রিজার্ভের শর্ত পূরণ করতে পারবে না বাংলাদেশ, লক্ষ্যমাত্রা কমাতে চায়
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2023/10/prothomalo-bangla_2023-07_7fb3e849-64c4-45b8-a975-cbfd986f4344_IMF.webp)
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাওয়া অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ থাকার কথা ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার। কিন্তু তা করা সম্ভব হবে না বলে সফররত আইএমএফের মিশনকে আজ মঙ্গলবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ চায়, আইএমএফ এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনুক।
আইএমএফের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বাধীন দল আজ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। উভয় বৈঠকেই বাংলাদেশের চাওয়ার ওপর প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আগামীকাল বুধবার। এরপর এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে আইএমএফ। সূত্র জানায়, আইএমএফ বাংলাদেশের চাওয়া অনুযায়ী রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা শিথিল করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আজ প্রথম আলো আয়োজিত ‘অর্থনীতিতে সংকট কেন, উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, রিজার্ভকে কোনোভাবেই ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের নিচে নামতে দেওয়া যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সায়েমা হক বিদিশাও একই মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে আইএমএফ। ৭ কিস্তির প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করা হয় ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় করার কথা আগামী মাসে। দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ দেওয়ার আগে প্রথম কিস্তির অর্থ ছাড়ের মূল্যায়ন করতেই আইএমএফের দল এখন ঢাকায়।
আইএমএফের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী গত জুনে বাংলাদেশের নিট রিজার্ভ থাকার কথা ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। তবে এ শর্ত পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এ ছাড়া সেপ্টেম্বরের লক্ষ্য ছিল ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার। এটিও পূরণ হয়নি। ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার রিজার্ভ থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ এই শর্তও পূরণ করতে পারবে না বলে ইতিমধ্যে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আইএমএফের বেশ কিছু শর্ত পূরণ করা হলেও কিছু ব্যর্থতা আছে। যেমন রিজার্ভ কিছু কম আছে। রাজস্ব আহরণও কম।
মোট রিজার্ভ, ব্যালান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ৬ (বিপিএম ৬) ও প্রকৃত রিজার্ভ—বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের এ তিন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পর কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক মোট রিজার্ভ ও বিপিএম ৬ পদ্ধতির হিসাব প্রকাশ করে আসছে। তবে জনসমক্ষে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদিও প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য আইএমএফকে জানাচ্ছে।
গত জুনে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলার। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী তা ছিল ২ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলার। একইভাবে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মোট রিজার্ভ ২ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার থাকলেও বিপিএম ৬ অনুযায়ী ছিল ২ হাজার ১১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানায়, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৭০০ কোটি বা ১৭ বিলিয়ন ডলারের মতো।
তবে ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এরপর দুই বছরে প্রতি মাসেই রিজার্ভ গড়ে ১০০ কোটি ডলার করে কমেছে।
রিজার্ভ নিয়ে অর্থনীতিবিদেরা সম্প্রতি যেসব কথা বলেছেন, তার মধ্যে রেহমান সোবহানের মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ৯ অক্টোবর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অতিথি হিসেবে বলেন, এখন বাংলাদেশ ব্যাংকই বলছে, প্রকৃত রিজার্ভ ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এ রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে যদি ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে এমন হতে পারে যে আইএমএফের সহায়তা পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পান বলে জানান রেহমান সোবহান।