International

রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানকে হত্যা

রাশিয়ার পারমাণবিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইগোর কিরিলোভকে হত্যা করেছে ইউক্রেন। মঙ্গলবার মস্কোতে বৈদ্যুতিক স্কুটারে বেঁধে রাখা বোমা বিস্ফোরণে সহযোগীসহ নিহত হন তিনি। বিশেষ অভিযান চালিয়ে এই জেনারেলকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে কিয়েভ। তাঁর কমান্ডে চলত দেশটির রেডিওলজিক্যাল, রাসায়নিক এবং জৈবিক প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিশেষ বাহিনী।

টেলিগ্রামে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, বোমার আঘাতে ধ্বসংস্তূপে পরিণত হয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের প্রবেশ পথ। এর পাশেই সাদা তুষারের ওপর পড়ে আছে রক্তমাখা দুটি মরদেহ, যার একটি জেনারেল কিরিলোভের। অন্যটি তাঁর সহযোগীর।

ইউক্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন এই লেফটেন্যান্ট জেনারেল। মাত্র দু’দিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে দেশটির একটি আদালতে অভিযোগ দায়ের হয়। এর পরদিনই রিমোট কন্ট্রোল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাঁকে হত্যা করে দেশটির স্পেশাল ফোর্স।

হত্যার দায় স্বীকার করে ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র বলেছে, ‍কিরিলোভ ছিলেন একজন যুদ্ধাপরাধী এবং বৈধ লক্ষ্যবস্তু। কারণ তিনি ইউক্রেনীয় সেনাদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। যারা আমাদের সেনাদের হত্যা করেছে, তাদের জন্য এমন মৃত্যু অপেক্ষা করছে। 

কিরিলোভের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দোনবাসে সেনাবাহিনীর পরিখায় ক্লোরোপিক্রিন নামের একটি রাসায়নিক ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। এই রাসায়নিকের কারণে পরিখার ভেতর থাকা সেনারা চোখ ও ফুসফুসে প্রচণ্ড ব্যথার কারণে বাধ্য হয়ে বের হয়ে আসেন। এর পর ড্রোন অথবা স্নাইপার দিয়ে তাদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়।

ক্লোরোপিক্রিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। এ ছাড়া দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণেও এটি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু রাসায়নিক অস্ত্র সম্মেলনের ধারা-৩ অনুযায়ী যুদ্ধক্ষেত্রে এটির ব্যবহার নিষিদ্ধ। গত অক্টোবরে যুক্তরাজ্য তাঁর ওপর এ কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। 

রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ হুমকি দিয়েছেন, এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে ইউক্রেনীয় নেতাদের ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রে অত্যাসন্ন পরাজয় বুঝতে পেরে রাশিয়ার শান্তিপূর্ণ শহরে এখন কাপুরুষোচিত হামলা চালাচ্ছে কিয়েভ। 

হত্যার শিকার রাশিয়ার উচ্চপদস্থ এই জেনারেল প্রায়ই বলতেন,  তাদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে ইউক্রেন। একবার এক অদ্ভুত দাবিতে তিনি অভিযোগ করেন, রুশ সেনাদের ঘাঁটিতে ড্রোনের মাধ্যমে সংক্রমিত মশা পাঠানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসা উত্তর কোরিয়ার অন্তত ৩০ সেনাকে হত্যার দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটি বলেছে,  রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে এই সেনাদের মৃত্যু হয়েছে। কুরস্ক থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে দিতে সেখানে উত্তর কোরিয়ার কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে মস্কো। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, কোরিয়ার সেনাদের মৃত্যুর তথ্য লুকানোর চেষ্টা করছে রাশিয়া। মৃত এসব সেনার মুখ পুড়িয়ে দেওয়া এবং সব ধরনের ভিডিও প্রমাণ ধ্বংস করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, পুতিনের জন্য উত্তর কোরিয়ার এসব সেনার মরার কোনো কারণ নেই। তবুও তারা মরছে। কিন্তু পুতিন তাদের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাও দেখাচ্ছেন না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button