ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর দেশটির ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করেছে রাশিয়া।
পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর শীর্ষ অধিনায়ককে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। রাশিয়ার হাতে এই অঞ্চলের আরেকটি শহরের পতন হওয়ার পর এই রদবদল করা হলো।
বর্তমানে সবচেয়ে তীব্র সংঘাত চলছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলেই। যেখানে ইউক্রেনীয় বাহিনীর শীর্ষ অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ্যান্ড্রি নাতভ। তাঁকে সরিয়ে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউক্রেনের স্থলবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মিখাইলো দ্রাপাতি-কে। তিনি তাঁর আগের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধ পরিচালনার ভার পেলেন। অন্যদিকে নাতভকে মূল দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেনা প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার রাতে এক ভিডিও বার্তায় তাঁর সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলেনস্কি। এসময় তিনি বলেন, দনেয়স্ক অঞ্চলে সেনা নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতেই এই রদবদল।
দনেয়স্কে রাশিয়ার সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ২০১৪ সাল থেকেই লড়াই করছে ইউক্রেনের সেনারা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে প্রকাশ্যেই আগ্রাসন চালায় রাশিয়া। দনেয়স্ক অঞ্চলে মোট চারটি প্রদেশ রয়েছে, যারমধ্যে একটি ইতোমধ্যেই রাশিয়ান ফেডারেশনে অন্তর্ভুক্ত করেছে মস্কো। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্পূর্ণ দনেয়স্কের নিয়ন্ত্রণ চান, এই লক্ষ্যে সেখানে প্রচণ্ড লড়াই চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। মূলত এই অঞ্চল হয়ে উঠেছে ইউক্রেনে যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু।
এরমধ্যে অব্যাহতভাবে সামনে এগোচ্ছে রুশ সেনারা। গত সোমবার ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করে যে দনেয়স্কের ভ্যালিকা নভোসিলকা শহর থেকে তাঁরা সেনা প্রত্যাহার করেছে। তবে তাঁর আগেই রোববার শহরটি দখলের কথা জানিয়েছিল রাশিয়া।
সোমবার সেটি নিশ্চিত করে ইউক্রেনের পূর্ব রণাঙ্গনের সামরিক মুখপাত্র ভিক্টর ত্রেহুবভ বলেন, রুশ সেনারা শহরে প্রবেশ করেছে, তবে শহরের বাইরের দিকে এখনও তাঁদের সাথে লড়াই চলছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, গত এক বছর ধরেই ধীরে অথচ বিরামহীনভাবে পূর্বাঞ্চলে সামনে বাড়ছে রুশ সেনারা। যদিও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মাধ্যমেই তাঁদের এগোতে হচ্ছে, যেখানে উভয়পক্ষেরই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। অবশ্য, কিয়েভ-ও রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলের কিছু এলাকা দখলে রাখতে পেরেছে গত ছয় মাস ধরে। কিন্তু, তাতে নিজ ভূখণ্ডে রুশ বাহিনীকে কাবু করতে পারেনি ইউক্রেন।
এই অবস্থায়, পূর্ব রণাঙ্গনের নতুন সর্বাধিনায়ক হলেন ৪২ বছরের মিখাইলো দ্রাপাতি। সেনাদের মধ্যে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে, কারণ গত বছরে উত্তরপূর্বের খারকভ অঞ্চলে রুশ বাহিনীর একটি আক্রমণ অভিযানকে থামিয়ে দিতে তিনি মূল ভূমিকা রাখেন।
২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পরে অনেক এলাকা রাশিয়ার দখল থেকে উদ্ধার করার সাফল্য পায় ইউক্রেনীয় সেনারা। ২০২৩ সালে ইউক্রেন একটি প্রধান কাউন্টার-অফেন্সিভেও যায়, কিন্তু সেটি ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই – কিয়েভের যুদ্ধ কার্যক্রম প্রতিরোধমূলক লড়াইয়ে সীমিত হয়েছে পড়েছে। ব্যতিক্রম ছিল একমাত্র গত বছরের কুর্স্ক অভিযান। তবে সেখানেও এখন রাশিয়ার পাল্টা-আক্রমণ সামাল দিতে হচ্ছে তাঁদের।
ইউক্রেনের সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর দেশটির ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখণ্ড দখল করেছে রাশিয়া। আগামী মাস ফেব্রুয়ারিতে তিন বছর পূর্ণ হবে ইউক্রেন যুদ্ধের। কিন্তু, যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন অস্ত্র ও জনবল— দুদিক থেকেই রুশ বাহিনীর বিপরীতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনীয় সেনারাও একটানা যুদ্ধ লড়ে ক্লান্ত। অনেকের মনোবলে চিড় ধরেছে।
