিন্তু দামে আগুন নিভছে না। প্রতি সাপ্তাহে হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। তেল, চিনি, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচসহ কিছুইতেই স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। এদিকে আদা, রসুন এবং কাঁচা মরিচের পর নতুন করে আগুন লেগেছে আলু-পেঁয়াজের বাজারেও। সপ্তাহঘুরেই কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। অপরদিকে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, শনিরআখড়া বাজার ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজারগুলোতে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ না উঠা পর্যন্ত বেশি দামে পেঁয়াজ খেতে হবে।
এর আগে সরকার প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেধে দেয় ৬৫ টাকা। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা দরে বিক্রির কথা থাকলেও সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
বাজারে ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহঘুরে তা এখন ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর বাজারেও আগুন! বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেড় মাস আগে খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশনা দেয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে বেছে বেছে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার অভিযানও চালায়। কিন্তু সরকরের বেধে দেয়া দাম মানা হচ্ছে না। সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে রাজধানীর বাজারগুলোতে। তবে সামান্য কিছুটা কমেছে ডিমের দাম। গত সপ্তাহে প্রতি পিস ডিম ১৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে পিসপ্রতি এক টাকা কমিয়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে এক টাকা বেশি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে আলু-পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সঙ্গে কথা হয় শনির আখড়ার বাজারের বিক্রেতা মনির হোসেনের। তিনি বলেন, আমাদের করার কিছুই নেই। আড়ৎ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনে আনি। পরিবহন ও মুনাফা মিলিয়ে এই পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হয়। দেশি পেঁয়াজের ঝাঝ আরও বেশি। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দরে পাইকারি কিনে সব খরচ ও লাভ মিলিয়ে ১৪০ টাকায় বিক্রি করি। তিনি আরো বলেন, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আড়ৎ মালিকরা। তারাই ইচ্ছামাফিক দাম বাড়ায়। তাদের থেকে বেশি দামে কিনে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হয়।
চলতি সপ্তাহে শীতকালীন সবজি আমদানি ভালো থাকায় শিম, গাজর ও ফুলকপিসহ দাম সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, চলতি সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। যাত্রাবাড়ি বাজারের সবজি বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, শীতের সবজি বাজারে প্রচুর পরিমাণে আসছে। এর প্রভাব দামে পড়েছে। গত সপ্তাহে যে শিম ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি, সেটা আজ ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছি। আগে ছোট সাইজের ফুলকপি বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে। এখন এ দামেই বড় সাইজের কপি ক্রেতারা পাচ্ছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১০ থেকে ২০ টাকা দাম কমে বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, ধুন্দল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কলার হালি ৩০ টাকা, জালি কুমড়া ৫০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন আলু ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, ছোট বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ছোট ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি কেজি মুলা ৫০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা এবং গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে লাল শাকের আঁটি ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১৫ টাকা, পালং শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছ ও গোশতের দাম গত সপ্তাহের মতোই উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। গরুর গোশত ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির গোশত ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। পোল্ট্রি মুরগির কেজি প্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সোনালিকা ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা হালি করে বিক্রি হতে দেখা যায়। রুই মাছ (১ কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের) ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা, একই রকম ওজনের সিলভার কার্প ও পাঙ্গাস ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, পাবদা মাছ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া মিনিকেট চালের কেজি ৬৫ টাকা, মোটা বা ২৮ চালের কেজি ৫৮ টাকা, মানভেদে নাজির চালের কেজি ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা। ছোট দানার মশুর ডালের কেজি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, আমদানি মশুর ডালের কেজি ১১০ টাকা, মুগ ডালের কেজি ১৩০। কোম্পানিভেদে ৫ লিটার সয়াবিন তেল ৭৯০ টাকা, এক লিটার ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গুঁড়া সাবানের দাম আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে, হুইল গুঁড়া সাবানের কেজি ১৪০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ৭৫ টাকা, ২০০ গ্রাম ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ গ্রামের লাক্স সাবান বার ৫ টাকা কমে ৫৫ টাকা, ১৫০ গ্রামের লাক্সে ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা এবং ১৫০ গ্রামের লাইফবয় ১০ টাকা কমে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।