Bangladesh

রাজনীতির মাঠে বিপ্লবীরা দলের যাত্রা কাল, দেড় শতাধিক নেতা কমিটিতে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বিপ্লবীরা নতুন দল নিয়ে আগামীকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতির মাঠে নামছেন। জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বিকাল ৩টায় শুরু হবে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে তরুণদের রাজনৈতিক দল। তবে এখন পর্যন্ত দলের নাম ও প্রতীক কী হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি বলে সূত্র জানান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের অগ্রভাগে ছিলেন নারীরা। তাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ নাড়িয়ে দিয়েছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভিত। ৫ আগস্টের পর ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে উধাও হতে থাকেন নারীরা। তরুণদের নতুন দলে নারীদের অংশগ্রহণ কতটুকু তা নিয়ে বইছে সমালোচনার ঝড়। অভিযোগ উঠেছে, নারী নেতৃত্বকে বিভিন্নভাবে অবমূল্যায়ন ও মাইনাস করা হচ্ছে। সূত্র জানান, গতকাল পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটির খসড়া তালিকা অনুযায়ী দলে নারী সদস্য সংখ্যা মাত্র ১৩। জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে যাঁরা যুক্ত হবেন তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক তালিকায় রয়েছেন সামান্তা শারমিন, মনিরা শারমিন, ডা. তাসনিম জারা, ডা. মাহমুদা আলম মিতু, নীলা আফরোজ, সাগুফতা বুশরা মিশমা, এস কে তাসনিম আফরোজ এমি, সৈয়দা নীলিমা দোলা, তাজনূভা জাবীন, সাদিয়া ফারজানা দীনা প্রমুখ। এঁদের মধ্যে কেবল জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন রয়েছেন শীর্ষ পদগুলোর যে কোনো একটির ভাবনায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে নতুন রাজনৈতিক দলের আহ্বায়ক কমিটিতে যে নারীরা যুক্ত হতে যাচ্ছেন তাঁরা হলেন নুসরাত তাবাসসুম, সিনথিয়া জাহিন আয়েশা, মাহমুদা সুলতানা রিমি প্রমুখ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ উমামা ফাতেমাকে এখন পর্যন্ত নতুন দলের কোনো কাঠামোয় দেখা যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক পদে থাকা উমামাকে নতুন দলে শুরু থেকেই মাইনাস ফর্মুলায় রাখা হয়েছে। গতকাল তিনি নাগরিক কমিটির অন্য এক নারী নেত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। এ নারী নেত্রীর নাম নাহিদা সারওয়ার নিভা। তিনি জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠনের শুরু থেকেই সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে নতুন দলে তাঁর থাকার বিষয়ে এখনো কোনো সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারেননি। উমামার ফেসবুক পোস্টে ওই নারী নেত্রীকে নিয়ে আক্ষেপের সুর। তিনি লেখেন, ‘সুসময়ে অনেক মানুষ আসে, কিন্তু সব থেকে কঠিন মুহূর্তে যারা পাশে থাকে তাদের সঙ্গেই হাঁটব। অনেকে জুলাইয়ের নারীদের কথা জানতে চান। নিভা আপা আমাকে আগলে রেখেছিলেন, সাহস দিয়েছিলেন, পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।’

নাহিদা সারওয়ার নিভা বিদেশে পিএইচডির অফার বাদ দিয়ে নাগরিক কমিটিতে সময় দিয়েছেন উল্লেখ করে উমামা আরও লিখেছেন, ‘নাগরিক কমিটিতে তিনি দিনরাত খেটেছেন। এ মানুষটাকে বহুদূর যেতে দেখতে চাই।’ বিস্তারিত জানতে উমামা ফাতেমার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কেন্দ্রীয় নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দল গঠন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা কতটুকু হচ্ছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একচেটিয়া প্রভাব ও সিন্ডিকেট দৃশ্যমান। সিন্ডিকেটের এমন প্রভাব বজায় থাকলে অন্তর্ভুক্তিমূলক দল গঠনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।

অন্য এক নেতা বলেন, এখন পর্যন্ত যে কজন নারী নেত্রী রয়েছেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দলের বৃহত্তর স্বার্থে নারীদের কার্যকর ও উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। তবে যে কজন রয়েছেন তাদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হলে নারী নেত্রীদের আগ্রহে ভাটা পড়বে।

এদিকে, নানা আলোচনা-সমালোচনার পর গতকাল রাজনৈতিক দলে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা। এঁরা হলেন আলী আহসান জোনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। জোনায়েদ নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাফে আছেন যুগ্ম সদস্যসচিব পদে। জোনায়েদ নতুন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আসতে পারেন বলে রব উঠেছিল। রাফে সালমানকেও রাখার কথা ছিল গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে। কিন্তু গতকাল সমাজমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া পৃথক পোস্টে তাঁরা নবগঠিত রাজনৈতিক দলে না থাকার ঘোষণা দেন।

গতকাল জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ১১তম সাধারণ সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংগঠনের মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম (সাংগঠনিক কাঠামো), নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আসন্ন রাজনৈতিক দলে যোগদানকারী সবঢ়ড় কেন্দ্রীয় সদস্যের সদস্যপদ আগামী দল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত বহাল থাকবে। রাজনৈতিক দলে অন্তর্ভুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সদস্যের জাতীয় নাগরিক কমিটিতে সদস্যপদ বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।

তবে দলে যোগ দিচ্ছেন না এমন সদস্যদের সদস্যপদ বহাল থাকবে।

দ্বিতীয়ত, আহবায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির তিন (০৩) জনের আনুষ্ঠানিক ফোরাম পরবর্তী সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করবেন।

তৃতীয়ত, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে। দল গঠনের পর থেকে জানাক সিভিল-পলিটিক্যাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে, আর কোন দল গঠনের উদ্যোগ নেবে না।

গতকাল সরেজমিনে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, রুদ্ধদ্বার মিটিং করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সূত্র জানান, এখন পর্যন্ত দলের নাম ও প্রতীক কী হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনমত জরিপ থেকে পাওয়া নাম ও প্রতীক নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা। সম্ভাব্য নামের তালিকায় রয়েছে জনতার দল, নতুন বাংলাদেশ পার্টি, বিপ্লবী দল, নাগরিক শক্তি, ছাত্র-জনতা পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী পার্টি, রিপাবলিক পার্টি, জাতীয় শক্তিসহ ৩০টির বেশি নাম। সম্ভাব্য প্রতীকের তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় প্রতীক, উদীয়মান সূর্য, কলম, বই, গাছ, মুষ্টিবদ্ধ হাত ইত্যাদি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto