Hot

রাতের ঢাকায় আতঙ্ক

একের পর এক ছিনতাই, সন্ত্রাসী ঘটনায় রাতে ঢাকায় ভয়-আতঙ্ক নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে নাগরিকদের। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বক্তব্য, ঢাকার অপরাধ দমনে রাতে-দিনে কাজ করছে পুলিশ। মোবাইল টিমের সঙ্গে  বাড়ানো হয়েছে চেকপোস্ট। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রাতের ঢাকার চেকপোস্টের বেশির ভাগেই থাকে না পুলিশ। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। 

সরজমিন রাতে রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় দেখা যায়, উভয়পাশের রাস্তার মাঝে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়া। ব্যারিকেডগুলোকে দেখে যে কেউই বলবে- রাতে ওই রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোতে পুলিশি তল্লাশি হয়। রাত সাড়ে এগারোটা থেকে ২টা পর্যন্ত এলাকাটতে অবস্থান করেও চেকপোস্টটিতে কোনো পুলিশি তল্লাশি চোখে পড়েনি। আরিফুল ইসলাম, মো. সাইফুল, রিয়াজ আহমেদসহ সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরতে আসা বেশ কয়েকজন বলেন, আমাদের বাসা লালমাটিয়ায়। আমরা নিয়মিতই সংসদ ভবন এলাকায় আড্ডা দিই। আগে এখানে পুলিশ চেকপোস্ট ছিল। প্রায়ই রাতে পুলিশ সন্দেহভাজন গাড়ি ও মানুষকে তল্লাশি করতো। কিন্তু এখন আর করে না। শুধু রাস্তার মাঝে ব্যারিকেডগুলো পড়ে থাকে। তারা বলেন, এই যে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমণ্ডি-২৭, আসাদ গেট এলাকায় প্রায়ই ছিনতাই হয়। ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা-পয়সা, ফোন, ম্যানিব্যাগ সব নিয়ে নেয়। আর কেউ দিতে না চাইলেই তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। মাঝে মাঝে থানার গাড়ি এসে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। তবে সব সময় তাদের পাওয়া যায় না। আগে যেমন গভীর রাতে রাস্তায় বের হলেই পুলিশ সদস্যদের রাস্তায় পাওয়া যেত, এখন আর গভীর রাতে তেমন একটা পুলিশের গাড়ি দেখা যায় না।   

এদিকে মিরপুর রোডের  আসাদ গেট, কলেজ গেট, শিশুমেলা, শ্যামলী এলাকাতে রাতে-দিনে একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এই এলাকায়ও দৃশ্যমান তৎপরতা দেখা যায়নি। 

গণভবনের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছাড়া রাস্তার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় তেমন কাউকেই  চোখে পড়েনি। মো. সাগর নামে আসাদ গেট এলাকার একটি ফিলিং স্টেশনের কর্মী বলেন, এই এলাকায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার। কয়েকদিন আগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে তিনজন ছিনতাইকারী মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মানিব্যাগ-টাকা পয়সা সব নিয়ে  গেছে। জনসম্মুখে সকলের সামনে এসব ঘটলেও অস্ত্রের ভয়ে মানুষ কিছুই বলতে পারে না। পুলিশ মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে আসে, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আবার চলে যায়। 

কলাবাগান এলাকাতেও আগে রাতে পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পরার মতো। কিন্তু গভীর রাতে সে এলাকাতেও বিপদে পরে রাস্তায় পুলিশের দেখা পাচ্ছে না মানুষ। একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও আগের মতো বাড়েনি পুলিশের উপস্থিতি। গতকাল রাত ২টার পরে কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো পুলিশ সদস্যদের দেখা পাওয়া যায়নি। 

এদিকে ঢাকার বাইরে থেকে আসা অনেক বাসযাত্রীই বর্তমানে সিটি কলেজ-সাইন্সল্যাব এলাকায় নামতে ভয় পান। ঝিনাইদহ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে গাবতলী যাওয়া একটি দূরপাল্লার বাসের যাত্রী মাসুদ আলম বলেন, আমি প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধানমণ্ডি এলাকায় থাকি। রাতের বেলায় বড় গাড়ি শহরের ভেতরে প্রবেশ করায় আমি সিটি কলেজ বা ধানমণ্ডি-২৭  নম্বর এলাকায় বাস থেকে নামি। কিন্তু বর্তমানে যেই আকারে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে, তাতে রাতের বেলা যাতায়াত করতেই ভয় লাগে। তিনি বলেন, আগে তো সিটি কলেজ মোড়ে রাতের বেলা অনেক পুলিশ থাকতো। এরপর সীমান্ত স্কয়ার, জিগাতলা, ধানমণ্ডি-১৯ নম্বর স্টার কাবাবের সামনে, শঙ্করসহ পুরো ধানমণ্ডি এলাকার পরতে পরতে পুলিশ দেখা যেতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো রাতের রাস্তায় পুলিশ দেখা যায় না। তাই চেনা রাস্তায়ও রাতের বেলা চলতে এখন গা ছম ছম করে। দূরপাল্লার বাস থেকে নামা মো. ফিরোজ নামে আরেক যাত্রী বলেন, দুইদিন হলো গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। আগামীকাল কাজ আছে বলে আজ রাতেই ফিরতে হলো। কিন্তু রাতে আসার কথা শুনে পরিবারের লোক খুব চিন্তা করছে। বার বার ফোন দিচ্ছে। বলছে- একদিন আগেই নাকি হাজারীবাগ এলাকায় এক স্বর্ণের দোকানের মালিকের পায়ে গুলি করে সব নিয়ে গেছে। তাই পরিবারকে সাহস জোগালেও নিজের মনে ঠিকই ভয় কাজ করছে। তিনি বলেন, দেখেন না রাস্তায় কোনো পুলিশ নেই। এখন আমাদের গলায় দাঁও ধরলে কে বাঁচাবে?

ছিনতাইয়ের হটস্পট মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকাতেও আগের মতো বসছে না কোনো পুলিশি তল্লাশি চৌকি বা চেকপোস্ট। রমজান আলী নামে এক বাসিন্দা বলেন, এই বসিলা রোডের দুই পাশ দিয়ে আগে আমাদের এই তিন রাস্তার মোড়ে রাতে-দিনে প্রায়ই সময় পুলিশ সদস্যদের দেখা যেতো। র‌্যাব-২ এর ক্যাম্পের সামনে চেকপোস্ট ছিল। বসিলা ব্রিজের আগে মেট্রো হাউজিং এর সামনে মেইন রাস্তায় পুলিশের বক্স ছিল। সেখানে পুলিশ থাকতো। কিন্তু এখন এত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও এই রাস্তাতে কোনো পুলিশ চেকপোস্ট নেই। রাতের বেলা পুলিশ সদস্যদেরকে দেখাই মেলে না। মাঝে মধ্যে গাড়ি আসে কিন্তু তা রানিংয়েই চলে যায়। বেশিক্ষণ দাঁড়ায়ও না। আমরা এসব নিয়ে মোহাম্মদপুর থানা পর্যন্ত ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। 

অন্যদিকে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র হাতিরঝিলেও রাতের বেলা তেমন কোনো পোশাকি পুলিশ সদস্যদের দেখা যায় না। রাত গভীর হলেই এক ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় হাতিরঝিল এলাকায়। ইমতিয়াজ আহমেদ নামে এলাকাটি দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, রাতের বেলা এখন হাতিরঝিল এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে ভয় লাগে। রাস্তাগুলোর জায়গায় জায়গায় অন্ধকার। তেমন কোনো লোকজনও থাকে না। মাঝে মধ্যেই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দেখা যায় কিন্তু সব সময় না। এত বড় একটা দর্শণীয় জায়গা তেমন কোনো সিকিউরিটির ব্যবস্থাও নেই। মানুষ পরিবার নিয়ে সন্ধ্যার পর আসতেই ভয় পাই। 

এসব বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি)  মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। অপরাধ দমনে আমাদের পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও রাতে-দিনে কাজ করছে। টহলের সঙ্গে আমাদের মোবাইল টিম বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক  ছিনতাইকারী ও অপরাধী চক্রের সদস্য আটক হয়েছে। তিনি বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক সময় চেকপোস্ট বাড়ানো হয়, কমানো হয়। ইতিমধ্যে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটেছে আমরা সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি এবং নিচ্ছি। তাই রাজধানীবাসীদের বলবো আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই জনমনের আতঙ্ক দূর হয়ে স্বস্তি ফিরে আসবে।      

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto